কথা দিলাম, গরিব রোগীর কাছ থেকে ভিজিট রাখব না: সাদিয়া

শিক্ষা

নিউজ ডেষ্ক- সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী সাদিয়া আফরিন হারিছা রাজশাহী মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। পরীক্ষায় ১০০ নম্বরের মধ্যে হারিছা পেয়েছেন ৭৮। সব মিলিয়ে ৩০০ নম্বরের মধ্যে তার মোট নম্বর ২৭৮।

বরিশাল থেকে হারিছা যখন মোবাইলে এ খবর জানাচ্ছিলেন বাবা মিজানুর রহমান তখনো রিকশায় যাত্রী নিয়ে ছুটছিলেন। পরে বাড়িতে গিয়ে দেখেন সেখানে দুনিয়াজোড়া আনন্দ, এলাকাবাসী সবাই দেখতে আসছেন হারিছাকে।

বরিশালের বানারীপাড়া পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ড-এর বিজয় সিংহ লেনের বাসিন্দা মিজানুর রহমানের জীবনে দারুণ খুশির উপলক্ষ এনে দিয়েছেন তার মেয়ে। মিজান বলেন, আমি এখন আর কোনোকিছুর অভাব বোধ করছি না। তবে টেনশনে আছি, মেয়েকে ডাক্তারি পড়ানোর খরচ পাব কোথায় তা নিয়ে।

হারিছা বলেন, আমাদের প্রতিবেশীরা সবসময় আমার মাকে খোঁটা দিয়ে বলত, ‘চার মেয়ের মা, একটাও ছেলে জন্মাতে পারেনি।’ তখন আমি ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। এসব কটাক্ষ শুনে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিই, এমন কিছু হবো যেন পরিবারে ছেলের অভাব পূরণ করতে পারি।

ছোট বেলার একটা ঘটনা মনে করে হারিছা বলেন, একবার আমার মা গর্ভবতী অবস্থায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে বরিশাল হাসপাতালে ৬ ঘণ্টা আইসিইউতে রাখতে হয়েছিল। ওই ৬ ঘণ্টায় ১৫ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে। আরো ৬ ঘণ্টা রাখার দরকার ছিল, কিন্তু আমার আব্বার টাকা ছিল না বলে মাকে বাড়ি নিয়ে আসেন। ঠিকভাবে চিকিৎসা না হওয়ায় মাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে।

পরিবারের এসব অভাব-অনটন দেখে ছোটকাল থেকেই লেখাপড়ায় ভালো করার চেষ্টা শুরু করেন হারিছা। ভালো ছাত্রী হওয়ায় বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও তাকে সহযোগিতা করেন।

তিনি বলেন, আমি রিকশাওয়ালার মেয়ে হলেও আমার মা-বাবা আমার অহংকার। তাদের নিয়ে আমি গর্ব করি। স্কুল-কলেজে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিভাগীয় ও জাতীয় পর্যায়ে ৬৭টি পুরস্কার জিতেছি। এসব প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য মাকে এসে বলতাম, মা আগামীকাল অমুক জায়গায় প্রতিযোগিতা আছে। মা কখনো কিছুতে না বলতেন না। রাতে আমার পোশাক ইস্ত্রি করে রাখতেন। সকালে উঠে বলতেন, চল।

হারিছা বলেন, আমার মেডিকেলে সুযোগ পাওয়ার পেছনে সবচেয়ে বেশি পরিশ্রম করেছেন ছোট চাচা আজিজুল হক। তিনি আমাকে বরিশাল কলেজে নিয়ে ভর্তি করিয়েছেন। লেখাপড়ার খরচ দিয়েছেন। এখন আমি চাই, একজন মানবিক ডাক্তার হতে। ডাক্তার নিয়ে অনেকের ভুল ধারণা রয়েছে তারা রোগীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। ঠিকভাবে চিকিৎসা দেন না। আমি ডাক্তার হলে যদি জানতে পারি কোনো রোগী গরিব, তার ভিজিট (ফি) তো রাখবই না বরং চিকিৎসার যত পরীক্ষা এবং ওষুধ লাগবে তা আমি বহন করব। কথা দিলাম।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *