যে ৪ উপায়ে চেনা যায় মিষ্টি আম

খাবার

নিউজ ডেষ্ক- আম খেতে ভালোবাসে না এমন মানুষ পাওয়া দুস্কর। সেইসাথে আম কেনা নিয়ে বিড়ম্বনার শেষ থাকে না। বাজারে ভালো আম কিনতে গিয়ে অজান্তেই কিনে ফেলেন রাসায়নিকযুক্ত অপরিপক্ক আম। একদিকে খাওয়া পণ্ড হওয়ার সাথে সাথে হয় আর্থিক লোকসান। তাই জেনে থাকা ভালো মিষ্টি আম চেনার ৪ উপায়!

মিষ্টি আম চেনার ৪টি উপায় জানা থাকলে লাভবান না হলেও হয়ত লোকসান ‍গুণতে হবে না।

আম দেখতে কেমনঃ আমের ক্ষেত্রে এর চেহারা দেখে নির্বাচন করা দোষের কিছু নয়। দেখতে যদি সুন্দর হয় তবে সেটি ভালো আমের তালিকায় অনেকটা এগিয়ে থাকবে। দাগমুক্ত এবং এবড়ো-থেবড়ো নয় এমন আম কিনুন। যে আমের খোসা কুঁচকে গেছে সেটি কিনবেন না। ভালো আমের ক্ষেত্রে রং ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। সবুজ, হলুদ, লাল, সোনালি, কমলা যেকোনো রঙের আম কিনতে পারেন।

আমের গন্ধ শুঁকে বুঝে নিনঃ আম খাঁটি কি না তা বোঝার জন্য গন্ধ শুঁকে দেখতে পারেন। আপনার ঘ্রাণশক্তির মাধ্যমেই এটি বুঝে নেওয়া সম্ভব আমটি ভালো কি না। আমের ধরনের ওপর নির্ভর করে এর সুগন্ধে ভিন্নতা দেখা যায়। আমটি নাকের কাছে নিয়ে এর গন্ধ নিন। যদি বোঁটার কাছ থেকে মিষ্টি গন্ধ আসে তবে আমটি ভালো বলে ধরে নিতে হবে। এই আম নিশ্চিন্তে কিনতে পারেন। আম থেকে যদি তীব্র ঝাঁঝালো বা টক গন্ধ বের হয় তবে সেই আম কেনা থেকে বিরত থাকুন।

নরম কি না দেখে নিনঃ যে আম কিনবেন সেখান থেকে একটি আম নিয়ে আঙুলের মাথা দিয়ে হালকা টিপে দেখুন। আম যদি পাকা হয় তবে সেটি নরম হবে। যদি আঙুলের চাপে গর্ত হয়ে যায় তবে সেটি কেনার মতো ভুল করবেন না। কারণ এমন আম আগেই বেশি পেকে গেছে। যা খেতে একদমই স্বাদ লাগে না। আবার বাড়িতে রেখে কয়েকদিন ধরে খেতে চাইলে কিছুটা শক্ত দেখে আম কিনতে হবে।

পাকা দেখে নিনঃ আমটি প্রাকৃতিকভাবে পাকা কি না তা দেখে কিনুন। কারণ অনেক আম কার্বাইড দিয়ে পাকানো থাকে। তাই আম কেনার সময় একটু যাচাই-বাছাই করে কেনাই ভালো। অনেকে সরাসরি বাগান থেকে এনে আম বিক্রি করে থাকেন। পরিচিত কেউ এভাবে বিক্রি করলে তার কাছ থেকেও আম কিনতে পারেন। এতে ঠকে যাওয়ার ভয় কম থাকে।

সস্তা দামে বিক্রি হচ্ছে রাজশাহীর গোপালভোগ আমঃ জেলা প্রতিনিধি, রাজশাহী, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: রাজশাহী অঞ্চলে বছরই আমে শতকোটি টাকার বাণিজ্য হয়। কিন্তু গতবছর থেকে করোনা মহামারি বাণিজ্যে বাগড়া দিয়েছে। আগের বছরের তুলনায় এবার মৌসুমের শুরুতেই বাজারে আসা আমের দাম সস্তা। নগরের বিভিন্ন বাজারে গোপালভোগ আম ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এবার আমের দাম কম। গতবারে একই সময়ে গোপালভোগ আম ২ হাজার টাকা মণ বিক্রি হয়েছে। এবার প্রতিমণে নাই হয়ে গেছে ৫’শ থেকে ৬’শ টাকা।

