বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে সংবাদ সম্মেলনে আসন্ন রাকসু নির্বাচন নিয়ে
কথা বলেন উপাচার্য। এসময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তোমরা তালা দিবা, তোমরা হাতাহাতি করবা আর তোমাদের ইলেকশন আমাকে করে দিতে হবে, মামার বাড়ির আবদার? যদি ছাত্র সুলভ আচরণ, নিয়ম-কানুনের ভিতরে তোমরা থাকতে না পারো তোমরা নিজেদের রাকসুর অযোগ্য বলে প্রমাণ করছো। তোমাদের যোগ্যতার পরিচয় তোমরা দেবে না, আমি সালেহ হাসান নাকিব দেব নাকি?
প্রথম বর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির দাবি জানিয়ে গত রোববার সকাল থেকে রাকসু কোষাধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে কার্যালয়ের একটি চেয়ার ভেঙে ও একটি টেবিল উল্টে দিয়ে ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন তারা। তখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মারসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী মনোনয়নপত্র তুলতে গেলে তাদের ঘিরে ধরেন ছাত্রদলের কর্মীরা। দুপুরের দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরও কয়েকজন সাবেক সমন্বয়কের নেতৃত্বে একদল শিক্ষার্থী ঘটনাস্থলে আসেন। পরে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা–কর্মীরা ছাত্রদলের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে সেখানে যান। এরপর কয়েক দফা ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা রাকসু ভবনের ফটকের তালা ভেঙে ফেলেন। চার ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর বেলা দুইটার দিকে মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু হয়। পরে মনোনয়নপত্র বিতরণের সময় এক দিন বাড়ানো হয়।
উপাচার্য রাকসুর নির্বাচন কমিশনের প্রশংসা করে বলেন, ‘আমি আমার নির্বাচন কমিশনের প্রশংসা করেছি এবং আবারো করি। ওইদিন (রোববার) যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল এবং তাদের সম্পর্কে যে কথাবার্তাগুলো এসেছিল, যে ভাষায় স্লোগান দেয়া হয়েছিল- যারা আছেন তাদের প্রশংসা করি এই কারণে তারা প্রত্যেকে উচ্চ নৈতিকতার মানুষ এবং অসম্ভব আত্মসম্মানবোধ আছে। শুধুমাত্র এই বিশ্ববিদ্যালয় এবং ছাত্রছাত্রীদের কথা চিন্তা করেই উনারা দায়িত্ব ছেড়ে দেননি- এটাই ছাত্র ছাত্র-ছাত্রীদের পরম পাওয়া। কিছু শিক্ষক আছেন এই জঘন্য কথাবার্তা এবং জঘন্য পরিস্থিতি সৃষ্টি করার পরেও এই জায়গা থেকে পিছিয়ে যাচ্ছেন না।’
‘ছাত্রদের দায়িত্ব নিতে হবে। প্রক্টোরিয়াল বডি কখনো ছিল কখনো ছিল না, তারা এক মুহূর্ত চুপ করে থাকে নাই। সবসময় কাজ করেছে এবং সংযম দেখিয়েছে। কোনো ড্রাস্টিক ব্যবস্থা নেয়নি বলেই আজকে আমরা এই জায়গায় আছি। কাজেই আমি মনে করি না, তাদের তরফ থেকে কোনো সমস্যা ছিল। যাদের সমস্যা ছিল আলাপটা তাদেরকে নিয়ে করা উচিত। তারা যদি ভবিষ্যতে এই ধরনের আলাপ করে, আচরণবিধিতে যা কিছু আছে আমরা সেটা ইমপ্লিমেন্ট করার চেষ্টা করব। তারপরেও যদি এই অসভ্যতা জারি থাকে তাহলে রাকসু নির্বাচন অসভ্যতার শিকার হবে। এটার দায়িত্ব যাদের তাদেরই নিতে।’
রাকসু নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের প্রশ্নে রাবি ভিসি বলেন, ‘আমি মনে করি না যে, রাকসু নির্বাচন আমাদের ছাত্রদের নির্বাচন। এর পরিবেশ পরিস্থিতি পারস্পরিক সৌহার্দ্য এগুলো বজায় রাখার দায়িত্ব আমাদের সবার। আমি তো নিজে খুশি হতাম যদি সম্পূর্ণ আমাদের সামর্থ্য এবং আমাদের ভিতরে যে সৌন্দর্য আছে সেইটা দিয়েই রাকসু নির্বাচন হয়ে যেত। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো, আমাদের অনেক কিছু চিন্তা করতে হয়। আমি পার্সোনালি মনে করি, এই ধরনের নির্বাচনে সেনাবাহিনী পর্যন্ত যাওয়াটাই একটা মস্ত বড় ব্যর্থতার পরিচয়। আমি সেনাবাহিনী নিয়ে আপাতত কোন চিন্তা করছি না।‘
এসময় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মইন উদ্দিন, কোষাধ্যক্ষ মো. মতিয়ার রহমান ও জনসংযোগ কর্মকর্তা অধ্যাপক মো. আখতার হোসেন মজুমদার।