নিউজ ডেষ্ক- বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার বেতাগা ইউনিয়নে ধনপোতা গ্রামের কৃষকরা সবজি চাষ করে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন। বর্তমানে মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া, শসা, বেগুন, করলাসহ হরেক রকম সবজির ক্ষেতে কাজে ব্যস্ত কৃষকরা। কেউ কেউ আবার সবজি তোলা, সেগুলো বাছাই করে বাজারে নিয়ে যেতেই ব্যস্ত। এই গ্রামের কৃষকদের সবজি চাষ দেখে আশেপাশের অনেক গ্রামের কৃষকরা সবজি চাষের প্রতি ঝুঁকছেন।
জানা যায়, ফকিরহাট উপজেলার বেতাগা ইউনিয়নের ধনপোতা, খরিবনিয়া, চাকুলি ও কুমারখালী বিল। এই চার বিলের ১৪০ হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া, শসা, বেগুন, করলা, তরমুজ, বাঙ্গিসহ নানা জাতের সবজি চাষ করে সফলতা পেয়েছেন স্থানীয় চার শতাধিক কৃষক। তার মধ্যে বেতাগা ইউনিয়নের ধনপোতা গ্রামে বছরে প্রায় ১২ হাজার টন সবজি উৎপাদন হয়। এইসব সবজি স্থানীয় বাজার হয়ে বিক্রি হচ্ছে রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলার হাট-বাজারে। িএখন থেকেই বছরে প্রায় ৫ কোটি টাকার সবজি বিক্রি হয়।
এখানকার কৃষকরা জানান, মাছের ঘেরের পাড়েও আমরা রাসায়নিক, কীটনাশক ও সার মুক্ত সবজি উৎপাদন করে থাকি।
ধনপোতা গ্রামের কৃষক জীবন পাল বলেন, আমাদের গ্রামের আশেপাশে চারটি বিল রয়েছে। আমরা সেই বিলে মাছ ও তার পাড়ে সবজির চাষ করি। এইসব সবজি উৎপাদনে আমরা কোনো রাসায়নিক, কীটনাশক ও সার ব্যবহার করি না। তাই এটাকে বিষ মুক্ত সবজিও বলা যায়।
তিনি আরো বলেন, আমি সবজির পাইাকারি ব্যবসা করি। পাশাপাশি আমার জমিতে উৎপাদিত সবজি ঢাকা, খুলনাসহ দেশেরে বিভিন্ন জেলার আড়তে বিক্রি করি। সব খরচ বাদ দিয়ে আমার আয় বছরে প্রায় ৩-৪ লাখ টাকা।
একই গ্রামের কৃষক বাসু দেব বলেন, আমরা রাসায়নিক কোনো কিছু ব্যবহারেরম মাধ্যমে সবজির উৎপাদন করি না। আমাদের জমিতে ভার্মি কমপোস্ট ও জৈব সার এবং কীটনাশকের বদলে নীম পাতার রস দিয়ে প্রাকৃতিক বালাইনাশক স্প্রে করি। এই পদ্ধতিতে চাষ করে ব্যাপক ফলন পাওয়া যায়। বিষমুক্ত সবজি হওয়ায় বাজারে আমাদের সবজির চাহিদাও বেশি।
কৃষক মকবুল শেখ বলেন, কৃষি বিভাগ আমাদের সবজি চাষের প্রশিক্ষণ দেয়। এছাড়া তারা নিয়মিত আমাদের সবজির চাষাবাদের খোজখবর নেন। কৃষি বিভাগ আমাদের উচ্চ ফলনশীল বীজ ও সবজি উৎপাদনের নান ধরনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আমাদের গ্রামের কেউ আর বেকার বসে নেই।
ফকিরহাট উপজেলা কৃষি অফিসার নাছরুল মিল্লাত বলেন, ধনপোতা গ্রামের কৃষকদের বিষমুক্ত সবজি চাষের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এর পাশাপাশি তাদের চাষ করার জন্য উচ্চ ফলনশীল বীজও সরবরাহ করা হচ্ছে। সুফল হিসেবে এই চার বিল থেকে প্রতি বছর উৎপাদিত হচ্ছে ১২ হাজার টন সবজি। যার বাজার মূল্য ৫ কোটি টাকা বা তারও বেশি।
ফকিরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনোয়ার হোসেন বলেন, এই উপজেলাকে কৃষিতে সমৃদ্ধ করতে কৃষি বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে। বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ ও সহযোগীতা করা হচ্ছে। আশা করছি ধনপোতা গ্রামের কৃষকদের দেখে অন্য কৃষকরাও বিষমুক্ত সমন্বিত কৃষিতে আগ্রহী হবেন।