করোনায় এ অঞ্চলের ছোট-বড় আম চাষি আমের ন্যায্য দাম নিয়ে শঙ্কায় আছেন। যদি আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে পরিবহন ও কুরিয়ার চালু না হয় তাহলে চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছেন তারা। এমনটিই বলছেন আড়ৎদার ও চাষিরা।

এ বছরের আম ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, গত ১৫ মে থেকে শুরু হয় আম পাড়ার কর্মযজ্ঞ। ওই দিন থেকে গুটি ও গোপালভোগ জাতের আম বাজারে আসতে শুরু করে।

আজ সোমবার ( ১৭ মে ২০২১) রাজশাহীর সাহেব বাজার মাষ্টার পাড়া এলাকার বেশ কয়েকটি ফলের আড়ৎ ঘুরে দেখা গেছে, গুটি জাতের আম বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে সাড়ে ১২০০ টাকা মণ। সুমিষ্ট ও আগাম জাতের গোপালভোগ আম বিক্রি হচ্ছে ১৬০০ টাকা মণ। ১৪০০ টাকা দরে পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে অপেক্ষাকৃত ছোট ও দাগযুক্ত আম।

কাঁচাবাজারের ফল ব্যবসায়ী আলহাজ্ব মো: মুসলিম শেখ এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, “বাজারে কেবল গুটি আর গোপালভোগ আম এসেছে। গোপালভোগ আম ১৬০০-১৫০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করছি। ক’দিন আগের ঝড়ে কিছু আমের গায়ে দাগ হয়েছে। সেসব আম ১৩০০-১৪০০ টাকা মণ। করোনায় লকডাউন যদি এভাবে থাকে তাহলে আমে প্রচুর লোকসান হবে। আশা করছি, সরকার লকডাউন খুলে দেবে।” একই বাজারের ফল ব্যবসায়ী ও চাষি সাহিন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, “ এবার আমের ভালো ফলন হয়েছে। কিন্তু চিন্তা হচ্ছে করোনা নিয়ে। রাজশাহীর বাইরে যদি আম না নেওয়ার ব্যবস্থা হয় তাহলে মাঠে মারা যাবে চাষিরা। কিছুক্ষণ আগেই এক বাগান ঠিকাদারের সাথে কথা হলো- খুব চিন্তায় আছে, আম ভাঙতে ভয় পাচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “লোকসান তো বাগান মালিকের হয় না। ২, ৩, ৫ বছরের জন্য লিজ দিয়ে টাকা গুনে নেয়। আম ঝড়ে পড়লো কিনা দাম পড়ে গেলো তা দেখার সময় নেই তাদের। করোনায় যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে চাষিরা মরবে। আমার ধারণা সরকার কিছু একটা করবে।” জেলা প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া তারিখ অনুযায়ী উন্নতজাতের আমগুলোর মধ্যে গোপালভোগ ২০ মে, রাণীপছন্দ ২৫ মে, লক্ষণভোগ বা লখনা নামানো যাবে ২৫ মে, ল্যাংড়া আম ৬ জুন, আম্রপালি ও ফজলি ১৫ জুন থেকে নামানো যাবে। আর সবার শেষে ১০ জুলাই থেকে নামানো যাবে আশ্বিনা ও বারি-৪ জাতের আমএবং খিরসাপাত বা হিমসাগর ২৮ মে থেকে নামানো যাবে।

আম নামানোর ধারাবাহিকতা অনুযায়ী সর্বপ্রথম বাজারে দেখা মেলে গোপালভোগ ও গুটি জাতের আম। আর শেষ হয় ফজলি ও আশ্বিনা জাতের আম দিয়ে। রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলিম উদ্দিন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, জুনের প্রথম দিকে রাজশাহী ও জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বাজারে আসবে ল্যাংড়া আম। মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহের পর উঠবে গোপালভোগ আম। গুটি আম প্রতিবছরই অন্যান্য আমের আগে পাকে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তাই অনেকেই গুটি আম নামাতে শুরু করেছেন। এখন যে আম পাওয়া যাচ্ছে সে আমের স্বাদ তুলনামূলক কম।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *