ইউক্রেন-রাশিয়ার পাল্টাপাল্টি হামলা, ১০০ সৈন্য নিহত

আন্তর্জাতিক

নিউজ ডেষ্ক- প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সামরিক অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেওয়ার পর ইউক্রেনের কয়েকটি শহরে বিভিন্ন দিক থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। আক্রমণ শুরুর প্রথম এক ঘণ্টায় ইউক্রেনের ৪০ জনের বেশি সৈন্য এবং ১০ বেসামরিক নাগরিকের প্রাণহানি ঘটেছে। অন্যদিকে ইউক্রেন বলছে, পাল্টা প্রতিরোধে রাশিয়ার অন্তত ৫০ দখলদার সৈন্য নিহত হয়েছে।

ইউক্রেন বলছে, তাদের সৈন্য রাশিয়ার অন্তত ৫০ দখলদার সৈন্যকে হত্যা করেছে। ইউক্রেনের বিভিন্ন শহর লক্ষ্য করে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর অভিযান শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কিয়েভ এই দাবি করেছে।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, একেবারে নিখুঁত অস্ত্র ব্যবহার করে ইউক্রেনের বিমান বাহিনীর ঘাঁটি এবং সামরিক স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ার পাঁচটি বিমান এবং একটি হেলিকপ্টার ভূপাতিত করার দাবি জানিয়েছে দেশটির সামরিক বাহিনী। পরবর্তীতে আরও একটি বিমান ধ্বংস করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী বলেছে, শচস্ত্য শহর এখন ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। রাশিয়ার ৫০ দখলদার সৈন্য নিহত হয়েছে। ক্রামতোর্স্ক জেলায় রাশিয়ার আরেকটি বিমান ধ্বংস করা হয়েছে। এটি নিয়ে ছয়টি বিমান ধ্বংস করা হয়েছে।

ইউক্রেনের উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টন জেরাশেঙ্কো বলেছেন, কিয়েভ, খারকভ এবং নিপারের কাছে সামরিক সদর দপ্তর, বিমানবন্দর, সামরিক অস্ত্রাগারে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। রাজধানী কিয়েভে বিস্ফোরণ এবং গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে বলে স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে জানানো হয়েছে।

রাশিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লোদিমির জেলেনস্কি। রাশিয়ার সামরিক আক্রমণ শুরুর পর বৃহস্পতিবার টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে এই ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

রুশ সৈন্যদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দেশের জনগণকে অস্ত্র হাতে তুলে নেওয়ার পাশাপাশি ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীকে সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে জেলেনস্কি। এছাড়া ইউক্রেনকে রক্ষায় ইচ্ছুক কারো ওপর পূর্বে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়ে থাকলে এখন তা প্রত্যাহার করে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।

জেলেনস্কি বলেছেন, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রুশ হামলা নাৎসি আক্রমণের মতোই। ইউক্রেনে হামলার প্রতিবাদ জানাতে রাশিয়ার নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

জনগণের মাঝে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে ইউক্রেনের এই নেতা দেশটির গণমাধ্যমকে তথ্য সঠিকভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। দেশটির সামরিক বাহিনী কতটা দৃঢ়ভাবে রাশিয়ার সৈন্যদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, তা তুলে ধরার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

শত্রুরা গুরুতর ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে এবং এই ক্ষতি আরও বাড়বে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি। জেলেনস্কি বলেছেন, দেশের সরকার ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ইচ্ছুক প্রত্যেকের কাছে ‘ইতোমধ্যে অস্ত্র বিতরণ শুরু’ করছে।

সদ্য স্বাধীনতার স্বীকৃতি দেওয়া ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় গণপ্রজাতন্ত্রী দনেৎস্ক এবং লুহানস্ককে কিয়েভের আগ্রাসন থেকে রক্ষার জন্য দেশটিতে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এছাড়া ইউক্রেন দখলে নেওয়ার রাশিয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই বলে বৃহস্পতিবার দাবি করেছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে পুতিন বলেছেন, সামরিক অভিযানের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য হলো— গত আট বছর ধরে কিয়েভ শাসকদের গণহত্যার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হওয়া লোকজনকে রক্ষা করা। একই সঙ্গে ইউক্রেনকে অসামরিকীকরণ এবং নাৎসিবাদমুক্ত করবে মস্কো। এছাড়া যারা বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে বহুমুখী নৃশংসতা চালিয়েছে তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে।

তিনি বলেন, ইউক্রেনের পুরো ভূখণ্ড দখলে নেওয়ার কোনো সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নেই মস্কোর। রাশিয়ার এই প্রেসিডেন্ট বলেন, ইউক্রেনের ভূখণ্ডগুলো দখলের পরিকল্পনা আমাদের নেই। আমরা কারও ওপর জোর করে কোনো কিছু আরোপ করতে যাচ্ছি না। কিয়েভের সৈন্যরা এখনও রাশিয়ার স্বাধীন ঘোষণা করা দনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলের বিশাল অংশের নিয়ন্ত্রণ করছে।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে সামরিক অভিযান চালানোর ঘোষণা দেওয়ার পর তা বন্ধ করতে শেষ মুহূর্তের চেষ্টা হিসেবে রুশ প্রেসিডেন্টকে ‘মানবতার দোহাই’ দিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।

ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানকে নিজ মেয়াদের সবচেয়ে ‘দুঃখজনক ঘটনা’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

বুধবার টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন পুতিন। ওই দিন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক ছিল, যেখানে উপস্থিত ছিলেন আন্তোনিও গুতেরেস।

বৈঠক শেষে জাতিসংঘ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পুতিনের উদ্দেশে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘জাতিসংঘের মহাসচিব হিসেবে আমার মেয়াদে সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনাটি আর কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটতে যাচ্ছে।‘

‘আমি প্রেসিডেন্ট পুতিনের উদ্দেশে হৃদয়ের গভীর থেকে বলতে চাই— প্রেসিডেন্ট পুতিন, আপনাকে মানবতার দোহাই, যুদ্ধ বন্ধ করুন, ইউক্রেন থেকে আপনার সৈন্যবহর ফিরিয়ে নিন এবং সেখানে শান্তি স্থাপনের জন্য দায়িত্বশীল হোন। ইতোমধ্যে গত কয়েক বছরে ওই অঞ্চলে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে।’

যুদ্ধ ইউক্রেনের জন্য ধ্বংসাত্মক পরিণতি নিয়ে আসবে এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে এর পরিণতি ‍সুদূরপ্রসারী হবে বলেও সতর্ক করেছেন তিনি।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *