নিউজ ডেষ্ক- তুরস্কে এক বছরের ব্যবধানে ১০ লাখ টন গম উৎপাদন বাড়তে পারে বলে সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) ফরেন এগ্রিকালচারাল সার্ভিস।
দেশটির কৃষি বিভাগ বলছে, ২০২২-২৩ মৌসুমে গম উৎপাদন বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ২০২২-২৩ মৌসুমে তুরস্কে ১ কোটি ৭০ লাখ টন গম উৎপাদন হতে পারে। এ পর্যন্ত তিন লাখ হেক্টর জমি গম আবাদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। আবহাওয়া পরিস্থিতির আরো উন্নতি হলে আবাদ বাড়তে পারে। বর্তমানে দেশটির কৃষকদের শস্য উৎপাদনে অনেক বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে।
ইউএসডিএ জানায়, টার্কিস লিরার বিনিময় মূল্য কমে যাওয়ায় সার ও জ্বালানি অনেক বেশি দামে আমদানি করতে হচ্ছে তুরস্ককে। এর বাইরে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের ঊর্ধ্বমুখী বাজারদর, সরবরাহ চেইনে জটিলতা ও ইউক্রেন যুদ্ধ দেশটির জন্য আরো বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় এগিয়ে এসেছে দেশটির সরকার। কৃষকদের সার ও ডিজেল কেনার জন্য অর্থ সহায়তা দেয়া হয়েছে। যদিও দেশটির কৃষকরা জ্বালানি ও সারের মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় এ সহায়তাকে অত্যন্ত কম বলে দাবি করেছেন। এ অবস্থায় অনেক কৃষক সারের ব্যবহার কমিয়ে দেয়ার কথা ভাবছেন। এমনটি ঘটলে উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
এদিকে বাংলাদেশে যে পরিমাণ গম উৎপাদন হয় তা দিয়ে দেশের চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। তাই বাড়তি গম বাইরের দেশ থেকে আমদানি করতে হয়। বিশেষ করে সবচেয়ে বেশি আমদানি হয় প্রতিবেশি দেশ ভারত থেকে। গত ৯ মাসে ভারত থেকে ১৩’শ কোটি টাকার গম আমদানি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ।
কয়েক মাসে ব্যাপক হারে গম আমদানি বেড়েছে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে। আমদানি বাড়ার কারণে প্রভাবকের ভূমিকা পালন করেছে ঊর্ধ্বমুখী চাহিদা। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় আমদানি বেড়েছে পাঁচ গুণ।
ভোমরা শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব শাখা থেকে জানা গেছে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে, অর্থাৎ জুলাই-মার্চ পর্যন্ত এ বন্দর দিয়ে গম আমদানি হয়েছে ৪ লাখ ৭১ হাজার ১৫০ টন। আমদানীকৃত এসব গমের মূল্য ১ হাজার ৩০৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ পর্যন্ত গম আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ৪৮৮ টন, যার মূল্য ২৮৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।
ভোমরা শুল্ক স্টেশনের দায়িত্বরত কাস্টমসের বিভাগীয় সহকারী কমিশনার আমীর মামুন জানান, কৃষিপণ্য হিসেবে গম আমদানি বেড়েছে ব্যাপক হারে। কিন্তু খাদ্যশস্যটি আমদানি করে সরকার কোনো রকম রাজস্ব আয় করতে পারে না।
ভোমরা স্থলবন্দরে কৃষিজাত পণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স সাব্বির এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. শাহিন হোসেন জানান, প্রতিদিন গড়ে ৩০-৩৫ ট্রাক গম আমদানি করছে তার প্রতিষ্ঠানটি, যা গত অর্থবছরের এ সময়ের তুলনায় চার থেকে পাঁচ গুণ বেশি। গত বছর প্রতিদিন ৮ থেকে ৯ ট্রাক গম আমদানি হয়েছিল। তিনি বলেন, দেশীয় বাজারে গমের চাহিদা বেশি থাকায় আমদানি বেড়েছে।
সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা বাজারের গম ভাঙানো মিল মুকন্দ ফ্লাওয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুকন্দ কুমার মজুমদার জানান, অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় চলতি বছর দেশে গমের চাহিদা ব্যাপক। তিনি বলেন, আমাদের দেশে যে পরিমাণ গম উৎপাদন হয়, তাতে চাহিদা মেটে না। ফলে ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে গম আমদানি করে চাহিদা মেটানো হয়।
তার মিলে সপ্তাহে গমের চাহিদা রয়েছে ১৫-২০ হাজার কেজি। তবে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত গমে চাহিদা মেটে না। ভারত থেকে আমদানীকৃত গম সংগ্রহ করে মিলের চাহিদা মেটান। তিনি বলেন, বর্তমানে গমের পাইকারি দর কেজিপ্রতি ৩১-৩২ টাকা।