উত্তেজনা কমাতে বেঙ্গালুরুর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘিরে ১৪৪ ধারা জারি

আন্তর্জাতিক আলোচিত সংবাদ

নিউজ ডেস্ক- শ্রেণিকক্ষে হিজাব পরার অধিকার নিয়ে ভারতের কর্ণাটকে উত্তেজনা কমাতে সব স্কুল-কলেজ ছুটি দেওয়ার পর এবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশে জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। দুই সম্প্রদায়ের উত্তেজনা যেন কোনোভাবেই আর না বাড়ে, সে জন্য প্রশাসনিক উদ্যোগের সঙ্গে যোগ দিয়েছে শিক্ষার্থীদের সংগঠন ন্যাশনাল স্টুডেন্টস ইউনিয়নস অব ইন্ডিয়া (এনএসইউআই)। আর হিজাব পরা ভারতীয় নারীদের সাংবিধানিক অধিকার—এমন যুক্তিতে সরব হয়েছেন মূলধারার রাজনীতিকরা।

ভারতে হিজাব ইস্যুতে কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী গতকাল বুধবার এক টুইটে লেখেন, ‘বিকিনি, ঘোমটা, জিন্স কিংবা হিজাব—কী পোশাক পরবেন, তা নারীদের একান্তই ব্যক্তিগত পছন্দ।ভারতের সংবিধান তাঁদের এই অধিকার দিয়েছে। নারীদের হয়রানি করা বন্ধ করুন। ’ এর আগে প্রিয়াঙ্কার ভাই কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও ভারতে নারীদের হিজাব পরার অধিকারের বিষয়ে কথা বলেন।

এ ছাড়া পাকিস্তানি নারী অধিকারকর্মী, শান্তিতে নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজাই হিজাব বিতর্কে মুখ খুলেছেন। ক্ষোভ প্রকাশ করে মালালা বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মেয়েদের পড়াশোনা ও হিজাবের মধ্যে একটিকে বেছে নিতে বলছে। এ ভয়ংকর ব্যাপার। মেয়েদের হিজাব পরে স্কুলে যেতে দিতে অস্বীকার করা ভয়ংকর। কম বা বেশি পোশাক পরার দোহাই দিয়ে নারীদের ওপর খবরদারি চলছেই। মুসলিম নারীদের ওপর ভারতীয় নেতাদের এই মনোভাব নিন্দনীয়। ’

হিজাব বিতর্কের মধ্যে গত মঙ্গলবার কর্ণাটকের মাণ্ড্য কলেজে ধারণকৃত বলে দাবি করা একটি ভিডিও নেট মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তাতে দেখা যায়, হিজাব পরা এক ছাত্রীকে ঘিরে ধরে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিচ্ছে একদল তরুণ। তাদের প্রত্যেকের গলায় বা কাঁধে গেরুয়া উত্তরীয়। ভয় পেয়ে গুটিয়ে না গিয়ে ওই ছাত্রী ‘আল্লাহু আকবার’ স্লোগান দেন। মুসকান নামের ওই ছাত্রীর ভিডিওটি প্রকাশ্যে আসার পর গতকাল ওপরের প্রতিক্রিয়া জানান প্রিয়াঙ্কা।

ঘটনার সূত্রপাত যেভাবে : গত মাসে বিজেপিশাসিত কর্ণাটকের উদুপির একটি কলেজে হিজাব পরা ছাত্রীদের শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করতে না দেওয়ার অভিযোগ ঘিরে বিতর্কের সূত্রপাত। জেলা প্রশাসনের বার্তা পেয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ হিজাব পরে ক্যাম্পাসে না ঢোকার নির্দেশনা জারি করে বলে অভিযোগ।

ওই ঘটনার পর কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সদস্যরা রাজ্যজুড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে হিজাব বাতিলের দাবিতে পথে নামে। অবস্থা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছে যে গত মঙ্গলবার থেকে তিন দিন রাজ্যের সব স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিতে বাধ্য হন কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাই।

এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বেঙ্গালুরুর সব স্কুল-কলেজের আশপাশে ১৪৪ ধারা জারি করেছে কর্ণাটক সরকার। আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই নির্দেশ জারি থাকবে বলে গতকাল সরকারি নির্দেশনায় জানানো হয়েছে। তিন দিন বন্ধ থাকার পর শুক্রবার স্কুল-কলেজ খুললে রাজ্যের রাজধানীতে নতুন নিয়ম কার্যকর হবে।

বেঙ্গালুরুর পুলিশ কমিশনার কমল পান্ত গতকাল ১৪৪ ধারা জারির ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘শহরে উত্তেজনা রয়েছে। নতুন করে প্রতিবাদ বিক্ষোভ হওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাই শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য যথাযথ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা অপরিহার্য। এই পরিস্থিতিতে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে স্কুল-কলেজের আশপাশে ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। ’ ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বেঙ্গালুরুর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ২০০ মিটারের মধ্যে কোনো রকম জমায়েত বা বিক্ষোভ প্রদর্শন চলবে না।

কর্ণাটক হাইকোর্টে হিজাবসংক্রান্ত মামলার শুনানি হয় গতকাল। বিচারপতি কৃষ্ণা দীক্ষিত উদুপিতে হিজাব নিষেধাজ্ঞা চ্যালেঞ্জ করে হওয়া মামলাগুলো পরবর্তী শুনানির জন্য উচ্চতর বেঞ্চে পাঠিয়েছেন। এরই মধ্যে হিজাব বিতর্কের অশান্তির আঁচ কর্ণাটকের সীমা ছাড়িয়ে লেগেছে আরেক বিজেপি শাসিত রাজ্য মধ্যপ্রদেশ এবং কেন্দ্রশাসিত পুদুচেরিতে। মধ্যপ্রদেশের শিক্ষামন্ত্রী ইন্দর সিংহ পারমার অভিন্ন পোশাকবিধি ও শৃঙ্খলার দোহাই দিয়ে সেখানেও শিক্ষায়তনে হিজাব নিষিদ্ধ করার নিয়ম চালু হতে পারে—এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন। পারমার বলেন, ‘হিজাব স্কুল ইউনিফর্মের অঙ্গ নয়। তাই স্কুলে এটা পরা নিষিদ্ধ হওয়া উচিত। ঐতিহ্য মানুন বাড়িতে, স্কুলে নয়। এটা শৃঙ্খলার প্রশ্ন। ’

অন্যদিকে দক্ষিণ ভারতের কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল পুদুচেরিতে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে হিজাব পরিহিতদের ক্লাস করতে না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। পুদুচেরির শিক্ষা দপ্তর বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছে বলে জানিয়েছে। সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া, আনন্দবাজার।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *