নয় মাসেই কয়েক লাখ টাকা বিক্রি, পেয়ারা চাষে বড় সাফল্য

কৃষি ও প্রকৃতি

নিউজ ডেষ্ক-কথায় আছে দশে মিলে করি কাজ হারি জিতি নাহি লাজ। দশে নয় ১৪ জন যুবক মিলে থাই পেয়ারার বাগান করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। নয় মাসের মাথায় পেয়ারা চাষে বড় সাফল্য পেয়েছেন তারা। ইতিমধ্যে কয়েক লাখ টাকার পেয়ারা বিক্রি করেছেন।

শুরুতে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ির এ ১৪ জন যুবক ফেন্ডস এ্যাগ্রো গ্রুপ নামের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন। এরপর পেয়ারা চাষে মাঠে নেমে যান। সবার ঐকান্তিক পরিশ্রম আর মেধার সমন্বয়ে শুরুতে পেয়েছেন বড় সফলতা। গোল্ডেন সুপার ৮ জাতের থাই পেয়ারা চাষে সফলতার গল্প তাদের থলিতে যোগ হয়েছে।

আলাপকালে ফ্রেন্ডস এ্যাগ্রো গ্রুপের সদস্যরা জানান, তারা অন্যের জমি লিজ নিয়ে ফুলবাড়ি উপজেলায় প্রথম বারের মতো বানিজ্যিক ভাবে থাই পেয়ারার চাষ শুরু করেন। বাগান করার মাত্র নয় মাসেই কয়েক লাখ টাকার পেয়ারা বিক্রি করে বেকারত্বের অবসান ঘটিয়েছেন। তাদের এমন সাফল্য দেখে এলাকার অনেকেই পেয়ারা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।

ফেন্ডস এ্যাগ্রো গ্রুপের পরিচালক মাসুদ রানা জানান, দুই বছর আগে তিনি রাজশাহীতে ঘুরতে গিয়ে ওখানকার এক পেয়ারা চাষীর সাথে পরিচয় হয়। কৌতূহলী হয়ে তার বাগান দেখে ও বাগান থেকে লাভের হিসাব শুনে নিজেও থাই পেয়ারার বাগান করার সিদ্ধান্ত নেন। পরে বাড়িতে এসে তার বন্ধুদের সাথে আলাপ করে ১৪ জন মিলে ফ্রেন্ডস এ্যাগ্রো গ্রুপ নামে সংগঠন গড়েন।

তারা উপজেলার শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের তালুক শিমুলবাড়ী টেপরির বাজার সংলগ্ন এলাকায় ৪ একর জমি লিজ নিয়ে গত জুনে থাই পেয়ারা চাষ শুরু করেন। উর্বর মাটি ও অনুকূল আবহাওয়া পাশাপাশি ভালো চারা, জৈব সার, সেচ ও নিয়মিত পরিচর্যা করায় অল্প দিনেই প্রতিটি গাছ থেকে আশানুরূপ ফলন পাচ্ছেন।

মাসুদ রানা বলেন, আমরা ১৪ বন্ধু মিলে বেকারত্ব ঘোচানোর জন্য ৪ একর জমি লিজ নিয়ে চুয়াডাঙ্গার হক এ্যাগ্রো ফার্ম থেকে গোল্ডেন সুপার -৮ জাতের থাই পেয়ারার চারা এনে চাষ শুরু করেছি। জমি লিজ, গাছের চারা ক্রয়, জমিতে বেড়া দেওয়া, গাছ লাগানো ও অন্যান্য খরচসহ এপর্যন্ত আমাদের প্রায় ৮ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। চারা রোপণের ৪ মাস পর থেকেই গাছ থেকে ফল সংগ্রহ করা শুরু করেছি।

ফ্রেন্ডস এ্যাগ্রো গ্রুপের সদস্যরা জানান, বিষমুক্ত ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে আমরা বাগানে পেয়ারা চাষ করছি। আমাদের বাগানের পেয়ারা নরম ও সুস্বাদু এবং পেয়ারাগুলো আকারে ৪০০ থেকে ৬০০ গ্রাম পর্যন্ত হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররা এসে আমাদের কাছ থেকে পেয়ারা কিনে নিচ্ছেন।

আলাপকালে এসব উদ্যোক্তারা বলেন, আশানুরূপ ফলনের সাথে চাহিদা ও ভালো দাম পাওয়ায় বাগান করার মাত্র নয় মাসেই আমরা লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছি। বাগানে মোট ৩ হাজার ৭০০ গাছের সবগুলোতে মোটামুটি ভালো ফল ধরেছে। আমরা আশা করি বাগানের পেয়ারা বিক্রি করে প্রতি বছর ২০ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা লাভ করতে পারবো।

মাসুদ রানা এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে বলেন, ফল বিক্রি ছাড়াও আমরা নিজেদের বাগান থেকে চারা উৎপাদনের পরিকল্পনা করছি। চারা উৎপাদন করলে আমরা আরও বেশি লাভবান হতে পারবো। থাই পেয়ারা চাষ শুরু করে আমাদের বেকারত্ব দূর হওয়ার পাশাপাশি বাগানে প্রায় ৪০ জন কৃষি শ্রমিকের কাজের সুযোগ হয়েছে।

আলাপকালে উদ্যোক্তারা জানান, পেয়ারা বাজারজাত করণের ভালো সুবিধা থাকলে তারা আরও ভালো করতে পারবেন। পরিবহন সমস্যার পাশাপাশি ন্যায্য দাম অনেক সময় পাওয়া যায় না। এক্ষেত্রে ভালো সেবা পাওয়াটাই বড় চ্যালেঞ্জ। তরুণ উদ্যোক্তার পাশে এসব জায়গায় সরকারের পাশে থাকা উচিত।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার নিলুফা ইয়াসমিন এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে বলেন, ফেন্ডস এ্যাগ্রো গ্রুপ থাই পেয়ারা চাষের মাধ্যমে উপজেলার কৃষিতে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছেন। তাদের সাফল্যে উপজেলায় নতুন কৃষি উদ্যোক্তা হতে অনেকেই আগ্রহী হবে। আমরা সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছি। ফ্রেন্ডস এ্যাগ্রো গ্রুপকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *