ঈদের পর বিএনপির যুগপৎ আন্দোলন

রাজনীতি

নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার এবং দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কয়েক বছর ধরেই নানা কর্মসূচি দিচ্ছে বিএনপি। তবে এসব কর্মসূচির কোনোটাই হালে পানি পায়নি। বরং বিএনপি নেতাদের ‘ঈদের পর কর্মসূচি’ সংক্রান্ত বক্তব্য নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা প্রায়ই কটাক্ষ করেন। দাবি আদায়ে আবারও সেই ‘ঈদের পরেই’ নতুন কর্মসূচির কথা ভাবছে বিএনপি। এজন্য সরকারবিরোধী এবং সমমনা দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করছেন বিএনপি নেতারা। এরই মধ্যে কয়েকটি মিত্রদলের সঙ্গে বৈঠকও করেছে বিএনপির হাইকমান্ড।

নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের এক দফা দাবির আন্দোলনে শিগগির রাজনৈতিক দলগুলোকে বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেওয়া হবে। বৃহত্তর ঐক্য গড়ে রাজপথের আন্দোলনের মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবির আন্দোলনে ডান-বাম সবাইকে নিয়ে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে রাজপথে কর্মসূচি দিতে চাইছে বিএনপি। রাজপথে থাকা দলগুলোর সঙ্গে রোজার মধ্যে মতবিনিময় শেষ করে ঈদুল ফিতরের পর কর্মসূচি ঘোষণা করবে তারা। বিএনপির সঙ্গে ঐক্য গড়া দলগুলো যুগপৎভাবে অভিন্ন এই কর্মসূচি পালন করবে।

ইতোমধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে এজন্য দায়িত্ব বণ্টন করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে কয়েকটি মিত্রদলের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানসহ শীর্ষ কয়েকজন নেতা। চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টার এ বৈঠকে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) ও নেজামে ইসলামের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। যদিও বৈঠকের পর এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, আমরা চা খেতে খেতে অনানুষ্ঠানিকভাবে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি।

সূত্রমতে, জোটের ঐক্য ও চলমান কর্মসূচির পরিসর বাড়ানোসহ সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে এ বৈঠকে।

অবশ্য বিএনপির মিত্র দলগুলোর মধ্যে জোটগত কর্মসূচি নিয়ে এক ধরনের অস্বস্তি অনেকদিন ধরেই দেখা গেছে। জোটগত কর্মসূচি হলে বেশ কয়েকটি দল আশঙ্কায় থাকে যে, তাদের নেতারা গুরুত্ব কম পাবেন। তবে বিএনপির হাইকমান্ড এ অস্বস্তির বিষয়টি মাথায় রেখে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।

এদিকে বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের পরিকল্পনায় আলোচনায় আসছে নিবন্ধন হারানো জামায়াতে ইসলামীর নামও। তাদের সঙ্গে বিএনপির দীর্ঘদিনের সখ্য নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনা রয়েছে। বেশ কিছুদিন জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের দূরত্ব দেখা গেলেও জানা গেছে, জামায়াতের সঙ্গে এই মুহূর্তে দূরত্ব রাখতে চায় না দলটি। বিশেষ করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটানোর আন্দোলনে জামায়াতের মতো আন্দোলন-মিত্রকে পাশে দরকার বলে মনে করে বিএনপি নেতাদের একাংশ। সেজন্য কৌশলে এগোতে চাইছে বিএনপি।

গত ৯ ফেব্রুয়ারি বিকেলে কয়েকটি মিত্রদলের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। বিএনপির হাইকমান্ড সূত্র বলছে, নব্বইয়ে এরশাদবিরোধী যে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল বা ’৯৬ সালে তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ যেভাবে বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলেছিল, সেই আদলে কর্মসূচি গ্রহণ করবে দলটি। সরকারের সঙ্গে সখ্য নেই এমন রাজনৈতিক দলগুলোও বিএনপির কর্মসূচি পালন করবে বলে আশাবাদী দলটি।

দলীয় সূত্র জানায়, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে কর্মসূচি কী হবে, আন্দোলনের প্লাটফর্মের নাম কী হবে তা নিয়েও ভাবা হচ্ছে।

‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার মঞ্চ’, ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও ভোটাধিকার রক্ষা জাতীয় মঞ্চ’, ‘সম্মিলিত বিরোধী ফ্রন্ট’, ‘সর্বদলীয় বিরোধী ফ্রন্ট’, ‘সম্মিলিত বিরোধী জোট’, ‘সর্ব বিরোধী দলীয় জোট’- এ জাতীয় হতে পারে বিএনপির নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের এক দফা দাবি আদায়ের আন্দোলনের প্লাটফর্মের নাম। সার্বিক বিষয়টি চূড়ান্ত করতে চলতি সপ্তাহ থেকে বিএনপির পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে। আগামী রোজার মধ্যেই এ প্রক্রিয়া শেষ হবে এবং ঈদের পরে চূড়ান্ত কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে নামবে বিএনপি।

সার্বিক বিষয়ে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের এক দফা দাবির আন্দোলনের জন্য ইতোমধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিকভাবে যোগাযোগ করা হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগাযোগ করবেন তারা।

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে এখনো এ বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। তবে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে আমাদের সমর্থন থাকবে।

আন্দোলন কর্মসূচিতে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় আবারও জমিয়ে তোলার আশায় বিএনপি নেতারা নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারে এই ইস্যুতেই কি নতুন ঐক্য গড়ে উঠবে, নাকি রাজনৈতিক দলগুলোর দলীয় স্বার্থ থাকবে জানতে চাইলে মান্না বলেন, নির্দলীয় নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে অবশ্যই আমরা একমত। পাশাপাশি কল্যাণরাষ্ট্র গঠনের জন্য আমাদের দলীয় কিছু দাবি থাকবে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের এক দফা দাবির আন্দোলনে শিগগির রাজনৈতিক দলগুলোকে বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেওয়া হবে। বৃহত্তর ঐক্য গড়ে রাজপথের আন্দোলনের মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে।

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে বৃহত্তর ঐক্য গড়তে বিএনপি ব্যাপকভাবে কাজ করছে।

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, এই সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে আছে এমন সব দলকে আমরা পাশে চাই। তাদের নিয়ে আমরা বৃহত্তর জোট গঠনে কাজ করছি।

বৃহত্তর ঐক্য গঠন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সময়মতো জানতে পারবেন।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *