নিউজ ডেষ্ক- দীর্ঘদিন ধরে মুখ থুবড়ে পড়েছে হিলি রেলওয়ে স্টেশন। ব্রিটিশ শাসন আমলে স্থাপিত রেলস্টেশনটিতে ঢাকাসহ আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতি না থাকায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বন্দরের ব্যবসায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থী, পাসপোর্ট যাত্রীসহ স্থানীয়দের। রেলস্টেশনটিকে গতিশীল করতে একাধিকবার মানববন্ধনসহ রেল কর্তৃপক্ষের কাছে ধরনা দিয়েও সুফল মেলেনি আজও।
স্থানীয়রা বলছেন, রেলস্টেশনটিকে গতিশীল করা হলে বন্দরের ব্যবসা বাণিজ্য যেমন বাড়বে তেমনি সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমবে। এমনকি সরকারের রাজস্ব আদায়ও বৃদ্ধি পাবে।
হিলি স্থলবন্দর আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা জানান, ব্রিটিশ আমলে চালু হয় হিলি রেলস্টেশন। এই হিলি রেলস্টেশনকে কেন্দ্র করে এখানে চালু করা হয় দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর হিলি স্থলবন্দর। রয়েছে ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট। প্রতিদিন হিলিতে হাজারও মানুষ আছেন ব্যবসাসহ বিভিন্ন কাজে। তবে এ মানুষগুলোর একমাত্র যাওয়া-আসার নিরাপদ রুট রেলপথ হলেও না থামার কারণে যাতায়াত করতে হয় বাস ও অন্যান্য বিকল্প মাধ্যমে। এতে একদিকে যেমন চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন জনসাধারণ অন্যদিকে সরকার হারাচ্ছে বিশাল অঙ্কের রাজস্ব।
হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট কয়েকজন পাসপোর্ট যাত্রী বলেন, উত্তরাঞ্চলের মধ্যে একমাত্র ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট হিলি হয়ে ব্যবসাসহ বিভিন্ন কাজে আমাদের ভারতের যেতে হয়। কিন্তু এখানে যাতায়াতের জন্য ঢাকাগামী কোনো ট্রেন থামে না। ট্রেন থামলে ভোগান্তির ছাড়াই যাতায়াত করা যেত।
এদিকে সকল আন্তঃনগর ট্রেন হিলিতে থামানোর দাবিতে দীর্ঘদিন থেকে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেন মুক্তিযোদ্ধাসহ জনসাধারণ। বিভিন্ন দফতরে ধর্না দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হিলির বীরমুক্তিযোদ্ধা শামসুল আলম মণ্ডল দুঃখভরা কণ্ঠে বলেন, আমরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীরমুক্তিযোদ্ধা। দেশ স্বাধীন করেছি রক্ত দিয়ে অথচ এত কষ্ট হয়নি দেশ স্বাধীন করতে, যে কষ্ট বর্তমানে পাচ্ছি। হিলিতে বসবাস করা মানে যেন একটা ভোগান্তির শহরে বাস করা। যে ভোগান্তির শেষ নেই। কাকে বললে কাজ হবে তাও জানি না। হিলির ওপর দিয়ে একটি বা দুটি নয়, ২৬ খানা ট্রেন যাতায়াত করে। কিন্তু ঢাকাগামী কোনো ট্রেনে থামে না, আমাদের অন্য স্টেশনে নেমে তারপরে গন্তব্যে আসতে হয়।
তিনি আরও বলেন, ট্রেন থামানোর জন্য বিভিন্ন দফতরে দীর্ঘদিন থেকে ধরনা দিয়েও কোনো লাভ হয় না। মন্ত্রী বলেন, এমপি বলেন, তারা শুধু আশ্বাস দেয় কিন্তু কাজের কাজ কিছুই করে না। এদিকে হিলির রাস্তাঘাট এতটাই খারাপ যে খানাখন্দে ভরা। এমনকি চলাচলের অনুপযোগী সেটাও কেউ দেখে না। অল্প বৃষ্টি হলে রাস্তাঘাটে ভোগান্তির চরমে উঠে যায়।
হিলি পৌর মেয়র জামিল হোসেন চলন্ত বলেন, সরকারের রাজস্ব আদায়ের অন্যতম প্রধান উৎস হিলি স্থলবন্দর ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট। যেখান থেকে সরকার প্রতি বছর ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকা রাজস্ব পেয়ে থাকে। এই স্থলবন্দর এলাকায় ১৮৬৮ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে অর্থনৈতিক, ভৌগোলিক ও ব্যবসায়ী কারণে নির্মিত হয় হিলি রেলস্টেশন। প্রতিদিন ভারত-বাংলাদেশের মধ্য পাসপোর্ট যাত্রী পারাপারসহ আমদানি-রফতানি কাজে হিলিতে আসা যাওয়া করেন কয়েক হাজার মানুষ। আর এ মানুষগুলোর একমাত্র নিরাপদ যাতায়াতের রুট রেলপথ। রেলপথ নিরাপদ রুট হলেও স্টেশনটিতে নেই ঢাকাগামী ট্রেনের যাত্রা বিরতি।
পৌরমেয়র আরও বলেন, স্টেশনে সব ট্রেনের যাত্রাবিরতি দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি করেছে স্থানীয়রা। পাশাপাশি বারংবার রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে ধরনা দিয়ে কোনো সুফল মিলছে না। হিলিতে সকল ট্রেন থামাতে বিভিন্ন দফতরে এরইমধ্যে আমরা যোগাযোগ করছি। তারা আশ্বাস দিয়েছেন। এখানে যদি প্রতিটা ট্রেন থামানো হয় সে ক্ষেত্রে ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি বৃদ্ধি পাবে এমনকি সরকার রাজস্বও বৃদ্ধি পাবে।
হিলি রেলস্টেশন মাস্টার বলেন, বর্তমানে ঢাকা থেকে পঞ্চগড় ও রংপুরগামী সব ট্রেন চলাচলের একমাত্র রুট এটি। প্রতিদিন হিলি রেলস্টেশনের ওপর দিয়ে গড়ে ২৬টি ট্রেন চলাচল করে। এখানে লোকালসহ তিনটি ট্রেনর স্টপেজ রয়েছে বলেও জানান তিনি।