নিউজ ডেষ্ক- সরকার পুলিশ দিয়ে আন্দোলন দমনোর পায়তারা করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকার পুলিশ দিয়ে গুলিবর্ষন করে জানান দিয়ে দিয়েছে যে, তারা নির্যাতন করে আন্দোলনকে দমন করতে চায়। কিন্তু ভোলার মানষের রক্তের মধ্য দিয়ে এটা প্রমাণিত হয়েছে, এদেশের মানুষ কখনো ফ্যাসিবাদী সরকার, আওয়ামী লীগ সরকারের দমননীতিকে মেনে নেবে না।
সোমবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আবদুর রহিমের স্মরণে গায়েবানা জানাজা হয়। সেখানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন।
রোববার ভোলা সদর উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে গুলিতে স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য আব্দুর রহিম নিহত হন। বিদ্যুতের লোডশেডিং ও জ্বালানি খাতে অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে বিএনপির ডাকা বিক্ষোভ সমাবেশে এ সংঘর্ষ হয়।
বিএনপি এই ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার সারাদেশে গায়েবানা জানাজার কর্মসূচি পালন করেছে। এছাড়াও আজ ঢাকাসহ সারাদেশে জেলা পর্যায়ে বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি রয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশকে মুক্তি করার জন্য, দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য জীবন দিয়ে হলেও, রক্ত দিয়ে হলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবো। আমরা আবদুর রহিমের রক্তকে বৃথা যেতে দিতে পারি না। তাই এই শোককে শক্তিতে রুপান্তরিত করতে হবে। তার এই আত্মাত্যাগকে ধারণ করে সামনে দিকে এগিয়ে আরো গতিশীল হয়ে, আরো দূর্বার হয়ে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারকে পরাজিত করতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, পুলিশের গুলিতে আমার ভাইদের রক্ত ঝরেছে। ভোলায় শান্তিপূর্ণ সমাবেশে পুলিশ গুলিবর্ষন করেছে। সেখানে স্বেচ্ছাসেবক দলের ভাই আবদুর রহিমকে হত্যা করেছে। এতে আহত হয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতা এবিএম মোশাররফ হোসেনসহ এক’শ জনের উপর নেতা-কর্মীকে গুলিবর্ষন করে আহত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এটা ছিলো একটা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি। বিদ্যুতর দাবিতে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ছিলো। সেই সমাবেশে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের পুলিশ দিয়ে গুলিবর্ষন করা হয়েছে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, জনগন থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে আজকে গুম-খুন-হত্যার রাজনীতির মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে চায়, যেতে চায়। কিন্তু অব্যাহতভাবে থাকার আর কোনো সুযোগ নাই। দেশের মানুষ ঘুরে দাঁড়িয়েছে, ঘুরে দাঁড়াবে। এদেশের মানুষ অতীতে স্বৈরাচারমুক্ত করেছে, এবারো স্বৈরাচার মুক্ত করবে।
ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ভোলা একটি শান্তিপূর্ণ জেলা। কিন্তু রোববার বিনা উস্কানিতে পুলিশ নিরিহ শান্তিপূর্ণ কর্মীদের ওপরে আক্রমন চালিয়েছে। পার্টি অফিস থেকে বের হওয়া মাত্রই তারা অতর্কিত গুলিবর্ষন করেছে। এভাবে গুলিবর্ষন অনাকাঙ্খিত। এটি কেবলমাত্র নির্লজ্জ পেশীশক্তি প্রদর্শনের জন্য, জনতার কণ্ঠস্বরকে দাবিয়ে রাখার জন্য ন্যাক্কারজনকভাবে এই হামলা চালানো হয়েছে।
দলের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকাল সাড়ে ১১টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এই গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিএনপি মহানগর, স্বেচ্ছাসেবক দল, যুবদল, ছাত্রদল, কৃষক দলসহ অঙ্গসংগঠনের সহাস্রাধিক নেতা-কর্মী অংশ নেন। গায়েবানা জানাজায় আবদুর রহিমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এতে আরও অংশ নেন-বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, আতাউর রহমান ঢালী, কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, খায়রুল কবির খোকন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, আবদুস সালাম আজাদ, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কামরুজ্জামান রতন, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, হারুনুর রশীদ, আমিরুজ্জামান শিমুল, আকরামুল হাসান মিন্টু, মহানগর বিএনপির আমিনুল হক, রফিকুল আলম মজনু, হাবিবুর রশীদ হাবিব, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তাফিজুর রহমান, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, যুবদলের মোনায়েম মুন্না, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন প্রমুখ।
এছাড়াও নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, জাগপার খন্দকার লুৎফর রহমান, এনডিপির ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরানও গায়েবানা জানাজায় অংশ নেন।
গুরুতর আহত নুরে আলমকে দেখতে হাসপাতালে মির্জা ফখরুল: এদিকে নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গায়েবানা নামাজের জানাজা শেষে বিএনপি মহাসচিব ভোলা জেলা ছাত্রদলের সভাপতি গুরুতর আহত নুরে আলমকে দেখতে গ্রীণ রোডের কমফোর্ট হাসপাতালে যান। এ সময় চিকিৎসকের কাছে থেকে তার অবস্থার খোঁজ নেন বিএনপি মহাসচিব।
এ সময় মহাসচিবের সঙ্গে ছিলেন- নুরে আলমের বড় ভাই আবুল কাশেম, বিএনপি স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় নেতা হায়দার আলী লেনিন, ড্যাবের যুগ্ম মহাসচিব ডা. পারভেজ রেজা কাকন, ডা. শাহীনুল ইসলাম, ছাত্রদলের সাবেক নেতা কাজী মোক্তার হোসেন প্রমুখ।
রোববার ভোলা সদর উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হন নুরে আলম। তিনি এখন লাইফ সাপোর্টে আছেন বলে জানিয়েছেন সাবেক ছাত্রনেতা কাজী মোক্তার হোসেন।