নীলফামারী: নীলফামারীর প্রত্যন্ত গ্রামে নিজস্ব পদ্ধতিতে কাজু বাদাম প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে। আর এখানে প্রক্রিয়াজাত করা বাদাম পাঠানো হচ্ছে আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে।
এতে এলাকার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি মিলছে বৈদিশিক মুদ্রাও।
শুরুটা ২০১৩ সালে। প্রথমে নীলফামারী জেলা শহরের একটি ছোট্ট ঘরে কাজু বাদাম প্রক্রিয়াজাত করা শুরু হয়। এরপর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কারখানাটি নেওয়া হয় নীলফামারী সদরের ইটাখোলা ইউনিয়নের চিনিকুটি নামক স্থানে। ২০২০ সালে জ্যাকপট ক্যাসু নাটস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ১০ বছরের চুক্তিতে জায়গা ভাড়া নিয়ে পুরোদমে শুরু করে প্রক্রিয়াজাতকরণ।
কাজু বাদাম আনার পর সিদ্ধ করা হয়। তারপর খোসা ছাড়ানো হয়। কয়েক ধাপে কাজু বাদাম প্রক্রিয়াজাত করে প্যাকেটজাত করা হয় এখানে। তারপর আমেরিকাসহ অন্যান্য দেশে পাঠানো হয়।
কারখানায় কর্মরত শ্রমিক খাদিজা (৪৫) জানান, প্রায় সাত বছর ধরে এ কারখানায় কাজ করছেন। আগে দিন হাজিরায় কাজ করলেও এখন প্রতিমাসে পাঁচ হাজার টাকার ওপরে পাচ্ছেন। তিনি নীলফামারী জেলা শহর থেকে প্রতিদিন যাতায়াত করেন।
বিউটি বেগম (৪৭) নামে আরেক শ্রমিক কাজু বাদামের খোসা ছাড়িয়ে প্রতি মাসে আট/নয় হাজার টাকা পাচ্ছেন।
কারখানার সুপারভাইজার এরশাদ আলী জানান, ঠিকমতো কারখানায় কাজ হলে প্রতিদিন ১৮০০ থেকে ১৯০০ কেজি কাজু বাদাম প্রক্রিয়াজত করা যায়। কাজু এমনিতে খুবই শক্ত। তাই নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সিদ্ধ করে খোসা ছাড়ানো হয়।
কারখানায় নতুন যোগদানকারী ম্যানেজার রাহাত জানান, কাজু প্রক্রিয়াজাতকরণ, প্যাকেজিং সব কিছুই এখানে করা হয়। ১০ কেজির দু’টি প্যাকেট ভরে প্রতিটি প্যাকেট করা। কেউ কেউ কারখানায়, কেউ বা বাড়িতে বসে কাজু বাদামের খোসা ছাড়ানোর কাজটি করেন।
জ্যাকপট ক্যাসু নাটস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইবনুল আরিফুজামান বলেন, আমাদের কারখানায় প্রতি মাসে ৪২ মেট্রিক টন কাঁচামাল (খোসাসহ বাদাম) প্রক্রিয়াজাত করে সাত মেট্রিক টন কাজু বাদাম উৎপাদন করা হয়। কাঁচামালের যোগান কম হওয়ায় এখানে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে না। স্থানীয় পদ্ধতিতে নারী শ্রমিকরা ওই প্রক্রিয়াজাত করার কাজটি করছেন। কারখানায় নিয়মিত ৭৫ জন শ্রমিক কাজ করেন। আমাদের কারখানায় উৎপাদিত কাজু বাদাম আমেরিকায় রপ্তানি হচ্ছে।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মোহাম্মদ ইউসুফ সম্প্রতি কারখানাটি পরিদর্শন করে বলেন, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে কাজু বাদামের চাষ হচ্ছে। ওই তিন জেলায় প্রতিবছর উৎপাদন হচ্ছে এক হাজার ৬০০ থেকে দুই হাজার মেট্রিক টন কাজু বাদাম। আমরা এর উৎপাদন বাড়াতে কৃষকদের উৎসাহিত করছি। আশা করি, আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে এর উৎপাদন চারগুণ বাড়বে।