বিনাসয়াবিন-২ চাষ হবে দেশের মাটিতে, ফলন ৩৬ মণ

কৃষি ও প্রকৃতি

নিউজ ডেষ্ক- বাংলাদেশের মাটি সয়াবিন চাষের উপযোগী। দেশের আবহাওয়ায় রবি ও খরিফ উভয় মৌসুমেই সয়াবিন চাষ করা যাবে বিনাসয়াবিন-২। বিনা উদ্ভাবিত সয়াবিন-২ হেক্টরে ফলন প্রায় ৩৬ মণ। বেলে দো-আঁশ হতে দো-আঁশ মাটি সয়াবিন চাষের জন্য বেশি উপযোগী।

খরিফ বা বর্ষা মৌসুমে চাষের জন্য নির্বাচিত জমি অবশ্যই উঁচু ও পানি নিষ্কাশনযোগ্য হতে হবে। রবি মৌসুমে মাঝারি থেকে নিচু জমিতে চাষ করা যায়। নোয়াখালী, চাঁদপুর, ভোলা, যশোর, রংপুর এবং ময়মনসিংহ অঞ্চল জাতগুলো চাষের জন্য উপযোগী হলেও সারাদেশের যে কোন অঞ্চলে চাষ সম্ভব।

সয়াবিন গাছ উচ্চতায় মাঝারি, পাতা অন্যান্য জাতের তুলনায় গাঢ় সবুজ এবং বীজের রঙ হালকা হলুদ ও অন্যান্য জাতের বীজের তুলনায় উজ্জ্বল। জাতটি ভাইরাসজনিত হলুদ মোজাইক রোগ সহনশীল এবং পোকার আক্রমণ কম। তাছাড়া জাতটি মাঝারি মাত্রার লবণাক্ততা সহিষ্ণু।

বিনাসয়াবিন-২ জাতের বিশেষ বৈশিষ্ট্যঃ হলুদ মোজাইক ভাইরাস প্রতিরোধী; জাতটি ১২ ডিএস/মি. মাত্রা পর্যন্ত লবণাক্ততা সহনশীল। গাছের উচ্চতা রবি মৌসুমে ২৭-৩৫ সে.মি. এবং খরিফ-২ মৌসুমে ৩৫-৪২ সে.মি.; প্রাথমিক শাখার সংখ্যা ৩-৫টি; প্রতি গাছে ফলের সংখ্যা ৩০-৬০টি; বীজ আকারে বড় এবং ১০০ বীজের ওজন ১৩.০-১৩.৮ গ্রাম; বীজাবরণ উজ্জল হলুদ বর্ণের এবং বীজ নাভী কালো ও সুস্পষ্ট; বীজে আমিষ, তেল এবং শর্করার পরিমাণ যথাক্রমে ৪৩, ১৯ এবং ২৭%।

রবি এবং খরিফ-২ মৌসুমে জীবনকাল যথাক্রমে ৯৫-১০৫ এবং ১১০-১১৫ দিন।ফলন, রবিঃ২.৪-২.৮ টন/হেক্টর (২৬-৩০ মন/একর) খরিফ-২ঃ ২.৭-৩.৩ টন/হেক্টর (২৯-৩৬ মন/একর)

বীজ বপনের সময়ঃ রবি মৌসুমে পৌষের প্রথম থেকে মধ্য মাঘ (মধ্য ডিসেম্বর হতে জানুয়ারীর শেষ) পর্যন্ত এবং খরিফ-২ মৌসুমে শ্রাবনের প্রথম হতে ভাদ্র মাসের শেষ (মধ্য জুলাই মধ্য সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত বীজ বপনের উপযুক্ত সময়।

বীজের হার ও বপন পদ্ধতিঃ সারিতে বপনের ক্ষেত্রে প্রতি একরে ২৪ কেজি এবং ছিটিয়ে বপনের ক্ষেত্রে প্রতি একরে ৩০ কেজি বীজ প্রয়োজন হয়। রবি মৌসুমে সারি থেকে সারির দূরত্ব ১০ ইঞ্চি (২৫ সে.মি.) এবং খরিফ-২ মৌসুমে ১২ ইঞ্চি (৩০ সে.মি.) রাখতে হবে।

সার ও প্রয়োগ পদ্ধতিঃ জাতটি চাষের জন্য একর প্রতি ২০-২৫ কেজি ইউরিয়া, ৬০-৭০ কেজি টিএসপি, ৩৫-৪০ কেজি এমওপি, ৩০-৩৫ কেজি জিপসাম সার প্রয়োগ করতে হবে। জমি তৈরির শেষ চাষের পূর্বে সার প্রয়োগ করে মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। তবে ইউরিয়া সারের পরিবর্তে প্রতি কেজি বীজের সাথে ৫০ গ্রাম হারে জীবাণুসার বীজের গায়ে সমভাবে মিশিয়ে বীজ বপণ করলে ফলন অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়।

সেচ ও নিস্কাশনঃ রবি মৌসুমে জমিতে রসের অভাব হলে প্রথম সেচ বীজ গজানোর ২০-৩০ দিন পর এবং দ্বিতীয় সেচ বীজ গজানোর ৫০-৫৫ দিন পর দিতে হবে। খরিফ-২ মৌসুমে সাধারণত কোন সেচের প্রয়োজন হয় না, বরং জমিতে বৃষ্টিজনিত কারণে পানি জমে গেলে নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।

আগাছা দমন এবং মালচিংঃ চারা গজানোর ১৫-২০ দিনের মধ্যে আগাছা দমন করতে হবে। গাছ খুব ঘন হলে পাতলা করে দিতে হবে এবং সারিতে গাছ হতে গাছের দূরত্ব রাখতে হবে ১.৫-২.৫ ইঞ্চি। তবে প্রতি বর্গ মিটারে রবি মৌসুমে ৫০-৫৫টি এবং খরিফ মৌসুমে ৪০-৫০টি গাছ রাখা উত্তম।

বালাই ব্যবস্থাপনাঃ বিছাপোকা ও পাতা মোড়ানো পোকা: বিছাপোকা ও পাতা মোড়ানো পোকা সয়াবিনের মারাত্মক ক্ষতি করে। বিছাপোকা ডিম থেকে ফোটার পর ছোট অবস্থায় পোকাগুলো একস্থানে দলবদ্ধভাবে থাকে এবং পরবর্তীতে আক্রান্ত গাছের পাতা খেয়ে জালের মতো ঝাঁঝরা করে ফেলে।

এ পোকা দমনের জন্য আক্রান্ত পাতা দেখে পোকাসহ পাতা তুলে পোকা মেরে ফেলতে হবে। পোকার আক্রমণ বেশি হলে সেভিন ৮৫ এসপি ৩৪ গ্রাম পাউডার প্রতি ১০ লিটার পানিতে অথবা এডভান্টেজ ২০ এসসি ৩০ মিলিলিটার প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে আক্রান্ত জমিতে স্প্রে করতে হবে।

কান্ডের মাছি পোকা: এ পোকার কীড়া কান্ড ছিদ্র করে ভিতরের নরম অংশ খেয়ে ফেলে। ফলে আক্রান্ত গাছের অংশ বিশেষ অথবা সম্পূর্ণ গাছ দ্রুত মরে যায়। এ পোকার দ্বারা আক্রান্ত হলে ডায়াজিনন ৬০ ইসি ২৫-৩০ মিলিলিটার প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে আক্রান্ত জমিতে স্প্রে করতে হবে।

হলুদ মোজাইক ভাইরাস: সয়াবিনের সবুজ পত্রফলকের উপরিভাগে উজ্জ্বল সোনালী বা হলুদ রঙের চক্রাকার দাগের উপস্থিতি এ রোগের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। বিনাসয়াবিন-২ হলুদ মোজাইক ভাইরাস রোগের প্রতি মধ্যম প্রতিরোধী। তবে সুস্থ এবং রোগমুক্ত বীজ বপনের মাধ্যমে এ রোগের আক্রমণ অনেকটা কমানো যায়।

কান্ড পচা রোগ: মাটিতে অবস্থানকারী ছত্রাকের কারণে এ রোগ হয়ে থাকে। গাছের পাতা হলুদ হওয়া দেখেই এ রোগের আক্রমণ সনাক্ত করা যায়। আক্রান্ত গাছের কান্ড এবং মূলে কালো দাগ দেখা যায়। আক্রান্ত চারা বা গাছ ধীরে ধীরে শুকিয়ে মরে যায়। গভীর চাষ এবং জমি হতে ফসলের পরিত্যক্ত অংশ, আগাছা ও আবর্জনা পরিষ্কার করে ফেলে এ রোগের উৎস নষ্ট করা যায়।

এছাড়া সয়াবিন চাষে বীজ ও রোগ-বালাইসহ বিভিন্ন পরামর্শ নিতে যোগাযোগ করতে পারেন (সকাল ৯ টা-বিকাল ৫টা) কল করুনঃ +৮৮-০১৭১২১০৬৬২০ ই-মেইলঃ malekbina@gmail.com। বিনা ময়মনসিংহ-২২০২ এর উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আব্দুল মালেক।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *