নিউজ ডেষ্ক- টানাটানির সংসারে বাড়তি খরচের চাপে অনেকটাই বেসামাল মধ্যবিত্তের দিনযাপন।কেউ কেউ জমানো টাকা শেষ করে আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ধারকর্জ করেছেন।
আয় তো বাড়েইনি, উল্টো প্রতিটি জিনিসপত্রের বাড়তি দাম; বাসাভাড়া, জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের বাড়তি বিল, বাচ্চার স্কুল-কলেজের খরচসহ প্রতিদিনের প্রতিটি পণ্য ও সেবার পেছনে অন্যান্য খরচের বোঝা বহন করে প্রায় দিশেহারা স্বল্প আয়ের মধ্যবিত্ত আর নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষ।এরই মধ্যে পবিত্র রমজান মাস সমাগত।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ৩ এপ্রিল হতে পারে প্রথম রোজা।আর রোজাকে ঘিরে জিনিসপত্রের দাম আরেক দফা বেড়েছে।যেন রোজার উত্তাপ লেগেছে নিত্যপণ্যে বাজারে।সব ধরণের নিত্যপণ্যের বাজারই এখন ঊর্ধ্বমুখী। বিশেষ করে বেশি গরম মাংস, মসলা ও ভোজ্য তেলের বাজার। জিরা, দারুচিনি, এলাচ, আদা ও তেলের দাম ক্রমশ বাড়ছে। তবে বাজারে স্বস্তি মিলছে পেঁয়াজে।
সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়ায় কয়েকটি পণ্যের দাম স্থিতিশীল থাকলেও এখনো অনেক পণ্যের দাম কমেনি।সামনে রোজায় জিনিসপত্রের দাম আরেক দফা বাড়ার আতঙ্ক মানুষকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। শুক্রবার বিকেলে সিলেট নগরীর পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা দেখে- বাজারগুলোতে তেল, চিনি, ডাল, ছোলা, পেঁয়াজ, চাউল, খেজুর ও অন্যান্য নিত্যপণ্য বিকিকিনি বেড়েছে।রোজা সন্নিকটে থাকায় এসব পণ্য বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের।
নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার জন্য খুচরা ব্যবসায়ীরা আড়তদারদের দায়ী করছেন। তারা বলছেন, আড়তদার ও বিভিন্ন কোম্পানীর ডিলাররা চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ না করায় বাজারে তৈরী হয়েছে কৃত্রিম সঙ্কট।এ কারণে বাড়তি দাম দিয়ে কিনে বিক্রি করতে হচ্ছে। বন্দরবাজারের একটি পাইকারি দোকানে নিত্যপণ্য কিনতে আসা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আবিদ হোসেন বলেন, স্বাভাবিক সময়েই বাজার খরচ জোগাতে হিমশিম খেতে হয়।
করোনাভাইরাসসহ নানা কারণে বর্তমানে আয় আরও কমেছে। মাসে যা বেতন মিলে তা দিয়ে ছয়জনের সংসার চালানো রীতিমতো কঠিন।একটি কিনলে অন্য পণ্য বাকি থাকছে।’ এ অবস্থায় রমজানের আগেই প্রতিটি পণ্যের দামই বেড়েছে। ফলে তার এখন নাভিশ্বাস অবস্থা। নগরীর টিলাগড়ে একটি দুই রুমের বাসায় ভাড়া থাকেন আমির আলী।পেশায় তিনি চাকরিজীবী। এক ছেলে, এক মেয়ের সংসারে তাঁরা স্বামী-স্ত্রীসহ চারজন। এখন বেতন অনিয়মিত। দুই বাচ্চা স্কুলে যায়।
শ্যামল সিলেট’র সঙ্গে আলাপকালে জানান, বাসাভাড়া দেওয়ার পর হাতে যে টাকা থাকে, তা দিয়ে চাল, ডাল ও অন্যান্য দরকারি নিত্যপণ্য কিনতেই শেষ। বেতনের টাকায় চলে না বলে বাধ্য হয়ে আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে বেশ কয়েক দফায় ধারকর্জ নিয়েছেন।’ এমতাবস্থায় রোজার সদাইপাতি কিনতে এসে চোখের সামনে ঝাপসা দেখছেন তিনি। বললেন, ‘স্ত্রীর দেওয়া তালিকা ধরে সবপণ্য কেনা সম্ভব নয়।’ শুধু স্বল্প আয়ের চাকরিজীবী আবিদ হোসেন ও আমির আলীই নন, শুক্রবার কথা হয়- বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে।তাদের মুখ থেকে বেরিয়ে আসে নিত্যদিনের কঠিন সংগ্রামের চিত্র।যাঁরা কোনো দিন টিসিবির লাইনে দাঁড়াননি, তাঁদের অনেকেই এখন টিসিবির ট্রাকের সামনে দীর্ঘসময় ধরে লাইন দিচ্ছেন। কেউবা সরকারের ভর্তুকি দামে কয়েকটি নিত্যপণ্য কিনে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন।
শুক্রবার নগরীর বাজারে দেখা যায়, সব ধরণের পণ্যের দাম বেড়েছে।ভোজ্যতেল আমদানিতে সরকার ১০ শতাংশ ভ্যাট কমালেও এখনো আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন তেল। বোতলজাত ৫ লিটার সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ৭৯০ থেকে ৮০০ টাকা এবং এক লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকায়।ছোলার দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে এখন ৭৫ টাকা। বুটের ডালের দামও কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে এখন ৭৫ টাকা। কদিন আগেও ৯০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া ছোট দানার মশুর ডালের দাম বেড়ে হয়েছে ১০০ টাকা। মাঝারি দানার মশুর ডালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮৫-৯০ টাকা, যা কিছুদিন আগেও ছিল ৮০-৮৫ টাকা কেজি।বুটের ডালের বেসন বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১০ টাকা কেজি, যা কিছুদিন আগে ছিল ৮০-৯০ টাকার মধ্যে। আর খেসারির ডালের বেসন বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭৫ টাকা কেজি, যা কিছুদিন আগে ছিল ৬৫ টাকার মধ্যে। মোটা চাল এখন বাজারে ৪০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। মান অনুযায়ী চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৭০ টাকা। মাসখানেক আগেও চালের কেজি সর্বনিম্ন ৩৫ টাকা ছিলো।
জিরার দাম কেজিতে ৪০-৫০ টাকার মতো বেড়েছে। দারুচিনির দাম বেড়েছে ১০-১৫ টাকা। এলাচের দাম বেড়েছে ১০০-১২০ টাকা। একইভাবে আদার দাম ১০-২০ টাকা ও শুকনা মরিচের দাম ২০-২৩০ টাকা বেড়েছে। শুধু নিত্যপণ্যই নয়, রোজার মাসে ইফতারির অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ খেজুরের দামও নতুন করে বেড়েছে।মান অনুযায়ী খেজুরের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত। অন্যান্য নিত্যপণ্যের মধ্যে চিনি বিক্রি হচ্ছে ৭৫, দুধ ৬২০, আদা ৭৫-৫০ ও রসুন ১১৫-১৪০ টাকা কেজিতে। বিভিন্ন পণ্যের বাড়লেও কয়েকদিনে কমেছে পেঁয়াজের দাম। এতে খুচরায় এখন দেশে পেঁয়াজের কেজি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আর আমদানি করা ভালো মানের পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে দেশি পেঁয়াজের কেজি ৪০ টাকা ও ভালো মানের আমাদনি করা পেঁয়াজের কেজি ৫০ টাকা ছিল। এ হিসেবে এক সপ্তাহের মধ্যে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ টাকা কমে গেছে।
আলুর বাজারও স্থিতিশীল রয়েছে।১৫-১৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে আলু। তবে, গরুর মাংস প্রতি কেজি ৬৫০ টাকার নিচে কিনতে পারছে না ক্রেতারা। হাড় ছাড়া গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা কেজি। কোথাও কোথাও হাড়সহ ৭০০ টাকায় ছাড়িয়েছে। এদিকে গত সপ্তাহের ১৭০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া ব্রয়লার মুরগি শুক্রবার বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা। এছাড়া লেয়ার ২৬৫ ও কক মুরগি ৩৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বড় দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে পিস প্রতি ৫০০, মাঝারি ৪৫০ ও ছোট মুরগি ৪০০ টাকায়। আম্বরখানা বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, বিভিন্ন কোম্পানীর ডিলাররা চাহিদা অনুযায়ী ভোজ্য তেল সরবরাহ করছেন না।একারণে বাজার থেকে বেশি দাম দিয়ে কিনে বিক্রি করতে হচ্ছে।এছাড়া হঠাৎ করে পাইকারি বাজারে সব পণ্যেরই দাম বেড়েছে।