১৭০ টাকার তেলাপিয়া ১১০০ টাকা, চলছে গলাকাটা বাণিজ্য

Uncategorized

নিউজ ডেষ্ক-কক্সবাজারের লাইভ ফিশ রেস্টুরেন্টে চলছে গলাকাটা বাণিজ্য। এই রেস্টুরেন্টের রোষানলে পড়ে প্রতিনিয়ত আর্থিক হয়রানির শিকার হচ্ছেন পর্যটকসহ স্থানীয়রা।

অন্যান্য রেস্টুরেন্টের তুলনায় খাবারের দাম ৩-৪ গুণ বাড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি বিলে মনগড়া টাকার সংখ্যা বসিয়ে অতিরিক্ত অর্থ গ্রাহকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

বিশেষ করে ঈদের পর থেকে বিপুল পর্যটক আগমনকে কেন্দ্র করে এই রেস্টুরেন্ট গ্রাহকদের পকেট কাটার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। বর্তমানে যা দাম নিচ্ছে তা অন্যান্য রেস্টুরেন্টের চেয়ে শুধু অতিরিক্ত বললে ভুল হবে। রীতিমতো অস্বাভাবিক বলেও মনে করছেন ভুক্তভোগীরা। অ্যাকুরিয়াম নাম দিয়ে নামমাত্র পানির মধ্যে বিশেষ করে তেলাপিয়া মাছ দেখিয়ে দাম হাতিয়ে নেওয়ার কৌশল অবলম্বন করেই চলছে তাদের গলাকাটা বাণিজ্য। লাইভ ফিশ রেস্টুরেন্টের এমন গলাকাটা বাণিজ্যে চরম ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন পর্যটকসহ স্থানীয়রা।

গত ৫ মে পর্যটক তিন বন্ধু খাবার খেতে যান লাইভ ফিশ রেস্টুরেন্টে। ওই সময় রেস্টুরেন্ট বয় তেলাপিয়া ও সরপুঁটি মাছ দেখান। তারা একটি তেলাপিয়া ও একটি সরপুঁটি মাছ পছন্দ করে দেন। তাদের অভিযোগ মাছ দেখানোর সময় রেস্টুরেন্ট বয় কোনো মাছের দামও বলেনি; কিন্তু খাওয়ার পর বিল দেখে হতবাক হয়ে পড়েন। তাদের অর্ডার মতে, একটি তেলাপিয়া মাছ, একটি সরপুঁটি মাছ, ৩ প্লেট ভাত, এক প্লেট আলু ভর্তা, এক বাটি ডাল ও একটি পানির বোতল নেন। খাবার শেষে হাতে ধরিয়ে দেওয়া বিলে দেখা যায়- একটি ৫৮০ গ্রাম ওজনের তেলাপিয়া মাছের দাম নেওয়া হয়েছে ৬৩৮ টাকা। অথচ বাজারে ওই সাইজের এক কেজি তেলাপিয়া মাছের দাম ২০০ থেকে ২১০ টাকা। তাছাড়া ৪৪০ গ্রাম ওজনের একটি সরপুঁটি মাছের দাম ধরা হয়েছে ৬১৬ টাকা। অথচ বাজারে ওই সাইজের এক কেজি সরপুঁটি মাছের দাম ৪০০ থেকে ৪৩০ টাকা। এছাড়াও ৩ প্লেট ভাতের দাম নেওয়া হয়েছে ২৭০ টাকা, এক প্লেট আলু ভর্তা ৯০ টাকা, এক প্লেট ডাল ১৫৫ টাকা এবং এক লিটার পানির বোতলের দাম ধরা হয়েছে ২৫ টাকা। আবার সর্বমোট বিলের সঙ্গে অহেতুক মনগড়া যোগ করে দেওয়া হয়েছে ১৭৯ টাকা। এ টাকার কোনো প্রকার রেফারেন্সও নেই। সর্বশেষ এই বিল দেখে হতভম্ব হয়ে পড়েন পর্যটকরা।

একপর্যায়ে তাদের মধ্যে ইয়াছিন আরাফাত চৌধুরী নামের এক ব্যক্তি তাদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। পর্যটক মাছের দাম ও ভাতের দামসহ নানা বিষয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের প্রতিবাদ করলে রেস্টুরেন্ট মালিকসহ ম্যানেজাররা ডিসকাউন্ট দিয়ে বিদায় করার চেষ্টা করেন। এই রেস্টুরেন্টে খাবার খেয়ে একই সমস্যায় পড়েন ঢাকার ধানমন্ডি থেকে কক্সবাজার ঘুরতে আসা হিল্লোল চৌধুরী নামের এক পর্যটক দম্পতি। তারাও খাবার শেষে বিল দেখে তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠেন। পর্যটক হিল্লোল চৌধুরী বলেন, রেস্টুরেন্টের নামে লাইভ ফিশ মানুষকে আর্থিকভাবে জুলুম করছে। এটি প্রশাসনকে অবশ্যই নজরে নেওয়া দরকার। অন্যথায় এভাবে চলতে থাকলে কক্সবাজারের প্রতি পর্যটকেরা বিমুখ হয়ে যাবে। পাশাপাশি লাইভ ফিশের মতো গুটিকয়েক জুলুমবাজ ব্যবসায়ীদের জন্য বিশ্বের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পর্যটন শহর কক্সবাজারের চরম বদনাম হবে।

এদিকে লাইভ ফিশ রেস্টুরেন্টের পার্শ্ববর্তী তেলাপিয়া চাষকারী পুকুরের মালিক জানান, এই রেস্টুরেন্ট তাদের কাছ থেকে পাইকারি দামে তেলাপিয়া মাছ ক্রয় করে ১ কেজি ১৭০ টাকায়। এই তেলাপিয়া মাছ তারা রেস্টুরেন্টে রান্না করে গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করে ১ হাজার ১শ টাকায়; যা খুবই অস্বাভাবিক বলেও মনে করছেন রেস্টুরেন্টে তেলাপিয়া সরবরাহকারী ব্যবসায়ী। কক্সবাজার হোটেল-মোটেল জোনের ঐতিহ্যবাহী রাঁধুনি রেস্টুরেন্টের মালিক খোরশেদ আলম জানান, ২৫০ কিংবা ৩০০ গ্রাম একটি তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হয় সর্বোচ্চ ১শ টাকা। কিন্তু কিছু কিছু রেস্টুরেন্ট লাইভ ফিশ নাম দিয়ে কৌশল অবলম্বন করে গ্রাহকদের কাছে প্রতারণা করে ৭-৮শ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিচ্ছে; যা খুবই অস্বাভাবিক। লাইভ ফিশের যুক্তি থাকে রান্না করা পর্যন্ত। কারণ রান্নার পর তো কোনো কিছুই আর লাইভ থাকে না। সুতরাং এই প্রতারণা থেকে সব ব্যবসায়ীকে বের হয়ে আসা দরকার।

এসব অভিযোগের বিষয়ে লাইভ ফিশ রেস্টুরেন্টের মালিক আকতার হোসেন বলেন, আমরা অন্যান্য রেস্টুরেন্টের মতো পচা ও বাসি খাবার পরিবেশন করি না। তাই আমাদের খাবারের দাম একটু বেশি। তবে ১৭০ টাকা ক্রয় করা তেলাপিয়া মাছ গ্রাহকদের কাছ থেকে ১ হাজার ১শ টাকা বিক্রি করার ব্যাপারে জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি এই রেস্টুরেন্ট মালিক। কক্সবাজার জেলা রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম ডালিম বলেন, কক্সবাজারে ১২০টির অধিক রেস্টুরেন্ট আমাদের সমিতির অন্তর্ভুক্ত আছে। তার মধ্যে মোটেল শৈবালস্থ লাইভ ফিশ রেস্টুরেন্ট নেই। কারণ মনগড়া দাম নেওয়ার জন্য নিজেকে অনেক বেশি প্রভাবশালী মনে করে ওই রেস্টুরেন্টের মালিক। পাশাপাশি নিজেকে বড় আওয়ামী লীগ নেতাও দাবি করে। জেলাজুড়ে রান্না করা এক পিস তেলাপিয়া মাছের দাম ৮০ থেকে ১০০ টাকা। আর সে বিক্রি করে ৭-৮শ টাকা পর্যন্ত। পাশাপাশি সব কিছুই অতিরিক্ত দাম নেয় এই রেস্টুরেন্ট। সুতরাং পর্যটক কিংবা স্থানীয়দের কথা মাথায় রেখে প্রশাসনকে এই রেস্টুরেন্টের খাবার দাম সহনীয় পর্যায়ে আনা দরকার। কারণ এ মুহূর্তে তার অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের লাগাম টেনে না ধরলে আবারো দেশজুড়ে কক্সবাজারের বদনাম হবে। এ বিষয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান বলেন, যদি পর্যটক কিংবা স্থানীয়দের কাছ থেকে কোনো রেস্টুরেন্টে মাত্রারিক্ত টাকা আদায় করা হয় এবং এর প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *