শ্বশুরের আত্মহত্যার বিষয়ে যা বললেন রিয়াজ

বিনোদন

নিউজ ডেষ্ক- রাজধানীর ধানমণ্ডিতে লাইভে এসে নিজের মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করা আবু মহসিন নামে সেই ব্যবসায়ী চিত্রনায়ক রিয়াজের শ্বশুর। বুধবার রাত সোয়া ৯টার দিকে নিজের হতাশার কথা জানিয়ে মহসিন আত্মহত্যা করেন।

শ্বশুর আবু মহসিন খানের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন রিয়াজ। তিনি তার শ্বশুরের জন্য দোয়া চেয়েছেন। বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে যান রিয়াজ। সেখানে তার শ্বশুরের ময়নাতদন্ত হয়।

মর্গ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকরা মুখোমুখি হলে রিয়াজ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আপনারা আমার বাবার (শ্বশুর) জন্য দোয়া করবেন, যেন আল্লাহ তাকে মাফ করে দেন। বেহেশত নসিব করেন। এর বাইরে আমি আর কিছু বলতে পারছি না।

বুধবার রাত ৯টার দিকে ফেসবুক লাইভে এসে নিজের লাইসেন্স করা পিস্তল দিয়ে মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেন আবু মহসিন খান (৫৮)। আত্মহত্যার আগে তিনি নিজের ব্যক্তিজীবনের নানা হতাশার কথা তুলে ধরেন।

ধানমণ্ডি ৭ নম্বর রোডের ২৫ নম্বর বাড়ির একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন মহসিন খান । আর তার বড় ছেলে মাকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন। নিঃসঙ্গতা তাকে কুরে কুরে খাচ্ছিল। এ ছাড়া ব্যবসায় প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে জানান তিনি।

লাইভে এসে মহসিন খান বলেন, আমি মহসিন । ঢাকায় থাকি। আমার বয়স ৫৮ বছর। কোনো একসময়ে আমি ভালো ব্যবসায়ী ছিলাম। বর্তমানে আমি ক্যান্সারে আক্রান্ত। তাই আমার ব্যবসা কিংবা কোনো কিছুই নেই। ভিডিও লাইভে আসার উদ্দেশ্য হলো— মানুষের বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং আমার যে এক্সপেরিয়েন্স, সেটি শেয়ার করলে হয়তো সবাই জানতে পারবেন, সবাই সাবধানতা অবলম্বন করবেন।

গত ৩০ তারিখ আমার খালা মারা যান। তার একটি ছেলে আমেরিকায় থাকে, মা মারা গেল অথচ ছেলেটি আসল না। এটি আমাকে অনেক দুঃখ দিয়েছে, কষ্ট লেগেছে।

আজকে আমার আরেকজন খালা মারা গেছেন। তারও একটি ছেলে আমেরিকায় ছিল। অবশ্য তার তিনটি ছেলে ইঞ্জিনিয়ার। তিনজনই বর্তমানে বাংলাদেশে আছেন। তারা হয়তো দাফন-কাফনের কাজ সম্পন্ন করছে। সেদিক দিয়ে বলব, এই খালা অনেকটা লাকি (ভাগ্যবান)।

আমার একটা মাত্র ছেলে। সে অস্ট্রেলিয়াতে থাকে। আমার বাসায় আমি সম্পূর্ণ একা থাকি। আমার খালা মারা যাওয়ার পর থেকে আমার ভেতরে খুব ভয় করছে। আমি যদি আমার বাসায় মরে পড়েও থাকি, আমার মনে হয় না যে, এক সপ্তাহ কেউ জানতে পারবে, আমি মারা গেছি।

ছেলেমেয়ে, স্ত্রী যাদের জন্য যাই কিছু আমরা করি; আমরা সব কিছু করি সন্তান ও ফ্যামিলির জন্য। আপনি যদি ১০০ টাকা ইনকাম করেন, আয় করেন, তার টোয়েন্টি পারসেন্ট টাকাও আপনি নিজের জন্য ব্যয় করেন না। যদি টোয়েন্টি পারসেন্ট টাকা আপনি নিজের জন্য ব্যয় করেন, তা হলে ৮০ পারসেন্ট টাকা আপনার ফ্যামিলির জন্য ব্যয় হয়।

গত করোনা শুরুর আগ থেকে আমি বাংলাদেশে আছি। একা থাকা যে কী কষ্ট, যারা একা থাকে, তারাই একমাত্র বলতে পারে বা বোঝেন। যাদের জন্য আমি বেশি করছি, প্রত্যেকটা লোকের কাছে আমি প্রতারিত হয়েছি। আমার এক বন্ধু ছিল, নাম কামরুজ্জামান বাবলু। যাকে আমি না খেয়ে তাকে খাইয়েছি। সে আমার ২৩ থেকে ২৫ লাখ টাকা মেরে দিয়েছে।

এর পর পিস্তলের লাইসেন্স দেখান। বলেন, আমি যেটা দিয়ে আত্মহত্যা করছি সেটি ইলিগ্যাল (অবৈধ) কিছু না। এটির লাইসেন্স আছে। সেটি নবায়নও করা হয়েছে। আমি চলে যাব। আত্মীয়স্বজন যারা আছ, যেহেতু বাবাও আমাকে জায়গাটা দেয়নি, আমি যে কবরস্থানটা করেছি সেখানে আমাকে দাফন করো না। মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধে একটি কবরস্থান হয়েছে, সেখানে তোমরা আমাকে দাফন করে দিও। প্রত্যেকটা লোক আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। আমার বাবা, মা, ভাইয়েরা— প্রত্যেকটা লোক, এভরিওয়ান।

লাইভে কথা বলার সময় তার সামনে টেবিল ছিল। ওই টেবিলে কাফনের কাপড় ছিল। এর ওপর একটি চিরকুট ছিল; তাতে লেখা— ‘এখানে কাফনের কাপড় রাখা আছে, যা আমি ওমরাহ হজে ব্যবহার করেছিলাম। যারা দেখছেন, তাদের সাথে এটাই শেষ দেখা।’

সবাই ভালো থাকবেন। এভাবে ১৫ মিনিট কথা বলে ১৬ মিনিটের সময় নিজের মাথায় গুলি করেন মহসিন। কালেমা পড়তে পড়তে নিজের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করেন তিনি।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *