মৃত্যুর আগে একটু আশ্রয় চান জহিরন

Uncategorized

নিউজ ডেষ্ক- ৭১’পর নিজের স্বামীকে হারান জহিরন। সঙ্গে নদী ভাঙ্গনে হারান শেষ সম্বল ভিটামাটিও। ২ ছেলে-মেয়কে সাথে নিয়ে ভিটামাটি ও স্বামী হারা এই বৃদ্ধা উপজেলার জোড়গাছ বাঁধে প্রায় ৫০ বছর আগে বসত গড়েন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উচ্ছেদ অভিযানে থাকার ঘরটিও শেষ পর্যন্ত হারাতে হয় তাকে। কোন উপায় না পেয়ে আবারো বাঁধের নিচেই ঝুপড়ি তুলে শুরু করেন বসবাস।

বয়সের ভারে নুড়ে পড়া গৃহ ও ভূমিহীন এই বৃদ্ধা কষ্টে দিন পার করলেও তার দিকে নজর পড়েনি জনপ্রতিনিধি ও কোন কর্তার। একটি ঘরের জন্য অনেকের দারেদারে ঘুরলেও মেলেনি তার ভাগ্যে একটি থাকার স্থান। জমিসহ নিজের একটা ঘর চান জহিরন, মৃত্যুর আগে একটু আশ্রয় একটু শান্তি চান তিনি।

জানা যায়, কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলা একটি ভাঙ্গন কবলিত এলাকা। প্রতি বছরই শত শত পরিবার ঘর-বাড়ি হারায় নদী ভাঙ্গনে।

এরপর আবারো তারা স্বপ্ন দেখেন নতুন করে বাঁচতে। এরকম একজন হচ্ছেন জহিরন বেওয়া। এক সময় সবই ছিল তার। কিন্তু নদী ভাঙ্গনে নিঃস্ব হয়ে যান তিনি। ৭১’মুক্তিযুদ্ধে শেষ আশ্রয় স্থল হারান সঙ্গে হারান নিজের স্বামীকেও। নিঃস্ব এই জহিরন ছেলে মেয়েকে নিয়ে বসবাস শুরু করেন উপজেলার রমনা জোড়গাছ বাঁধে। এরপর ছেলে বিয়ে করে বউ নিয়ে পাড়ি জমান কাজের উদ্দেশ্যে। মেয়েকেও বিয়ে দিলেও কিছুদিন সংসার করে অন্যত্র আবার বিয়ে করেন মেয়ে জামাই। অসহায় এই জহিরন মেয়ে ও নাতীকে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন। এরই মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উচ্ছেদ অভিযানে থাকার ঘরটিও শেষ পর্যন্ত হারাতে হয় তাকে।

নেই থাকার স্থান ছিলনা যাওয়ারও কোন স্থান অবশেষে উক্ত স্থানে বাঁধের নিচে ঝুড়পি তুলে শুরু করেন বসবাস। আগে নিজেই অন্যের বাড়িতে কাজ করে জীবন পার করলেও এখন বয়সের ভাড়ে ঠিক মতো চলতে না পারায় মেয়েই এখন তার একমাত্র সম্বল। কখনো অন্যের বাড়িতে কখনো মাঠে আবার কখনো বিভিন্ন স্থানে কাজ করেই কষ্টে জীবন পার করছেন জহিরনের মেয়ে ছকিনা।

কথা শুরু হতেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন বৃদ্ধা জহিরন। তিনি বলেন “বাপুরে নদীতে সব হারিয়ে হুজুকের (৭১’ মুক্তিযুদ্ধের) পর এই বানত (বাঁধে) ঘর তুলি তখন থাকি খুব কষ্টে আছি। নেই থাকার নিজের একনা জায়গা, নাই কোন ঘর। বারবার মানুষ আইসে আর কয় ঘর ভাঙ্গি নেও এডেই (এখানে) থাকার জায়গা নয়।”

তিনি আরো বলেন, হামার এডেই (এখানে) সরকারী ঘর হইলো তবুও হামরা (আমরা) পাইলোম (পাইলাম) না, আর কত কষ্ট ভুগমো। সরকার তো সবার তাহলে কি হামরা(আমরা) কিছু পাবার নই।

এসময় অসহায় এই বৃদ্ধা থাকার জন্যে স্থানসহ একটি ঘর দাবি করেন সরকারের কাছে, আর বলেন শেখের বেটি শেখ হাসিনা তো সবাইকে ঘর করি দিবের নাগছে, হামাক একনা (একটা) দিবের কনরে বাবা।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *