৩৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে টমেটো

বাংলাদেশ breaking subled

নিউজ ডেষ্ক- ১০-১৫ দিন আগেও রাজধানীর কাঁচাবাজারে ৮০-১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতো টমেটো। এরপর দাম বেড়ে শুরুতে দাঁড়ায় ১২০ টাকা কেজি, তারপর ১৫০ টাকা। আর সেই টমেটো এখন বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩৫০ টাকায়।

সাধারণ ক্রেতারা বলছেন, এই দামে টমেটো কিনে বাসায় নিয়ে যাওয়া কোনো মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্তের পক্ষে সম্ভব নয়। ঈদের সময় দাম ৪০০ টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

আজ (মঙ্গলবার) রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজার, হাতিরপুল, শেওড়াপাড়া ও জিগাতলা কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, কোথাও পর্যাপ্ত টমেটোর সরবরাহ নেই। এছাড়া রাজধানীর বেশ কয়েকটি সুপার শপেও টমেটোর সংকট দেখা গেছে। যেসব সুপার শপে টমেটো বিক্রি হচ্ছে সেখানে দাম ৩০০ টাকা কেজি।

ক্রেতাদের অভিযোগ, বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম আকাশচুম্বী। মানুষ মাংসের সঙ্গে সালাদ খেতে পছন্দ করে। কিন্তু ঈদের আগে সালাদের অন্যতম অনুষঙ্গ টমেটোর দাম এখন ধরাছোয়াঁর বাইরে।

পশ্চিম রাজাবাজারের কাঁচাবাজারে বাজার করতে যাওয়া ক্রেতা মো. আজাদ বলেন, এটা কীভাবে সম্ভব? ১ কেজি টমেটো ৩০০ টাকা! আমি যখন প্রথমে বিক্রেতাকে জিজ্ঞাসা করি দাম কতো টমেটোর, তখন আমাকে ৩০০ টাকা বলার পর বিশ্বাস করতে পারিনি।

আরও দুইবার জিজ্ঞাসা করার পর একই দাম বলায় বিশ্বাস হয়েছে। ঈদ আসার আগেই ৩০০, ঈদের আগের দিন থেকে মনে হয় ৪০০ করে বিক্রি হবে। তখন মানুষ টমেটো বাদ দিয়ে বেশি করে শসা কিনতে চাইবে, তখন এটার দামও বাড়বে। ঈদে মনে হয় এবার আর সালাদ খাওয়া যাবে না।

খুচরা বিক্রেতারা যা বলছেনখুচরা বিক্রেতারা বলছেন তারা মোকামে গিয়ে টমেটো পাচ্ছেন না। রাজধানীর সবচেয়ে বড় সবজির বাজার কারওয়ান বাজারে টমেটো নেই আড়তগুলোতে। আর কিছু আড়তে টমেটো থাকলেও তা মান অনুযায়ী কেজি প্রতি পাইকারিতে ২৮০-৩০০ টাকা করে আনতে হয়েছে। পরে তা খুচরা বাজারে ৩০০-৩২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে।

হাতিরপুল কাঁচাবাজারে টমেটোর খুচরা বিক্রেতা মো. রব বলেন,পাইকারি বাজার থেকে এক পাল্লা (৫ কেজি) টমেটো ১৪০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। যা কেজি দরে ২৮০ টাকা করে পড়ে। কিন্তু তারপরও তো বাজারে টমেটো নেই। আগে যেখানে দোকানে ১৫-২০ কেজি টমেটো প্রতিদিন বিক্রি হতো, সেখানে মালই আছে ৫ কেজির মতো। পাইকারি বাজারে হাহাকার চলছে।

পাইকারি বাজারে কেন টমেটো নেই জানতে চাইলে জিগাতলা কাঁচাবাজারের খুচরা বিক্রেতা মো. সোনা মিয়া জানান, ভোর থেকে কারওয়ান বাজারের আড়তে গিয়ে টমেটোর জন্য বসেছিলেন। সারা সকাল বসে থাকার পরেও পেয়েছেন মাত্র এক পাল্লা টমেটো। কিন্তু তার দরকার ছিল ২০ কেজি।

সোনায় মিয়াও আড়তদারদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন কেন টমেটো নেই। আড়তদাররা তাকে জানিয়েছেন ভারত থেকে আমদানি বন্ধ থাকায় টমেটো নেই তাদের কাছে। ভাসমান সবজি বিক্রেতাদের ভ্যানও টমেটো শূন্য রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক এলাকা ও কাঁচাবাজারের সামনে ভ্যান গাড়িতে ভাসমান সবজি বিক্রেতাদের প্রায়ই দেখা যায়। তাদের কাছ থেকে ক্রেতারা বাজারের তুলনায় কিছুটা কম দামে সবজি কিনতে পারেন। তবে এসব ভ্যানও এখন টমেটো শূন্য।

রাজধানীর শুক্রাবাদ কাঁচাবাজারের সামনে ভাসমান সবজি বিক্রেতা আনোয়ার হোসেন বলেন, এক পাল্লা টমেটোর দাম ১৪০০ টাকা। আর আমি প্রতিদিন সকালে গাড়িতে মাল উঠাই ২ হাজার টাকার। আমরা কম টাকার পুঁজি দিয়ে ব্যবসা করি। এত দামের সবজি বিক্রির পুঁজি নেই আমাদের।

দাম বাড়ছে কেন টমেটোর টমেটোর দাম বাড়া ও যোগানের সংকট নিয়ে কারওয়ান বাজারের কয়েকটি আড়তের মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বছরের প্রথম ৫-৬ মাস দেশীয় টমেটোর মাধ্যমে বাজার ঠিক রাখা হয়। এরপর বাজারে আর দেশীয় টমেটো পাওয়া যায় না। তখন থেকে ভারতীয় টমেটোর ওপর নির্ভরশীল হয়ে যায় বাজার। দেশীয় টমেটোর সিজন আবার না আসা পর্যন্ত ভারতীয় টমেটো বাজার স্বাভাবিক রাখে। আর এখন ভারতের টমেটোর আমদানি বন্ধ থাকায় বাজার বেসামাল হয়ে পড়েছে।

কেন ভারতীয় টমেটোর আমদানি বন্ধ জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের অন্যতম বড় টমেটোর আড়ৎ জহির এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. জহির বলেন, ডলারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ভারত থেকে টমেটো আমদানি বন্ধ করে দিয়েছিল সরকার। ফলে ভারতীয় টমেটোনির্ভর বাজারে টমেটোর এই সংকট তৈরি হয়, মূল্যও বৃদ্ধি পায়। তবে আমদানি আবার শুরু হয়েছে, দাম কমে যাবে দ্রুত।

কবে নাগাদ কমতে পারে টমেটোর দাম আড়তদাররা বলছেন, আসন্ন ঈদের সপ্তাহে বাজারে টমেটোর দাম কমে যাবে কেজি প্রতি ১০০ টাকা করে। আমদানি করা টমেটো দেশে ঢুকতে শুরু করেছে। দ্রুত বাজার স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

এ বিষয়ে মো. জহির বলেন, আমদানি নিষেধাজ্ঞা উঠে গেছে। আজ রাতেই ১৪ ট্রাক টমেটো নামবে ভারত থেকে আমার আড়তের জন্য। প্রতি ট্রাকে প্রায় ১৪ হাজার কেজি করে টমেটো রয়েছে। আমার মতো অন্য আড়তদারও টমেটো নিয়ে আসছেন আজ রাত থেকে। আশা করা যায় ঈদের সপ্তাহে খুচরা বাজারে ২০০-২৫০ টাকা কেজি দরে টমেটো পাওয়া যাবে এবং যোগানও স্বাভাবিক থাকবে। এরপর আস্তে আস্তে বাজার আরও স্বাভাবিক হবে। সূত্র : ঢাকা পোস্ট

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *