নিউজ ডেষ্ক- ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল ৯টা। দূর থেকে দেখা গেল কলেজের সামনে উড়ছে জাতীয় পতাকা। সেই পতাকার কাছে যাওয়ার জন্য কোনো পথ খুঁজে পাওয়া গেল না। কোথাও কোনো সাইনবোর্ডও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ধানক্ষেতের আইল মাড়িয়ে পৌঁছে দেখা গেল সব কক্ষেই ঝুলছে তালা। কলেজে কোনো শিক্ষক বা শিক্ষার্থী নেই। এমনকি অন্য কোনো মানুষের দেখাও মেলেনি
দীর্ঘ তিন ঘণ্টায়। এ যেন ‘ভূতের কলেজ’ বা ‘অশরীরী আত্মা’র এক প্রতিষ্ঠান। দুপুর ১২টার দিকে প্রতিষ্ঠানে আসেন দপ্তরি ওবায়দুল ইসলাম বাবু। এর কিছুক্ষণ পর আসেন বাণিজ্য শাখার ডেমোনেস্ট্রেটর গণেশ চন্দ্র রায়।
সোমবার সরেজমিনে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা যায় নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার বালারপুকুর মহিলা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজে।
সূত্র জানায়, ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানে স্কুল শাখায় ১১ জন এবং কলেজ শাখায় ১১ জন শিক্ষক আছেন। কলেজ কোড নম্বর-১৪০৭৯। ২০২০ সালে এমপিওভুক্ত হয় প্রতিষ্ঠানটি।
দুপুর দেড়টায় প্রথম দেখা মেলে একজন শিক্ষার্থীর। তার নাম ছালমা বেগম। আসন্ন এসএসসি ভোকেশনাল পরীক্ষার প্রবেশপত্র নিতে এসেছে সে। বিকেল ৩টা পর্যন্ত বসে কলেজে দেখা হয় শুধু এই তিনজনের সঙ্গেই। এ ছাড়া কোনো শিক্ষক-শিক্ষার্থী আসেননি সোমবার।
ছালমা বলে, ‘আমি মাঝে মাঝে ক্লাস করেছি। এখান থেকে ৩০-৪০ জন পরীক্ষা দেব। ’ তবে ছালমার কাছে তার পাঁচজন সহপাঠীর নাম জিজ্ঞেস করলে বলে, ‘সেভাবে কাউকে চিনি না। ’ একইভাবে পাঁচজন শিক্ষকের নামও জানে না ছালমা। অন্যদিকে বাবু স্যারকে সে চেনে। যিনি ওই প্রতিষ্ঠানের দপ্তরি।
বাণিজ্য শাখার ডেমোনেস্ট্রেটর গণেশ চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমরা নিয়মিত ক্লাস পরিচালনা করে আসছি। আমাদের অনেক শিক্ষার্থী আছে। ’ তবে কতজন শিক্ষার্থী আছে তা বলতে পারেননি গণেশ।
ওই এলাকার বাবুল হোসেন, আজিজার রহমান এবং নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকেই জানান, এই প্রতিষ্ঠানটি পতাকা আর কাগজ-কলমেই সীমাবদ্ধ। আর প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাকালীন যেসব শিক্ষক ছিলেন এখন তারা নেই। এমপিওভুক্ত হওয়ার পর রাতারাতি তাদের নাম মুছে নতুন নাম যুক্ত হয়েছে। এ ছাড়া এখানে কে পড়ায় আর কে পড়ে জানে না এলাকাবাসী।
এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ আবুল কাশেম আজাদ বলেন, ‘এবার ভোকেশনাল থেকে ২৬ জন এসএসসিতে অংশ নেবে। আমাদের বিএম কলেজ শাখায় শিক্ষার্থী আছে ১৫০ জনের মতো। ভোকেশনাল স্কুল শাখায় আছে ১১০ জনের মতো। স্কুল শাখায় পরীক্ষা আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর। ’ কিন্তু কলেজ শাখার শিক্ষার্থীরা কোথায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনি যা দেখেছেন তাই। ’
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা চঞ্চল কুমার ভৌমিক বলেন, ‘যেহেতু আমি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, তাই কারিগরি অধিদপ্তরের কোনো কর্মকাণ্ড উপজেলাটিতে না থাকলেও মাঝেমধ্যে নির্দেশক্রমে আমরা তাদের কার্যক্রমগুলো সম্পন্ন করে থাকি। এ ক্ষেত্রে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকায় তাদের বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমার কাছেও কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আসেনি। যদি অভিযোগ আসে, তাহলে তা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুব হাসান বলেন, ‘শিক্ষার ওপর সরকার সার্বক্ষণিক গুরুত্ব দিয়ে আসছে। তাই শিক্ষা প্রদানে গাফিলতি থাকলে সেই প্রতিষ্ঠান কিংবা শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ’