নিউজ ডেষ্ক- খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায় অস্ট্রেলিয়ান ফল পেপিনো মেলন চাষ হচ্ছে। ৩০০ টাকা কেজি দরে বাজারে বিক্রি হচ্ছে এ ফল।
উপজেলা সদর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে সাহস ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম কৌতুহলের বশে চাষ শুরু করেন। ইউটিউব দেখে পাঁচটি গাছ দিয়ে শুরু করেন এখন শতাধিক গাছের বাগান তার। তার দেখাদেখি এখন অনেকেই এ ফলের চাষ করতে আগ্রহী হচ্ছেন।
রফিকুল জানান, কৃষিকাজ করে সংসার চললেও নিত্যনতুন বিভিন্ন ফলের চাষ নিয়ে আগ্রহ তার। হঠাৎ একদিন চোখে পড়ে পেপিনো মেলন চাষের পদ্ধতি। অস্ট্রেলিয়ার ফলটি বাংলাদেশের কেউ চাষ করছেন কিনা, তা গুগলে খোঁজ করেন। দেখেন, নীলফামারীর সেলিম নামের একজন সম্প্রতি এ ফলের চাষ শুরু করেছেন। সেলিম অস্ট্রেলিয়ায় থাকতেন, সেখান থেকে ফেরার সময় কয়েকটি চারা নিয়ে আসেন। সেই চারা থেকেই তিনি পেপিনো মেলন চাষ করেছেন।
ফলটি নতুন বলে মানুষের কাছে চাহিদাও কম। এ কারণে প্রতি কেজি ফল ৩০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। তার দেখাদেখি এখন অনেকেই এ ফলের চাষ করতে আগ্রহী হচ্ছেন। তিনি ফলের পাশাপাশি গাছের চারা তৈরি করেও বিক্রি করছেন।
সেলিমের সঙ্গে যোগাযোগ করে পাঁচটি চারা কেনেন রফিকুল। কুরিয়ারে সেগুলো খুলনায় পাঠানো হয়। প্রতিটি চারার দাম ছিল ৩০০ টাকা। সেলিমের কাছ থেকে চাষের পদ্ধতিও কিছুটা জেনে নেন। এরপর বাড়ির পেছনের দিকে তা লাগান। একটি চারা মারা গেলেও টিকে যায় বাকি চারটি। দুই মাসের মধ্যেই গাছগুলো বেশ বড় ও পাতায় ভরে যায়।
তিনি আরোও জানান, প্রাথমিক পর্যায়ে গাছগুলো বাঁচানোর জন্য দুটি পদ্ধতি ব্যবহার করেন। তিনি মাটিতে ও টবে গাছ লাগান। প্রতিটি গাছ বেঁচে আছে তার। বর্তমানে গাছগুলোতে ব্যাপক হারে ফল ধরতে শুরু করেছেন বলে জানান তিনি। লতার মতো গাছ বাড়ছে। তাই মাচা দিয়েছি। একেকটি ফলের ওজন ২০০-৫০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। পুষ্টিসমৃদ্ধ এ ধরনের ফল উৎপাদন করে দেশের মানুষের পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
লতাজাতীয় এ গাছের ডাল কেটে ‘কাটিং’ পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন করেন তিনি। এরপর ওই চারা থেকে এখন শতাধিক গাছের বাগান তৈরি করেছেন। বাড়ির আঙিনার একপাশে প্রায় দুই শতক জমিতে গড়ে তুলেছেন ড্রাগন ফলের বাগান। ওই বাগান থেকে বছরে আড়াই-তিন লাখ টাকার ড্রাগন বিক্রি করেন।
আর বাড়ির পেছন দিকের দুই শতক জমিতে চাষ করা হয়েছে পেপিনো মেলনের। গাছে গাছে ঝুলছে সাদা-সবুজ মিশ্রণের পেপিনো মেলন। কোনো গাছ ছোট আবার কোনো গাছ বড়। প্রচুর ফলন হয়েছে।
চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে রফিকুল বলেন, পেপিনো তরমুজজাতীয় রসালো সুস্বাদু ফল, আকারে বেশ ছোট। তরমুজ যেখানে ৩-১০ কেজি হয়, পেপিনো মেলন সেখানে হয় আধা কেজি থেকে এক কেজি। ডিসেম্বরের দিকে গাছগুলো লাগিয়েছিলেন। এর ৪৭ দিনের মধ্যে গাছে ফুল আসে। তিন মাসের মধ্যে ফল সংগ্রহের উপযোগী হয়।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছাদ্দেক হোসেন বলেন, পেপিনো মেলন উদ্ভিদ দক্ষিণ আমেরিকার মহাদেশের একটি চিরসবুজ সবুজ গাছের ফলজ। আমাদের দেশে এই ফলটি নতুন চাছ করা হচ্ছে। চাষ খুবই সহজ ও লাভজনক। এটি চাষ করতে তেমন যত্নের প্রয়োজন হয় না, প্রয়োজন হয় না অধিক জমিরও। বাড়ির ছাদে অথবা মাঠে সবখানে খুব সহজেই কম পরিশ্রমে পেপিনো মেলন চাষ করা সম্ভব। দুই মাসে ফলন পাওয়া যায়।