নিউজ ডেষ্ক- অ্যাম্বুল্যান্সে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধা যাচ্ছিল ক্যান্সার আক্রান্ত শিশু আফসানা। পথে আশুলিয়ায় তুচ্ছ ঘটনায় অ্যাম্বুল্যান্স আটকে চালককে মারধর ও চাবি ছিনিয়ে নেন একটি মাইক্রোবাসের চালক। দুই চালকের বিতণ্ডার মধ্যে ছটফট করে প্রাণ হারায় আফসানা।
৯ বছরের শিশু আফসানা। বাড়ি গাইবান্ধা সদর থানার মধ্য ধানঘড়ার শাপলা মিল এলাকায়। চার মাস ধরে ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধ করছিল শিশুটি। রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল।
সেখান থেকে ঢাকার মহাখালী ক্যান্সার হাসপাতালে আনা হয়। গতকাল মঙ্গলবার আফসানাকে অ্যাম্বুল্যান্সে বাড়ি ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কের নরসিংহপুর বাসস্ট্যান্ডে সাইড দেওয়া না-দেওয়া নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়ায় অ্যাম্বুল্যান্স ও মাইক্রোবাসের চালক। বাইপাইলে এসে অ্যাম্বুল্যান্সের গতিরোধ করে মাইক্রোবাসটির চালক অ্যাম্বুল্যান্স চালককে মারধর করে। ছিনিয়ে নেয় অ্যাম্বুল্যান্সের চাবি। এই হুড়োহুড়ির মধ্যেই ছটফট করতে করতে মারা যায় শিশুটি।
পুলিশ জানায়, অভিযুক্ত মাইক্রোবাসচালকের নাম নজরুল ইসলাম। তিনি আশুলিয়ার বাইপাইলে আব্দুল মজিদের মালিকানাধীন রেন্ট-এ কারের মাইক্রোটির চালক। তাঁর সঙ্গে মারামারিতে যোগ দেওয়া অন্যদের নামও জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাইপাইলে পৌঁছলে অ্যাম্বুল্যান্সের পেছনে থাকা মাইক্রোবাসটি (ঢাকা মেট্রো-চ-১৫৭৩২৩) সামনে এসে পথরোধ করে। মাইক্রোবাসের চালক নজরুল গাড়ি থেকে নেমে অ্যাম্বুল্যান্সের চালক মারুফকে মারধর করে চাবি ছিনিয়ে নেন। এ সময় শিশুটির পরিবারের সদস্যরা বারবার বলতে থাকেন, তাঁদের শিশুসন্তানটি মৃত্যুপথযাত্রী। দয়া করে যেন অ্যাম্বুল্যান্সের চাবি ফিরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু চালক নজরুলের মন গলে না। উল্টো তিনি মোবাইলে তাঁর কয়েকজন সহযোগীকে ডেকে এনে চালক মারুফকে পেটাতে থাকেন। ততক্ষণে ছটফট করতে করতে বাবার কোলেই মারা যায় শিশু আফসানা।
এরপর আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে অ্যাম্বুল্যান্সের চাবি ফেরত দেন নজরুল। আফসানাকে দ্রুত পাশের নারী ও শিশু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী পারভেজ বলেন, ‘ঘটনাস্থলে অনেকেই দাঁড়িয়ে ছিল। আমি ছুটে এসে মাইক্রোর চালককে অনেকবার বলেছি চাবি ফেরত দিতে। দেয়নি। আমাদের সামনেই শিশুটি ছটফট করতে করতে মরে গেল। এটা জঘন্য অপরাধ। চালক নজরুলের কারণেই শিশুটির এমন করুণ মৃত্যু হলো। ’
শিশু আফসানার বাবা আলম মিয়া বলেন, ‘আমার ক্যান্সার আক্রান্ত মেয়েকে ডাক্তার দেখিয়ে অ্যাম্বুল্যান্সে বাড়ি ফিরছিলাম। সাইড না পেয়ে পরে মাইক্রোর লোকজন অ্যাম্বুল্যান্সের চালককে মারধর করে চাবি নিয়ে যায়। দীর্ঘ সময় চাবি ফেরত না পাওয়ায় আমার মেয়েটি অ্যাম্বুল্যান্সেই ছটফট করতে করতে মারা গেল। এই অন্যায়ের বিচার আমি কার কাছে চাইব?’
অ্যাম্বুল্যান্সচালক মারুফ বলেন, ‘মাইক্রোর চালক নেমেই আমাকে মারধর করতে শুরু করে। অনেকবার অনুরোধ করেছি, অ্যাম্বুল্যান্সে মুমূর্ষু রোগী। কোনো কথা শোনেনি। উল্টো ফোন দিয়ে আরো লোকজন নিয়ে এসেছে। পরে ৯৯৯-এ ফোন করলে পুলিশ এসে চাবি উদ্ধার করে দেয়। কিন্তু ততক্ষণে আমার রোগী মারা গেছে। ’
ট্রাফিক পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে অ্যাম্বুল্যান্সের চাবি উদ্ধার করলেও অভিযুক্ত চালকসহ অন্যরা পালিয়ে যায়। মাইক্রোবাসটি জব্দ করা হয়েছে।
আশুলিয়া থানার এসআই সামিউল ইসলাম বলেন, শিশুর মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযুক্ত চালকসহ সবার পরিচয় জানা গেছে। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।