নিউজ ডেষ্ক- কথায় কথায় অভিশাপ দেওয়া জঘন্য অপরাধ। অথচ কিছু মানুষ পান থেকে চুন খসলেই নিজের আদরের সন্তানকে পর্যন্ত অভিশাপ দিয়ে বসে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। কারণ কখনো কখনো সত্যি সত্যিই মানুষের অভিশাপ কার্যকর হয়ে যায়। তখন আফসোস করা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে ওই অভিশপ্ত ব্যক্তি বা বস্তুর কারণে আশপাশের লোকেরও আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ জন্য একবার এক বালিকা তার উটনীকে অভিশাপ দিলে মহানবী (সা.) সেই উটনীকে কাফেলা থেকে বের করে দেন। তিনি বলেন, ‘যে উটনীর ওপর অভিসম্পাত করা হয়েছে, সেটি যেন আমাদের সঙ্গে না থাকে। ’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৫০০)
অভিশাপ দেওয়া কিছু মানুষের অভ্যাসে পরিণত হয়। বিশেষ করে গ্রামের ঝগড়াঝাঁটিতে অভিশাপের মিসাইল আদান-প্রদান বেশি দেখা যায়। অভিশাপের শব্দ হিসেবে, ‘লানত’, ‘গজব’ ইত্যাদি বেশি ব্যবহৃত হয়। অথচ রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা পরস্পর পরস্পরকে আল্লাহ তাআলার অভিসম্পাত, তাঁর গজব ও জাহান্নামের বদদোয়া কোরো না। (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৭৬)
এ জন্য কখনো মানুষ কিংবা কোনো কিছুকে অভিশাপ দেওয়াই উচিত নয়। আর অভিশাপ কখনো কখনো ঘুরেফিরে অভিশাপকারীর ওপর এসে পড়ে। বিশেষ করে কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি, অবলা প্রাণী বা কোনো বস্তুকে অভিশাপ দিলে তা নিজের ওপরই পড়ার আশঙ্কা বেশি। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু দারদা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, যখন কোনো বান্দা কোনো বস্তুকে অভিশাপ দেয়, তখন ওই অভিশাপ আকাশের দিকে অগ্রসর হয়। অতঃপর সেই অভিশাপের আকাশে ওঠার পথকে বন্ধ করে দেওয়া হয়। তখন তা আবার দুনিয়ায় প্রত্যাবর্তনের জন্য রওনা হয়; কিন্তু দুনিয়ায় আসার পথও বন্ধ করে দেওয়ায় সে ডানে-বাঁয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। অবশেষে অন্য কোনো পথ না পেয়ে যাকে অভিশাপ দেওয়া হয়েছে, তার কাছে ফিরে আসে। তখন সেই বস্তু যদি অভিশাপের যোগ্য হয়, তাহলে তার ওপর ওই অভিশাপ পতিত হয়, অন্যথায় অভিশাপকারীর ওপরই তা পতিত হয়। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯০৫)
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি বাতাসকে অভিশাপ দিল। মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছে, মহানবী (সা.)-এর যুগে এক ব্যক্তির চাদর বাতাসে ওলটপালট হয়ে গেলে সে বাতাসকে অভিশাপ দিল। নবী (সা.) বললেন, ‘তুমি বাতাসকে লানত কোরো না, কেননা সে নির্দেশপ্রাপ্ত। যা অভিশাপযোগ্য নয় কেউ তাকে অভিশাপ দিলে তা অভিশাপকারীর ওপরই পতিত হয়। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯০৮)
তাই কারো ওপর রাগ হলেই তাকে অভিশাপ দিতে নেই; বরং তার হিদায়াতের দোয়া করাই বেশি কল্যাণকর। প্রত্যেক মানুষই আল্লাহর মাখলুক, তাই অহেতুক দয়াময় আল্লাহর কাছে তাঁর অন্য মাখলুকের ধ্বংস কামনা করা মহান আল্লাহ পছন্দ করেন না। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এ ধরনের কাজ থেকে হেফাজত করুন। আমিন।