হেক্টরে ৩২ টন, দেড় গুণ বেশি ফলন নতুন মরিচের

কৃষি ও প্রকৃতি breaking subled

নিউজ ডেষ্ক- প্রচলিত জাতের চেয়ে নতুন বিনা-২ মরিচের ফলন দেড় গুণ বেশি। উপযুক্ত পরিচযা পেলে এ জাতটি ২৯-৩২ টন/হে. ফলন (গ্রীণচিলি) দিতে সক্ষম। জাতটি স্থানীয় জাতের তুলনায় প্রায় ১০০-১২০% বেশি ফলন দেয়।

জাতের বৈশিষ্ট্যঃ উচ্চ ফলনশীল, প্রচলিত জাতের তুলনায় ফলন প্রায় ১.৫ গুণ বেশী। গাছ লম্বা, ঝোঁপালো এবং প্রচুর শাখা প্রশাখা বিশিষ্ট হয়।ফল কাঁচা অবস্থায় গাঢ় সবুজ এবং পাকা অবস্থায় আকর্ষনীয় লাল রংয়ের হয়ে থাকে। কাঁচা মরিচের ঝাল বেশি, ফল সুগন্ধিযুক্ত এবং ত্বক পুরু। প্রতি গাছে মরিচের সংখ্যা ১৫০-২০০ টি, ফলের দৈর্ঘ্য ১০-১৫ সে.মি. এবং প্রস্থ ৩-৪.৫ সে.মি.। কাঁচা মরিচ সংগ্রহের ৮-১০ দিন পযন্ত স্বাভাবিক অবস্থায় ব্যবহার উপযোগী। প্রথম মরিচ সংগ্রহের পর ফলের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। জীবনকাল ১৮০-২১০ দিন, ফলন ২৯-৩২ টন/হে.

জমি ও মাটিঃ বিনামরিচ-২ জাতটি চাষের জন্য জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ বেলে দো-আঁশ বা পলি দো-আঁশ মাটি চাষের জন্য উপযোগী। তবে স্বল্প মাত্রার অম্ল (পিএইচ ৬.০-৭.০) মাটিতে ফলন ভালো হয়।

জমি তৈরিঃ তিন থেকে চারটি গভীর চাষ ও জমিতে শেষ চাষের আগে মই দিয়ে আগাছা পরিস্কার করে জমি তৈরী করতে হবে। মাটির ঢেলা ভেঙে মাটি ঝুরঝুর ও সমতল করে নিতে হবে। জমি তৈরিতে শেষ চাষের আগে জৈব এবং রাসায়নিক সার (ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি এবং জিপসাম) প্রয়োগ করতে হবে।

এছাড়া পানি নিষ্কাশনের জন্য পাশাপাশি দুটো বেডের মাঝখানে ৫০ সেমি. প্রশস্ত এবং ১০ সেমি.গভীরতা বিশিষ্ট নালা রেখে ১ মিটার চওড়া এবং ১০-১৫ সেমি. উঁচু বেড তৈরি করতে হবে। pH এর মান ৫.৮-৬.৫ এর চাইতে কম হলে মাটি বেশি অম্লিয় হয়ে যায় ফলে মরিচের ফলন কমে যাবে। এক্ষেত্রে প্রতি শতাংশ জমিতে ১-২ কেজি হারে চুন মিশিয়ে মাটির অম্লতা দূর করতে হবে।

বপনের সময়ঃ বিনামরিচ-২ সারা বছর চাষ করা যায় তবে রবি মৌসুমে ফলন ভালো হয়। আশ্বিন মাসের শেষ সপ্তাহ হতে কার্তিক মাসের মাসের মাঝামাঝি (মধ্য অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ)পযন্ত বীজতলায় বীজ বপন করতে হবে। কার্তিক মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ হতে শেষ সপ্তাহ (অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে মধ্য নভেম্বর) পযন্ত একমাস বয়সী চারা লাগানোর উপযুক্ত সময়। তবে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ হতে মধ্য ডিসেম্বর পযন্ত চারা রোপণ করা যায়।

বীজ হারঃ বীজ হতে চারা তৈরী করে রোপন করলে প্রতি হেক্টরে ৫০০-৬০০ গ্রাম বীজ এবং বিঘাপ্রতি ৫০০০টি চারার প্রয়োজন হয়।চারা রোপনের ক্ষেত্রে ৩০-৩৫ দিন বয়সের সুস্থ চারা, সারি থেকে সারির দুরত্ব ৫০-৫৫সে.মি. ও চারা থেকে চারার দুরত্ব ৪০-৪৫সে.মি.হলে অধিক ফলন পাওয়া যায়।

বীজ শোধনঃ বপনের পূর্বে ছত্রানাশক দিয়ে বীজ শোধন করলে অংকুরোদগমের হার বৃদ্ধি পায় এবং স্বাস্থ্যবান চারা পাওয়া যায়।

ইউরিয়া ও পটাশ সার তিন কিস্তিতে (লাগানোর ১০-১৫ দিন ৪০-৫৫ দিন ও ৭০-৭৫ দিন পর) এবং অন্যান্য সার জমি চাষের সময় প্রয়োগ করতে হবে।

আন্তঃপরিচযা: জমিতে আগাছার পরিমাণের ওপর নির্ভর করে নিড়ানি দিতে হবে। মাটিতে অতিরিক্ত আর্দ্রতা মরিচ সহ্য করতে পারে না অন্যদিকে প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানির অভাবে গাছের ফুলঝড়েযেতে পারে।জমির আর্দ্রতার ও পর নির্ভর করে ৩/৪ টি সেচ দিতে হবে।ফুল আসার সময় এবং ফল বড় হওয়ার সময় জমিতে পরিমাণ মতো আর্দ্রতা রাখতে হবে।সেচের পর মাটিতে চটা বাঁধলে নিড়ানি দিয়ে ভেঙে মাটি ঝুরঝুরে করে দিতে হবে তাতে শিকড় প্রয়োজনীয় বাতাস পায় এবংগাছের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়।

বালাই ব্যবস্থাপনাঃ বিনামরিচ-২ জাতটি দেশের বিভিন্ন মসলা উৎপাদনকারী অঞ্চলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। দীর্ঘ সময়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কোন কোন ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় ও রোগবালাই এর আক্রমণ দেখা যায়নি। চারা রোপনের পূর্বে ডিডি মিকচার বা ফুড়াডন-৫জি দ্বারা মাটি শোধন করে নিলে এ সকল রোগের প্রকোপ কমে যায়।

ড্যাম্পিং অফ/গোড়া পচা/মূল পচা: চারা অবস্থায় ছত্রাক দ্বারা এই রোগ ঘটে থাকে । বীজ বপনের পর পরই বীজ পচে যেতে পারে অথবা চারা মাটি থেকে উঠার পরে চারা গাছ ফ্যাকাশে, লিকলিকে ও দুর্বল হয়। কচি চারায় গোড়ায় পানিভেজা দাগ পড়ে ও চারা ঢলে পড়ে মারা যায়। এই রোগ দমন করতে হলে, মরিচ বীজ প্রোভেক্স অথবা রিডোমিল গোল্ড @ ২.৫ গ্রাম/কেজি বীজ দ্বারা শোধন করে বপন করতে হবে। আক্রান্ত অবস্থায় কুপ্রাভিট অথবা অটোস্টিন প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

ঢলে পড়া: মূল জমিতে চারা রোপণের পর মরিচ গাছের দৈহিক বৃদ্ধি অবস্থায় এই রোগ হতে পারে। প্রথমে গাছের নিচের দিকের কান্ডে আক্রমণ করে এবং গাঢ়বাদামি ক্যাংকার সৃষ্টি করে।ধীরেধীরে গাছের পাতা হলুদ হয়ে যায়।অনেক সময় মাটির উপরি ভাগবরাবর গাছের কান্ড কালো হয়ে ৮-১০দিনের মধ্যে সম্পূর্ণরূপে রোগাক্রান্ত গাছটি ঢলেপড়ে। প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম ছত্রাকনাশক অটোস্টিন মিশিয়ে আক্রান্ত গাছের গোড়ার দিকে এবং গোড়ার মাটিতে স্প্রে করতে হবে।

