হয় মরে যাব, না হয় আমরা জিতব: মির্জা ফখরুল

রাজনীতি breaking subled

নিউজ ডেষ্ক- বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, রাতের আঁধারে ভোট চুরি করে জনগণের ওপর জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসেছে এই সরকার। উন্নয়নের নামে জনগণের সম্পদ, অর্থ লুট করে বিদেশে পাচার করছে। জনগণের হাজার কোটি টাকার লুটপাটের হিসাব একদিন দিতে হবে সরকারকে। তিনি বলেন, ‘এই চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছিলেন শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। এই দেশকে আরেকবার পরাধীনতা থেকে মুক্ত করবার জন্য এই চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ড থেকে শুরু হলো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করার আন্দোলন। চট্টগ্রামের মানুষ যে আগুন জ্বালিয়েছে, সেই আগুনের স্ফুলিঙ্গ সারা দেশে ছড়িয়ে যাবে। আজ থেকে যে আন্দোলন শুরু হলো, সেটি সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেব। ফয়সালা হবে রাজপথে।’

বিএনপির সারা দেশে বিভাগীয় গণসমাবেশের কর্মসূচির প্রথম সমাবেশে বুধবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের পলোগ্রাউন্ড ময়দানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া আর কোনো জাতীয় নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। এখনো সময় আছে নিরাপদে সরে দাঁড়ান। না হয় পালানোর পথ পাবেন না। এই সরকার আবারো একটি ভোট ডাকাতির নির্বাচন করতে চায়। সেই সুযোগ আর দেওয়া হবে না। সংসদ ভেঙে দিয়ে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে। আমরা দেশের মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা না করে ফিরে যাব না।

সমাবেশস্থলে মঞ্চের দুই পাশে টানানো দুটি ব্যানার দেখিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দুই দিকে আমাদের পাঁচ ভাইয়ের ছবি টানানো আছে। এগুলো কাদের ছবি- যারা গণতন্ত্রকে মুক্ত করবার জন্য, মানুষের অধিকারকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য, জনগণকে অন্যায়-অত্যাচার থেকে মুক্ত করার জন্য শহিদ হয়েছিলেন এগুলো তাদের ছবি। আমরা যখন প্রথম জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে, দ্রব্যমূল্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে মাঠে নেমেছিলাম, তখন ভোলাতে প্রথম নিহত হন স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুর রহিম। এ ছাড়া ছাত্রদলের নুরে আলম, নারায়ণগঞ্জে যুবদল কর্মী শাওন প্রধান ও মুন্সীগঞ্জে নিহত হন শাওন ভূঁইয়া।’

‘শাওন প্রধান গাড়ির গ্যারেজে কাজ করতেন। মুন্সীগঞ্জে নিহত শাওন ভূঁইয়া মিশুক চালাতেন। ভোলায় নিহত দুই কর্মীও সাধারণ পরিবার থেকে আসা। আমাদের যেই পাঁচ ভাই পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে, দেশের গণতন্ত্রের জন্য রক্ত দিয়েছে, তারা সাধারণ মানুষ। এরা কেউ অর্থবিত্তের অধিকারী নয়। ধনসম্পদের মালিক নয়। কিন্তু তারা পুলিশের সামনে বুক পেতে দিয়েছিল। তারা বলেছে, মারো আমাদের, কিন্তু এই দেশেকে মুক্ত করতে চাই। মুন্সীগঞ্জের শাওনের বাবা আমাদের কাছে এসেছিল। তিনি তার ছেলে হত্যার বিচার চান। আজকে আমরা সেই কারণে আপনাদের সামনে এসেছি।’

সমাবেশ মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘৫০ বছর হয়ে গেছে এই স্বাধীনতার। তখন যেমন যুদ্ধ করেছিলাম গণতন্ত্রের জন্য, সেই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আমাদের আবার যুদ্ধ করতে হবে। এই লড়াই শক্ত লড়াই। এই লড়াইয়ে আমাদেরকে জিততেই হবে। হয় আমরা জিতব, না হয় মরে যাব। আমরা যদি জয়লাভ করতে না পারি তাহলে এদেশে স্বাধীনতা থাকবে না। আমাদেরকে ‘কলোনীর’ মতো বাস করতে হবে। আমরা মাথা উঁচু করে বাঁচতে চাই। এটা কেবল বিএনপির দাবি নয়, এটা এখন সমগ্র জাতির দাবি। ’

‘এই সরকার নির্বাচিত সরকার নয়, জনগণের ভোটের সরকার নয়। তারা ২০১৪ সালে বিনা ভোটে ১৫৪ জনকে নির্বাচিত করে সরকার গঠন করে। পরের বার তারা আগের রাতে ভোট গ্রহণের মাধ্যমে সরকার ঘোষণা করেছে। আওয়ামী লীগ গত ১৪-১৫ বছরে এই বাংলাদেশকে শ্মশান করে দিয়েছে। তারা সবকিছু লুট করে বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে। শেখ হাসিনা ১০ টাকায় চাল খাওয়াবে বলেছিলেন, এখন চালের দাম ৭০ টাকা। আবার নাকি বিদ্যুতের দাম বাড়াবে। কেন? লুট করার জন্য? ডাকাতি করার জন্য? অথচ আজ দেশের মানুষ না খেয়ে মরছে। আজকে কোনো নিরাপত্তা নেই। দিনে-দুপরে ডাকতি হয়। র‌্যাবের মতো একটি প্রতিষ্ঠানকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। র‌্যাবকে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে কিছু হবে না, নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে এই সরকারকে। কারণ এই সরকারের নির্দেশে গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড­ ঘটেছে। জাতিসংঘ পরিষ্কারভাবে বলেছে- বাংলাদেশে মানবাধিকার নেই। এখানে গুম হয়, খুন হয়, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হয়। আমাদের নেতা তারেক জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্বাসিত করে রাখা হয়েছে।’

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *