বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে বারি বেল ১, অল্প সময়ে লাভবান

কৃষি ও প্রকৃতি

নিউজ ডেষ্ক- দেশে প্রথম মুক্তায়িত হয়েছে বেলের বাণিজ্যিক জাত বারি ‘বেল ১’ জাতটির মূল বৈশিষ্ট¨ হলো অল্প সময়ে গাছে ফল ধরবে। বাণিজ্যিকভাবে চাষবাদের জন্য খুবই ভালো ভূমিকা রাখবে জাতটি।

অতীতে বীজের গাছ থেকে জন্মানো চারাগাছ হতে ফলন পেতে ৮-১২ বছর পর্যন্ত সময় লাগতো। ফলে মানুষ বাণিজ্যিকভাবে চাষ করতো না। এই জাতটি কলমের মাধ্যমে জন্মানো যাবে, যার ফলে মাতৃগাছের গুনাগুন হুবহু অখুন্ন থাকবে এবং ফল আসতে সময় লাগবে মাত্র ৫ (পাঁচ) বছর। এতে অন্যান্য ফলের মতো বেল চাষীরাও বাণিজ্যিকভাবে চাষ করতে পারবে।

যেভাবে জাতটি উদ্ভাবনের কাজ শুরু: বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এর আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র, চাঁপাইনবাবগঞ্জ দীর্ঘদিন যাবৎ বেলের উপর গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এরই পেক্ষিতে সারা বছর ফলের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে এবং অমৌসুমে ফলের উৎপাদন বাড়াতে ২০০৬ সালে অপ্রচলিত ফলের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে জার্মপ্লাজম সংগ্রহের জন্য একটি মেলার আয়োজন করা হয়।

সেখান থেকে ভালো মানের বেলের জার্মপ্লাজম নির্বাচন করা হয়। এরপর আমার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ২০০৭ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থান হতে ২২ টি জার্মপ্লাজম সনাক্তকরণ করা হয়। পরে সায়ন সংগ্রহ করে অত্র কেন্দ্রে জন্মানো রুটস্টকের উপর কলম করা হয় এবং গবেষণা মাঠে স্থানান্তর করা হয়।

দীর্ঘ নয় বছরের গবেষণায় সেখান থেকেই পাওয়া গেল উৎকৃষ্টমানের এই জাতটি। গত জানুয়ারী মাসে জাতীয় বীজ বোর্ড হতে বারি বেল-১ হিসেবে জাতটি মুক্তায়ন করা হয়েছে। যার নিবন্ধন নং ০৪ (৩২)-০৩/১৬।

জাতটির বৈশিষ্ট্যসমুহ: ফল মাঝারি আকারের, নিয়মিত ফলদানকারী, প্রতিটি ফলের গড় ওজন ৯০০ গ্রাম, কাঁচা বেলের রং সবুজ। তবে পাকা ফল দেখতে হালকা সবুজ হতে হালকা হলুদ বর্ণের এবং টিএসএস ৩৫%। ফলের খাদ্যেপযোগি অংশ ৭৮ ভাগ। সাত বছর বয়সী গাছ প্রতি গড় ফলের সংখ্যা ৩৮টি এবং গড় ফলন ৩৪ কেজি/গাছ/বছর।

অর্থাৎ হেক্টর প্রতি ফলন প্রায় ১৪ টনের মতো। তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে ফলনও বাড়বে। এটি বেলের মধ্যম সময়ের জাত। এই জাতটির সংগ্রহের সময় মার্চ মাসের শেষ হতে এপ্রিল মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত। বাংলাদেশের সকল জেলাতেই এই জাতটি চাষাবাদ করা যাবে।

ব্যবহার ও পুষ্টিগুন: কাঁচা ও পাকা বেলের রয়েছে বহুবিধ ব্যবহার। পাকা বেলের শাঁস গাছ থেকে পেড়ে সরাসরি খাওয়া যায়। এছাড়াও পাকা বেলের শাঁস সরবত, জ্যাম, জেলী, চাটনি, স্কোয়াস, বেভারেজ ও বিভিন্ন ধরনের আর্য়ুবেদিক ঔষুধ তৈরীতে ব্যবহৃত হয়।

পৃথিবীর অন্যান্য দেশ বেলের পাতা ও ডগা সালাদ হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। বেল পুষ্টিগুনে অত্যন্ত সমৃদ্ধ। প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা বেলের শাঁসে থাকে আর্দ্রতা ৬৬.৮৯ ভাগ, কার্বোহাইড্রেট ৩০.৮৬ ভাগ, প্রোটিন ১.৭৬ ভাগ, ভিটামিন সি ৮.৬৪ মিলিগ্রাম, ভিটমিন এ (বেটাকেরোটিন) ৫২৮৭ মাইক্রোগ্রাম, শর্করা ৩০.৮৬ ভাগ, ফসফরাস ২০.৯৮ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ১২.৪৩ মিলিগ্রাম এবং লৌহ ০.৩২ মিলিগ্রাম।

এমনকি বেল গাছের কান্ড হতে যে আঠা পাওয়া যায় তা গাম তৈরীতে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া বেলের রয়েছে বহুবিধ ঔষুধি গুনাগুন। পাকা বেলের সরবত কোষ্ঠকাঠিন্য দুর করে থাকে। অন্য একটি গবেষণার ফলাফল হতে দেখা গেছে, বেল হতে প্রাপ্ত তৈল ২১ প্রজাতির ব্যাকটেরিযার বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধী হিসেবে কাজ করে।

চাষাবাদ পদ্ধতি: কলমের চারা সংগ্রহ করে রোপণ করতে হবে। লাইন থেকে লাইন এবং গাছ থেকে গাছের দুরুত্ব হবে ৫ মিটার। জুন-জুলাই মাসে নির্ধারিত গর্তে কলমের চারাটি রোপণ করতে হবে। লাগানোর পর অন্যান্য পরিচর্যা সমূহ করতে হবে। রোগ-বালাইয়ের আক্রমণ তেমন লক্ষ্য করা যায় না।

তবে একটি লেপিডোপটেরান পোকার লার্ভা বেলের কপি পাতা খায়। নতুন পাতা বের হলে সাইপারমেথ্রিন, কার্বারিল, ইমিডাক্লোপ্রিড গ্রুপের কীটনাশক নির্দেশিত মাত্রায় মাত্র একবার ব্যবহার করলে পোকাটির আক্রমণ থেকে বেলের পাতাকে রক্ষা করা যাবে।

আশাকরা যায় অসময়ে বেলের এই জাতটি চাষাবাদ করলে দেশীয় ফলের ঘাটতি অনেকটাই পূরণ হবে এবং চাষীরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *