নিউজ ডেষ্ক- পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর নদী পারাপারে স্পিডবোটের ব্যবহার বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যাওয়া এ সেবা এখন বেসরকারি উদ্যোগে চালু হচ্ছে রাজধানীর বৃত্তাকার নৌপথকে ঘিরে। আগামী শনিবারই এ সেবা উদ্বোধন হওয়ার কথা রয়েছে।
রাজধানীবাসীর যানজট কমানোর পাশাপাশি সড়কের ওপর চাপ কমাতে রাজধানীর চারপাশের নৌপথ চালু করার উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। সেবামান নিয়ে অভিযোগ থাকায় ২০০৪ সালে উদ্যোগটি প্রথম বাস্তবায়নের কিছুদিনের মধ্যেই মুখ থুবড়ে পড়ে। এরপর আরো দুবার উদ্যোগটি বাস্তবায়নের জন্য সচল করা হলেও তা কাজে লাগানো যায়নি। সরকারি উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ার পর এবার বেসরকারি বিনিয়োগে ফের সচল হচ্ছে রাজধানীর বৃত্তাকার নৌপথ।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্রে জানা গিয়েছে, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর মাওয়া টু বাংলাবাজার এবং মাওয়া টু মাঝিরকান্দি রুটে চলাচল করা স্পিডবোটগুলো যাত্রীর অভাবে বন্ধ হয়ে যায়। ওখান থেকেই একটি কোম্পানি ঢাকার বৃত্তাকার নৌপথে বোট চলাচল শুরু করতে চাচ্ছে। আগামী শনিবার এ সেবার আনুষ্ঠানিক যাত্রার বিষয়টি এখন বিআইডব্লিউটিএ থেকে চূড়ান্ত হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, আপাতত দুটি রুটে আমরা স্পিডবোট সেবা শুরু করছি, টঙ্গী টু কড্ডা ও টঙ্গী টু উলুখুলা রুটে। পরবর্তী সময়ে আরো দুটি রুট তথা কড্ডা টু গাবতলী ও গাবতলী টু সদরঘাটেও স্পিডবোট সেবা দেয়া হবে।
উদ্বোধনের সময় ঘনিয়ে এলেও এখনো স্পিডবোট যাতায়াতে ভাড়া চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিএ-সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে সংস্থার নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক বলেন, আমরা এখনো ভাড়া চূড়ান্ত করতে পারিনি। আগে আমাদের ভাড়া ছিল প্রতি কিলোমিটার ১২ টাকা। এটা জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার অনেক আগের ভাড়া। নতুন সূচিতে ভাড়ার পরিমাণ আরো বাড়বে। তবে স্পিডবোটের ভাড়া তুলনামূলকভাবে বেশি হবে।
মেসার্স ইনফিনিটি মেরিটাইম নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রাজধানীর বৃত্তাকার নৌপথে বিনিয়োগ নিয়ে আসছে। মোট ১৭টি স্পিডবোট নিয়ে তাদের যাত্রা হবে। মাওয়া রুটের আরো অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও রাজধানীর বৃত্তাকার নৌপথে বিনিয়োগে আসবে বলে প্রত্যাশা বিআইডব্লিউটিএ-সংশ্লিষ্টদের।
রাজধানীর বৃত্তাকার নৌরুটে বেসরকারি বিনিয়োগের পরামর্শ বহুদিন থেকেই দিয়ে আসছেন নদী গবেষকরা। রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের (আরডিআরসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মাদ এজাজ বলেন, আমরা শুরু থেকেই বলে আসছিলাম ঢাকার বৃত্তাকার নৌপথ থেকে কার্যকর ফল পেতে হলে এখানে বেসরকারি বিনিয়োগ দরকার। এ নিয়ে পরপর তিনবার সরকারি উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে। কোটি কোটি টাকা নষ্ট হয়েছে। অবশেষে বেসরকারি বিনিয়োগ আসছে শুনে আশার আলো দেখছি। এটি অবশ্যই ভালো উদ্যোগ। বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকে যত ধরনের সুবিধা দেয়া দরকার সব নিশ্চিত করে হলেও পথটি সচল রাখা জরুরি।
বেসরকারি উদ্যোগ যেন ব্যর্থ না হয়, এজন্য টঙ্গী খালের অংশ পরিষ্কারের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, টঙ্গী খালে ব্যাপক পলিথিন ও বর্জ্য রয়েছে। এ অবস্থায় থাকলে এ পথে স্পিডবোট চলাচল প্রায় সম্ভব। এখানে ট্রলার চলতেই কষ্ট হয়ে যায়। বিআইডব্লিউটিএকে অবশ্যই এ বিষয়ে নজর দিতে হবে। এছাড়া স্পিডবোটের ভাড়া যাত্রীসাধারণের নাগালের মধ্যে থাকা উচিত।
রাজধানীর বৃত্তাকার নৌপথে বড় সমস্যা ছিল নিচু ব্রিজ। তবে স্পিডবোটে যাতায়াতের ক্ষেত্রে নিচু ব্রিজ তেমন একটা সমস্যা হবে না বলে জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তারা। এছাড়া আগে ওয়াটার বাস প্রকল্প ব্যর্থ হওয়ার পেছনে অনেকটাই দায়ী করা হয়েছে পরিবহনের ধীরগতিকে। এবার স্পিডবোটে দ্রুত যাত্রী পরিবহনের সুবিধা থাকায় এ পথে কাঙ্ক্ষিত জনপ্রিয়তা পাওয়া যাবে বলে প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।
বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক এ বিষয়ে বলেন, বৃত্তাকার নৌপথে সরকারি উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ার পর বেসরকারি বিনিয়োগ আসছে। মাওয়া ঘাটের বন্ধ বোটগুলো এখানে চলাচলের আবেদন করেছে আমাদের কাছে। আমরা ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। আশা করছি যাত্রীসেবায় ভালো কিছু আসছে। সূত্র: বণিক বার্তা