নিউজ ডেষ্ক- বহুল আলোচিত-সমালোচিত ইসলামিক বক্তা আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফের বিরুদ্ধে এবার নির্যাতনের শিকার মাদরাসার সেই চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীর পরিবারকে মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
শুক্রবার (২৫ মার্চ) সকালে কাছে সেই শিশুর বাবা মেরাজুল ইসলাম রেন্টুকে হুমকি দেওয়ার বেশ কয়েকটি অডিও কলের রেকর্ড হাতে এসেছে। যেখানে শোনা যাচ্ছে নির্যাতনের শিকার ওই শিক্ষার্থীর পরিবারকে মামলা তুলে নিতে
হুমকি ও অভিশাপ দিচ্ছেন আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ। আরটিভি নিউজের পাঠকদের জন্য মোবাইল কলের অডিও রেকর্ড তুলে ধরা হলো।আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ : আপনি মেরাজুল ইসলাম রেন্টু বলছেন।
রেন্টু : জ্বি ওস্তাদজি।
আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ : চিনতে পেরেছেন?
রেন্টু : জ্বি ওস্তাদজি, চিনতে পেরেছি।
আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ : আমি গত পরশু দিন আপনার সঙ্গে কথা বলার জন্য আব্দুর রহমানের মামাকে দিয়ে খুব চেষ্টা করেছিলাম। ফোনও দিয়েছিলাম।
রেন্টু : জ্বি ওস্তাদজি।
আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ : আমি একটা মামলার কাগজ দেখতে পারছি। আমি হাতে নিলাম এটা।
রেন্টু: জ্বি ওস্তাদজি।
আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ : আমি কি জাতির ক্ষতি করেছি।
রেন্টু : না আমি আপনাকে অনেক সম্মান করি। আমার সন্তানকে আপনার মাদরাসায় দিয়েছি।এটা তো বুঝতে পারছেন।
আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ : মোবারাকাল।
আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ : আপনার কথাটা আপনি আগে বলেন।
রেন্টু : না ওস্তাদজি, বলেন আপনি।
আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ : আমার কথা হলো আপনি বাবা হয়ে ছেলেটার ক্ষতি করলেন। আমার মাদরাসায় ভর্তি করে দিয়েছেন আপনার ছেলেকে। আপনি কি সেটা জানেন?
রেন্টু: জ্বি অবশ্যই।
আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ : আমি জানতেও পারলাম না, মামলার কাগজ আমার হাতে আসলো। আমি আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ একাই প্রতিষ্ঠান চালায় (আল-জামিআহ আস সালাফিয়া মাদরাসা ডাংঙ্গীপাড়া, রুপগঞ্জ)। আর আমার ছেলেরা আলহামদুল্লিলাহ, শীর্ষস্থানীয় ছেলে। এটা জাতির কথা, আপনার কথা এবং আপনার পরিবারেরও কথা। আমার ছেলে আব্দুর রহমান আপনার ছেলেকে মেরে ফেলে দেবে এটার হিসাব! যাক আমি ওদিকে বলতে চাইনি। আমি বলতে চেয়েছি, ছেলেটার ক্ষতি করে দিলেন।
রেন্টু : ওস্তাদজি আমি।
আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ : আমার অসন্তুষ্ট থাকাটায় আপনার ছেলের জন্য অনেক বড় ক্ষতির কারণ।
রেন্টু: জ্বি ওস্তাদজি।
আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ : আপনার ছেলেটাকে হেফাজতের জন্য (আল্লাহর গজব থেকে আপনার ছেলেটাকে রক্ষা করার জন্য) এখন আপনার ও আমার সহজ পথ, কোথায় গেলে মামলা উঠে যাবে সেটা বলা। আর আমি যে কষ্ট পাচ্ছি এটা তুলে ধরা। আব্দুর রাজ্জাক সাহেব এখানে একটা ভুল হয়েছে। আপনি আমার ছেলেকে মাফ করে দেন। আল্লাহ যেন আমার ছেলেটাকে মানুষ করে।
দ্বিতীয় অডিও কল রেকর্ডে শোনা গেছে।
রেন্টু : একটা শিশুকে কি পরিমাণে মারা হলে সেই শিশুটা বমি করতে পারে, মাথা ঘুরে পড়ে যেতে পারে?
আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ : একটু আঘাতে মানুষ মারা যায়? আপনার ছেলে তো বেঁচে আছে। আব্দুর রহমান তো মারেনি। যারা চুরি করেছে তারা মেরেছে। আপনার ছেলেই চোর। আপনি কোর্টে কত দিন মামলা চালাবেন চালান, এটা মনে করার কোনো কারণ নেই আব্দুর রাজ্জাক বিন ইসসুফের পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
রেন্টু : ওস্তাদজি, আমি আপনার ক্ষতি চাইতে পারি না। আপনি আমার ক্ষতি চাইতে পারেন। আমরা বিচার চাই।
আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ : কোর্টে আপনি মামলা করছেন আমাকে জিজ্ঞাসা না করে। আমি প্রতিষ্ঠান চালায়। আপনি কত বড় খারাপ অভিভাবক তার হিসেব আছে।
রেন্টু : ঠিক আছে ওস্তাদজি, আমি খারাপ অভিভাবক, আমি মিথ্যাবাদী।
আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ : শেষ কথা আপনি ধ্বংসের জন্য প্রস্তুত হোন। চালান মামলা।
তৃতীয় অডিও কল রেকর্ডে শোনা যায়।
আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ : আপনি কি প্রতিশোধের জন্য মামলা করেছেন।
রেন্টু: না…না, আমার ছেলের সঙ্গে অন্যায় হয়েছে। আমি ন্যায়বিচার চাই।
আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ : ন্যায়বিচার কোর্টে নেবেন।
রেন্টু: জ্বি ওস্তাদ।
আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ : তাহলে তো আপনার সঙ্গে এত কথা বলে হিসেব করতে পারলাম না। ঠিক আছে আল্লাহ আপনার ছেলেকে ধ্বংস করুক। হারিযে যাক। আল্লাহ্ ব্যবস্থা করে দেবে। আপনি মামলা চালান।
এ বিষয়ে আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ আরটিভি নিউজকে বলেন, আমার প্রতিষ্ঠান ভালোবাসি, মানুষের ছেলের ক্ষতি করব, এটা আমরা কামনা করি না। তবে সেই শিক্ষার্থীর বাবাকে কল দিয়েছিলাম। কি বলেছিলাম মনে নেই।
নির্যাতনের শিকার ওই শিক্ষার্থীর বাবা মেরাজুল ইসলাম রেন্টু আরটিভি নিউজকে বলেন, এখনও অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। মামলা তুলে নিতে অনেক ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। আজকে পুলিশকে হুমকির বিষয়টি জানাব।
ইসলামিক বক্তা আবদুর রাজ্জাক বিন ইউসুফের নাতির বিরুদ্ধে টাকা চুরির অভিযোগ করায় চতুর্থ শ্রেণির মাদরাসার এক শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ইউসুফের মেজ ছেলে আবদুর রহমানের বিরুদ্ধে। বর্তমানে নির্যাতনের শিকার ওই শিক্ষার্থীকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়েছে।