যুক্তরাষ্ট্র চায় গোপনে সন্ধি

আন্তর্জাতিক breaking subled

নিউজ ডেষ্ক- রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ২৫৭তম দিন আজ। যুদ্ধের প্রভাবে বিভিন্ন দেশে বেড়েছে মূল্যস্ফীতি। হু হু করে বাড়ছে জ্বালানি তেলের দাম।

লাগামহীন নিত্যপণ্যের দরও। এ সময় এসে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা ইউক্রেনকে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার জন্য উদ্বুদ্ধ করছে।

পুতিনের ক্ষমতা থেকে না সরা পর্যন্ত শান্তি আলোচনায় বসব না- ইউক্রেনের এই একগুঁয়েমি ত্যাগ করতে বলেছে তারা। প্রশ্ন উঠেছে তবে কি গোপনে সন্ধি করতে চাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র?

মহামারি কাটিয়ে বিশ্ব অর্থনীতি স্বাভাবিক হতে শুরু করলেও দেখা যায়, যুদ্ধের কারণে থমকে গেছে অর্থনীতির গতি। আন্তর্জাতিক বাজারব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় দেখা দিয়েছে বৈশ্বিক মন্দা। জ্বালানি তেলসহ বিভিন্ন জিনিসপত্রের সংকটের কারণে বেড়েছে নিত্যপণ্যের দাম। হাঁপিয়ে উঠেছে বিশ্ব।

এমতাবস্থায় আলোচনার টেবিলে বসার জোর দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও মার্কিন কর্মকর্তাদের এই অনুরোধের লক্ষ্য ইউক্রেনকে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার টেবিলে ঠেলে দেওয়া নয় বরং কিয়েভকে একটি পরিকল্পিত প্রচেষ্টায় নিয়ে যাওয়া যাতে অপর দেশগুলোর সমর্থন অক্ষুণ্ন থাকে।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির ৪ অক্টোবর জারি করা ডিক্রির বিষয়টি ইউরোপ, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার কিছু দেশে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।

এই দেশগুলোতে যুদ্ধের প্রভাবে খাদ্য ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব তীব্র। ধারণা করা হচ্ছে, এর আগে মার্কিন কর্মকর্তারা যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, ‘যত দিন লাগে তত দিন’ ইউক্রেনকে সহায়তা তারা করবে- এটা সেই অবস্থান থেকে সরে আসার ইঙ্গিত।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন মুখপাত্র বলেছেন, রাশিয়া যদি আলোচনার জন্য প্রস্তুত থাকে তবে বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ বন্ধের পাশাপাশি ইউক্রেন থেকে তার বাহিনীকে প্রত্যাহার করা নেওয়া উচিত।

তিনি আরও বলেন, ক্রেমলিন প্রতিনিয়ত যুদ্ধকে তীব্র থেকে তীব্রতর করে তুলছে। ক্রেমলিন ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রায় আক্রমণ শুরু করার আগে থেকেই গুরুত্ব দিয়ে আলোচনায় বসতে অনাগ্রহ দেখিয়েছে। বিগত আট মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্র সংঘাতের যে সমধানের আশা করছিল, তার সম্ভাবনা হয়তো শেষ হয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র বরং বুঝতে পারছে, যুদ্ধের ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে একটি ব্যাপক ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে এবং পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। একজন মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ইউক্রেন ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। তবে এ বিষয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মুখপাত্র কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান নেতারা ইউক্রেনে সহায়তা অব্যাহত থাকুক তা চাচ্ছে না। মধ্যবর্তী নির্বাচনের পরে হোয়াইট হাউজ এ ব্যাপারে বিভক্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ বাইডেন প্রশাসন যে সহায়তা কর্মসূচি চালিয়ে যেতে চায় তা যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে অব্যাহত রাখা কঠিন হবে।

তবে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান কিয়েভ সফরে গিয়ে বলেছেন, মধ্যবর্তী নির্বাচনে উভয়পক্ষ থেকে আমরা ইউক্রেনে সহায়তা চালিয়ে যাওয়ার সমর্থন পাব।

আট মাসের বেশি সময় ধরে যুদ্ধ চলমান থাকলেও ইউক্রেনের নাগরিকরা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন গত এক মাসে। দেশটির ৪৫ লাখ মানুষের বিদ্যুৎ সংযোগ সাময়িকভাবে বিচ্ছিন্ন।

জ্বালানি অবকাঠামোগুলোতে হামলা চালানোর কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে যে, কিয়েভ কার্যত অন্ধকারে রয়েছে। সূর্যাস্তের পরপরই ঘুমাতে চলে যাচ্ছেন সেখানকার বাসিন্দারা।

কিয়েভের একজন নাগরিক লিউবভ ফেডোরচেঙ্কো বলেন, আমরা আগের যুগে ফিরে গেছি। যেখানে আমাদের গল্প শোনানো হতো সূর্যাস্তের পরপরই সবাই ঘুমাতে চলে যায়। এখন আমরাও অন্ধকার হয়ে এলে ঘুমাতে যাই।

কিয়েভ শহরের মেয়র ভিতালি ক্লিৎচকো শুক্রবার বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, অন্ধকার ও ঠান্ডার মধ্যে পরিস্থিতি কেমন হতে পারে, তা নিয়ে মানুষ সত্যিকার অর্থেই ভীত। সামনে আরও কঠিন পরিস্থিতির ইঙ্গিত দিয়ে কিয়েভের বাসিন্দাদের আবারও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের অনুরোধ জানান তিনি।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *