নিউজ ডেষ্ক- এবার হিমালয় কন্যা পঞ্চগড়ে কড়া নাড়ছে শীত। গত কয়েক দিনে এ জনপদে সকালের কুয়াশা জানান দিচ্ছে ঋতুচক্রের হেমন্তের আগেই শীতের আগমন বার্তা। তবে গত কয়েকদিনের গোলমেলে আবহাওয়ার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে স্থানীয়দের। মধ্য রাত থেকে সকাল পর্যন্ত কুয়াশা আর তারপরেই সূর্যদেবের কড়া তাপ। মাঝে মধ্যে হচ্ছে হালকা থেকে মাঝারি ধরণের বর্ষণ। সব মিলে এ এক অন্য ঋতু বৈচিত্রের খেলা। কিন্তু প্রকৃতিপ্রেমীরা বেশ উপভোগ করছেন কালের এই সময়টি।
বিশেষ করে সকালের কুয়াশা আর হালকা শীত বেশ উপভোগ করছেন তারা। শীতের আবহকে ঘিরে এরই মধ্যে প্রান্তিক এ জেলায় পর্যটকদের আনাগোনা শুরু হয়েছে। সেই সাথে শীতের আগাম প্রস্তুতি নিয়ে স্থানীয়রাও কাঁথা কম্বল বের করতে শুরু করেছেন। শীতকালকে ঘিরে পর্যটনের বড় সম্ভাবনা দেখছেন জেলা প্রশাসন। গত কয়েকদিন ধরেই পঞ্চগড়ে সকালে সময়টিতে কখনো হালকা আবার কখনো ঘন কুয়াশা পড়ছিল।
গতকাল শুক্রবার কুয়াশার পরিমাণ আরো বাড়ে। ঘন কুয়াশায় ঢেকে যায় পথ ঘাট নদ নদী। হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে হয় যানবাহনগুলোকে। কুয়াশা ঢাকা ভোরে যখন পাড়াসব ঘুমিয়ে তখনও কিছু মানুষের আনাগোনা পথঘাটে। এদের কেউ শ্রমজীবী, কেউ কৃষক, কেউ মুসল্লি আবার কেউ শারীরিক ব্যায়াম করতে পথে বের হয়েছেন। একদল কাক, ভাত শালিকের ছুটোছুটি চারপাশে। ছোট জলাশয়গুলো মুখ মেলেছে শাপলা। সকাল সাড়ে ৭টায় দেখা মিলল সূর্যের। মুহূর্তের বিদায় হলো সব কুয়াশা।
সার্চ লাইটের মতো গনগনে রোদ গায়ে জ্বালা ধরিয়ে দিচ্ছে। দিনের তাপমাত্রা ৩০ থেকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। এ সময় ছাতা মাথায় দিয়ে পথঘাটে বের হতে হয়। গত কয়েক দিনে দিনে রাতে মাঝে মধ্যে হয়েছে বৃষ্টিপাতও। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে তাপমাত্রা কমতে থাকে। গ্রামের রাস্তাঘাট রাত ৯টার মধ্যেই ফাঁকা হয়ে যায়। মাঝরাতে টুপ টুপ করে পড়ে কুয়াশা। এ সময় কাঁথা জড়িয়ে ঘুমাতে হয়। প্রকৃতির এই খামখেয়ালিপনা আচরণ লক্ষ্য করছেন স্থানীয়রা।
গতকাল শুক্রবার এই মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়। পঞ্চগড় জেলা শহরের বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম বলেন, আমাদের পঞ্চগড় এখন দার্জিলিংয়ের মতো আবহাওয়া। সকালে কুয়াশা, দিনে রোদ আর মাঝে মধ্যে হচ্ছে বৃষ্টিও। আশরাফুল আলম বলেন এখনো পুরো হেমন্তকাল বাকি। তার আগেই পঞ্চগড়ে শীতের আগমন বার্তা পাওয়া যাচ্ছে। হিমালয় কাছে হওয়ায় এ জেলায় শীত আসে একটু আগেই। আবার শীত যায়ও সবার পরে। এখনকার শীত উপভোগের। তবে এর চেয়ে বেশি হলে এ এলাকার মানুষের জন্য তা কষ্টকর হয়ে যায়।
এ বিষয়ে পঞ্চগড় পরিবেশ পরিষদের সভাপতি তৌহিদুল বারী বাবু বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের ঋতু বৈচিত্র্য পাল্টে যাচ্ছে। যে সময়ে যেটা হওয়ার কথা সেটা হচ্ছে না। শরতকালেই শীতের রূপ দেখা যাচ্ছে। আবার দিনে অন্য চিত্র। মাঝে মধ্যে বৃষ্টিপাতও হচ্ছে। এগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব।
এদিকে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ বলেন, পঞ্চগড় শীতপ্রধান এলাকা হিসেবে পরিচিত। উত্তরে হিমালয় কাছে হওয়ায় এখানে শীতের প্রকোপ বেশি। গত কয়েকদিনে দিনের বেলায় কড়া রোদ থাকলেও সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে তাপমাত্রা কমে আসছে। একই সাথে কুয়াশার ঘনত্ব বাড়ছে। এটি শীতের আগমন বার্তা দিচ্ছে।
এ বিষয়ে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম জানান, শীতকে ঘিরে আমরা পঞ্চগড়ের বড় পর্যটনের সম্ভাবনা দেখছি। যারা সময় রাজধানীসহ গরম এলাকায় বসবাস করে তারা কিন্তু শীত উপভোগ করার জন্য পঞ্চগড়ে ছুটে আসে। সেই সাথে এই সময়ে পরিষ্কার আকাশ থাকলে কাঞ্চনজঙ্ঘাও দেখা যায়। আর পঞ্চগড়ের সমতলের চা শিল্পসহ অসংখ্য দর্শনীয় স্থান ঘুরেও মন জুড়ান তারা।