অ্যানথ্রাকনোজ/ ফল পচা:এই রোগ সাধারণত বয়স্ক গাছে অর্থাৎ পাতা, ফল ও কান্ডেহয়ে থাকে। এ রোগে আক্রান্ত হলে গাছের পাতা, কান্ড ও ফল ক্রমশ ফ্যাকাশে বর্ণ ধারণ করে। ফল ও কান্ডে গোলাকৃতির কালো দাগ দেখা যায়। ফলের গায়ে কালো বলয় বিশিষ্ট গাঢ় ক্ষতের সৃষ্টি হয় এবং ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়ে ফলকে পঁচিয়ে দেয়। আক্রান্ত ফল ঝরে পড়ে। এ রোগের লক্ষণ দেখা দেয়ার সাথে সাথে প্রতিলিটার পানিতে ছত্রাকনাশক টিল্ট২৫০ইসি @০.৫মি.লি.হারে মিশিয়ে ১০দিন পরপর ২-৩বার স্প্রে করতে হবে।

এফিড বা জাব পোকা: সাধারনত পাতার নিচের দিকে বসে রস চুষে খায় ফলে পাতা নিচের দিকে কুঁকড়ে যায়। আঠালো হলুদ/সাদা ফাঁদ ব্যবহার করে এদের নিয়ন্ত্রণ করা যায়।প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম ডিটারজেন্ট মিশিয়ে স্প্রে করে আক্রমণ কমানো সম্ভব। আক্রমণ বেশি হলে স্বল্পমেয়াদি বিষক্রিয়ার ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি অথবা কুইনালফস ২৫ ইসি বা ডাইমেথয়েট বা কারাতে ১০ লিটার পানিতে ১০ মিলি হারে বা ট্রেসার ১০ লিটার পানিতে ০.৪ মিলি হারে স্প্রে করে এদের নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

সাদা মাছি: সাধারণত কচি চারা গাছ আক্রমণ করে।ক্ষতিরধরন- কচি পাতার নিচে বসেরস শুষে খায় ফলে পাতা কুঁকড়ে যায়। আঠালো হলুদ/সাদাফাঁদ অথবা সাবন-পানি ব্যবহার করে এদের আক্রমণ কমানো সম্ভব। নিম বীজের নির্যাস (আধাভাঙ্গা ৫০গ্রাম নিম বীজ ১লিটার পানিতে ১২ঘণ্টা ভিজিয়ে মিশ্রণটি ছেঁকে নিয়ে) স্প্রে করা যেতে পারে।আক্রমণ বেশি হলে কীটনাশক এডমায়ার ২০০এসএল (১০লিটার পানিতে০.৫মিলিহারে) ভালোভাবে গাছ ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে।

মাইট বা মাকড়: আক্রান্ত অবস্থায় পাতার শিরার মধ্যকারএলাকা বাদামি রঙধারণ করে ও শুকিয়ে যায়।কচিপাতা মাকড় দ্বারা আক্রান্ড হলেপাতা নিচের দিকে মুঁড়ে গিয়ে স্বাভাবিকের চেয়ে নরম হয়ে যায়।আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে মাকড়নাশক ওমাইট৫৭ইসি (প্রতি ১০লিটা রপানিতে২.০মিলিহারে) বাভার্টিমেক ১৮ইসি প্রতি ১০লিটার পানিতে ১৫ মিলিহারে পাতা ভিজিয়ে স্প্রে করে মাকড়ের আক্রমণ প্রতিহত করা সম্ভব।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *