আল্লাহর প্রেরিত নবী সোলায়মান (আ.)-এর রহস্যময় মৃত্যু

ইসলাম breaking subled

নিউজ ডেষ্ক- মৃত্যু এক চরম সত্য। যে যত প্রভাবশালী ও ক্ষমতার অধিকারীই হোক না কেন, প্রাণী মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। মহান রবের ডাকে সাড়া দিয়ে চলে যেতে হবে। আজ আমরা জানব এমন ক্ষমতাধর একজন বাদশাহর মৃত্যুর ঘটনা, যাঁকে মহান আল্লাহ বাতাস, প্রাণীকুলসহ জিন জাতিরও ওপর রাজত্ব করার ক্ষমতা দিয়েছিলেন।

বলছি সোলায়মান (আ.)-এর কথা। তিনি ছিলেন মহান আল্লাহর প্রেরিত একজন নবী। এ ছাড়া তাঁর আরেকটি পরিচয় আছে। তিনি ছিলেন অদ্বিতীয় ও অনুপম সাম্রাজ্যের অধিকারী। মহান আল্লাহ তাঁকে শুধু সমগ্র পৃথিবীর নয়; বরং জিন জাতি, বিহঙ্গকুল ও বায়ুর ওপরও আধিপত্য দান করেছিলেন। আর সেই বিশাল সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণের জন্য মহান আল্লাহ তাঁকে দান করেছিলেন বিশেষ মুজেজা। মহান আল্লাহ তাঁর জন্য বায়ুর প্রবাহকে অনুগত করে দিয়েছিলেন। তিনি বায়ুর পিঠে নিজ সিংহাসনসহ সদলবলে সওয়ার হয়ে দুই মাসের পথ এক দিনে পৌঁছে যেতেন। বায়ুর ওপর ভর করে পৃথিবীর যেকোনো স্থানে গমন করা এবং বায়ুকে আদেশ করে যেকোনো কাজ করানো ছিল তাঁর অন্যতম মুজেজা। (সূত্র : সুরা সাবা, আয়াত : ১২ ও সুরা আম্বিয়া, আয়াত : ৮১)

মহান আল্লাহ তাঁর এই বান্দাকে এত বড় রাজত্ব দিয়েছিলেন যে তিনি প্রাণীকূলেরও রাজা ছিলেন। মহান আল্লাহ তাঁকে প্রাণীকূলের ভাষা বোঝার মুজেজা দান করেছিলেন। পাখিরা তাঁর আদেশে নজরদারি, চিঠি আদান-প্রদানসহ বিভিন্ন কাজ করত। তিনি তাদের ভাষা বুঝতেন। শুধু পাখিদেরই নয়, তিনি পিঁপড়াদের ভাষাও বুঝতেন বলে পবিত্র কোরআনে প্রমাণ পাওয়া যায়। (সূত্র : সুরা : নমল, আয়াত : ১৬, ১৮-১৯)

মহান আল্লাহ জিন জাতিকে তাঁর অধীন করে দিয়েছিলেন। তিনি জিনদের মাধ্যমে সাগরের তলদেশ থেকে মূল্যবান মণি-মুক্তা, হীরা-জহরত তুলে আনতেন। (সূত্র : সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ২)

জিনের মাধ্যমে হাজার মাইল দূর থেকে রানি বিলকিসের সিংহাসন নিমিষেই আনিয়ে নেওয়ার ঘটনা সবার জানা। কখনো কখনো তিনি জিনদের মাধ্যমে নির্মাণকাজও করাতেন। (সূত্র : সুরা : সাবা, আয়াত : ১২)

জিনদের মাধ্যমে বায়তুল মুকাদ্দাসের পুনর্নির্মাণ করাতে করাতে তিনি আল্লাহর প্রিয় হয়েছিলেন। ইয়াকুব (আ.) কর্তৃক বায়তুল মুকাদ্দাসের পুনর্নির্মাণের প্রায় হাজার বছর পর আল্লাহর আদেশে দাউদ (আ.)-এর পুনর্নির্মাণ শুরু করেন, এই নির্মাণকাজ শেষ হয় সোলায়মান (আ.)-এর আমলে। কিন্তু মূল নির্মাণকাজ শেষ হলেও আনুসঙ্গিক কিছু কাজ তখনো বাকি ছিল। এমন সময় সুলায়মান (আ.)-এর মৃত্যুকালও ঘনিয়ে আসে। এদিকে নির্মাণকাজে নিযুক্ত করা হয়েছিল কিছু অবাধ্যতাপ্রবণ জিনদের। তারা সুলায়মান (আ.)-কে ভীষণ ভয় পেত। এবং তাঁর ভয়ে কাজ করত। তারা যদি সোলাইমান (আ.)-এর মৃত্যু সংবাদ জেনে যায়, তাহলে নির্মাণকাজ অসম্পূর্ণ রেখেই কাজ ছেড়ে পালাবে। তাই আল্লাহর নির্দেশে সোলায়মান (আ.) মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হয়ে তাঁর কাচ নির্মিত মেহরাবে প্রবেশ করলেন। যাতে বাইরে থেকে ভেতরে সব কিছু দেখা যায়। তিনি বিধানানুযায়ী ইবাদতের উদ্দেশ্যে লাঠিতে ভর করে দাঁড়িয়ে গেলেন, যাতে রুহ বেরিয়ে যাওয়ার পরও লাঠিতে ভর দিয়ে দেহ স্বস্থানে দাঁড়িয়ে থাকে। এবং তাই হলো। মহান আল্লাহর আদেশে তাঁর দেহ ওই লাঠিতে ভর করে এক বছর দাঁড়িয়ে রইল। দেহ পচল না, খসল না বা পড়ে গেল না। জিনেরা ভয়ে কাছে যায়নি। ফলে তারা হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে কাজ শেষ করে ফেলল। এভাবে একদিন কাজ সমাপ্ত হয়ে যায়। তারপর আল্লাহর হুকুমে সোলায়মান (আ.)-এর লাঠিতে কিছু পোকা বাসা বাঁধে। তারা সোলায়মান (আ.)-এর লাঠির কিছু অংশ খেয়ে ফেললে ভেঙে যায়। এবং সোলায়মান (আ.)-এর লাশ মাটিতে পড়ে যায়। পবিত্র কোরআনে সোলায়মান (আ.)—এর মৃত্যুঘটনাটি এভাবেই পাওয়া যায়। ইরশাদ হয়েছে— ‘অতঃপর যখন আমরা সোলায়মানের মৃত্যু ঘটালাম, তখন ঘুনপোকাই জিনদের তাঁর মৃত্যু সম্পর্কে অবহিত করল। সুলায়মানের লাঠি খেয়ে যাচ্ছিল। অতঃপর যখন তিনি মাটিতে পড়ে গেলেন, তখন জিনেরা বুঝতে পারল যে যদি তারা অদৃশ্য বিষয় জানত, তাহলে তারা (মসজিদ নির্মাণের) এই হাড়ভাঙা খাটুনির আজাবের মধ্যে আবদ্ধ থাকত না। ’ (সুরা : সাবা, আয়াত : ১৪)

এভাবেই আল্লাহর আদেশে একজন প্রভাবশালী নবী ও বাদশাহর ইন্তেকাল হয়েছিল। এবং সময় আসা মাত্র তাঁকে মহান আল্লাহর ডাকে সাড়া দিতে হয়েছিল।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *