নিউজ ডেষ্ক- ঘাস চাষ করেই কোটিপতি হয়েছে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার কিশোরগাড়ি ইউনিয়নের সুলতানপুর বাড়াইপাড়া গ্রামের আবদুল গফুর। সুখের আশায় পৈত্রিক জমি বিক্রি করে ২০০৩ সালে মেজো ছেলেকে বিদেশে পাঠানোর জন্য টাকা দিয়ে প্রতারিত হন। পরে প্রতিদিন কামলার ১৫০ টাকার আয়ে সংসার অচল হয়ে পড়ে। চিন্তা করেন অন্যকিছু করবেন! সেই থেকেই কপাল খুলেছে তাঁর।
শুরুতে ৫ শতাংশ জমিতে নেপিয়ার জাতের ঘাস চাষ শুরু করেন। এরপর ধীরে ধীরে জমির পরিমাণ বাড়াতে থাকেন। এখন ২০ বিঘা জমিতে নেপিয়ার ঘাস চাষ করছেন। এরমধ্যে ৮ বিঘা নিজের কেনা ও ১২ বিঘা ইজারা নেয়া। একবিঘা জমিতে উৎপাদন খরচ পড়ে প্রায় দশ হাজার টাকা। অপরদিকে প্রতিমাসে খরচ বাদে ঘাস বিক্রি করে তার এখন মাসিক আয় প্রায় ৯০ থেকে ১ লাখ টাকা।
বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি চাষের মাধ্যমে কৃষি উন্নয়নে উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য ২০১৪ সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কারে ভুষিত হন আবদুল গফুর। ওই সালের ১৩ ডিসেম্বর ঢাকাস্থ ওসমানি স্মৃতি মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে একটি সনদপত্র ও একটি রৌপ্যপদক পুরস্কার হিসেবে গ্রহণ করেন তিনি।
নেপিয়ার ঘাস চাষই বদলে দিয়েছে গরীব গফুরের জীবন। তাঁর পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া আড়াই বিঘা জমির মধ্যে দেড় বিঘা জমিতে ফসল ফলিয়ে ছয় সদস্যের সংসার ঠিকমত চলতো না। দারিদ্র্যের কাছে পরাজয় না মেনে অক্লান্ত পরিশ্রম করে অনেকের কাছেই এখন আদর্শ হয়ে উঠেছেন আব্দুল গফুর। উন্নত জাতের নেপিয়ার ঘাস চাষ করেেই তিনি এখন কোটি টাকার মালিক।
জানতে চাইলে বলেন, ২০০৪ সালের প্রথম দিকে পলাশবাড়ির হোটেলের মালিক দুলু মিয়ার কাছ থেকে এই নেপিয়ার জাতের ঘাসের বহুমুখী ব্যবহারের কথা শুনে এই ঘাস চাষে উদ্বুদ্ধ হন আব্দুল গফুর। এরপর তিনি নেপিয়ার ঘাসের চারা সংগ্রহ করে প্রথমে তা নিজের বাড়ির পাঁচশতক জায়গায় লাগান।
চাষ বিষয়ে বলেন, একমাস পরপর তিনবছর পর্যন্ত কাটা যায় এই ঘাস। এর আগে পাবলিক সমিতি থেকে সাত হাজার টাকা ঋণ নিয়ে একটি ছোট গাভী কেনেন তিনি। গাভীটির একটি বাছুরও হয়। পরবর্তীতে সেই ঘাস বড় হলে গাভীকে খাওয়ানো শুরু করেন। ফলে গাভীর দুধ বাড়তে থাকে। আবার ঘাস বিক্রি করে ভালো টাকা পেতে শুরু করেন তিনি।
বর্তমানে তার খরের ঘরের বদলে বিশ শতক জমিতে ১০৫ হাত লম্বা আধাপাঁকা ঘর রয়েছে। এই ঘরেরই তিনটি কক্ষ গরুর খামার। বর্তমানে তার খামারে আছে ১৬টি ফ্রিজিয়ান জাতের গাভী। এসব গাভী দৈনিক দুধ দিচ্ছে ১২০ কেজি করে। ঘাসের জমিতে পানি সেচের জন্য দুইটি শ্যালোচালিত মেশিন আছে। এছাড়া ৫০টি হাঁস-মুরগি, পাঁচটি ছাগল রয়েছে তার।
বাড়িতে বিদ্যুৎ ছাড়াও রয়েছে- একটি সৌর বিদ্যুৎ, দুইটি মোটরসাইকেল ও তিনটি ভ্যান। কর্মচারী রয়েছে তিনজন, তাদের প্রতিজনের মাসিক বেতন ৯ হাজার টাকা। তারা প্রতিদিন জমি থেকে ঘাস কেটে পলাশবাড়ী, ঢোলভাঙ্গা, ধাপেরহাট, মাঠেরহাট ও গাইবান্ধা শহরের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে।
আব্দুল গফুর বলেন, আমার স্বপ্ন ব্যাপকহারে এই ঘাস চাষ করে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিতি লাভ করা। যেন আরো অনেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে এই নেপিয়ার ঘাস চাষ করে তাদের ভাগ্য বদলাতে পারে।
ঘাস চাষ বিষয়ে জানতে চাইলে গাইবান্ধা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আবদুল লতিফ এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, জেলায় সবচেয়ে বেশি ঘাস চাষ করছেন আবদুল গফুর। বাণিজ্যিকভাবে অনেক দিন ধরেই নেপিয়পার জাতের ঘাস চাষ করছেন। পুষ্টিগুণ সম্পন্ন এ ঘাস চাষ বেশ লাভজনক।