হাসপাতাল-ক্লিনিকের লাইসেন্স দেওয়ার নামে চলছে প্রতারণা

জাতীয়

নিউজ ডেষ্ক– বেসরকারি পর্যায়ে স্থাপিত হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংকের লাইসেন্স পাওয়া ও নবায়ন করিয়ে দেওয়ার নামে চলছে প্রতারণা। একশ্রেণির প্রতারক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তাদের নামে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে ফোন করে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকা পাঠাতে বলে। চাহিদামতো টাকা না পাঠালে ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিকে অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দেওয়ারও হুমিক দেওয়া হয়।

এর পাশাপাশি অধিদপ্তরের জেলা-উপজেলা পর্যায়ের কিছু কর্মচারী ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর জাল করে পরিদর্শন রিপোর্ট অধিদপ্তরে পাঠায়। টাকার বিনিময়ে এ ধরনের প্রতারণা করে লাইসেন্স নবায়ন করে তারা। সম্প্রতি এমন প্রতারকদের বিষয়ে সাবধান থাকতে অনুরোধ জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখা। এদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে রাজধানীর বনানী থানায় জিডিও করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখা দেশের সব বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক ও ব্লাড ব্যাংকের লাইসেন্স প্রদান ও নবায়ন করে থাকে। সারাদেশে প্রায় ১০ হাজার প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তাই বছরব্যাপী এই কার্যক্রম চলমান থাকে।

আগে এই কার্যক্রম সনাতন পদ্ধতিতে (কাগজে লিখে) হলেও বর্তমানে ডিজিটালি আবেদন করতে হয়। অনলাইনে নির্ধারিত ফরম পূরণ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল করলেই লাইসেন্স প্রদান বা নবায়ন করা হয়। এ ক্ষেত্রে নির্ধারিত ফি ছাড়া কোনো টাকা দিতে হয় না। কিন্তু জেলা বা উপজেলা পর্যায়ের অনেক ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষ অনলাইনে সঠিকভাবে কাগজপত্র দাখিল করতে পারে না। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তাদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিতেই গড়ে উঠেছে একশ্রেণির প্রতারকচক্র।

সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার মেডিক্যাল অফিসার দেওয়ান মো. মেহেদী হাসান রাজধানীর বনানী থানায় একটি জিডি করেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখা দেশের সব বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের নতুন লাইসেন্স প্রদান, লাইসেন্স নবায়ন, মনিটরিং, সুপারভিশন করে থাকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে কিছুদিন ধরে একটি চক্র ৫টি মোবাইল ফোন নম্বর ব্যবহার করে প্রতারণা করে আসছে। বেসরকারি হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদের নতুন লাইসেন্স প্রদান, লাইসেন্স নবায়ন ইত্যাদি বিষয়ে সহযোগিতার কথা বলে নগদ, বিকাশের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা দাবি করছে। চাহিদা অনুসারে টাকা না দিলে যে কোনো সময় অভিযান পরিচালনা করে হাসপাতাল-ক্লিনিক বন্ধ করার হুমকিও দিচ্ছে।

এ বিষয়ে ৪ জানুয়ারি অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) ডা. ফরিদ হোসেন মিঞা একটি সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি এসব তথ্য উল্লেখ করে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুষ্কৃতকারী চক্রের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনে জড়িত না হতে সতর্ক করেন।

এদিকে, সরকারি প্রতিষ্ঠানেও লাইসেন্স প্রদানকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে প্রতারকচক্র। সম্প্রতি চাঁদপুর জেলা সিভিল সার্জন অফিসের কিছু কর্মচারী-কর্মকর্তার স্বাক্ষর নকল করে স্থানীয় বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের লাইসন্সে নবায়নসংক্রান্ত পরিদর্শন ফরম অধিদপ্তরে পাঠিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে কর্তৃপক্ষের চোখ ফঁকি দিয়ে এ কাজ করেন তারা।

অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, স্বাক্ষর জাল করার বিষয়টি সম্প্রতি কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলা থেকে ১১টি বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালের লাইসেন্স নবায়ন পরিদর্শন ফরম অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রত্যেকটি ফরমে ‘লাইসেন্স নবায়নযোগ্য, নবায়নের জন্য সুপারিশ করছি’ লিখে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার স্বাক্ষর রয়েছে। একই সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জনের স্বাক্ষরও রয়েছে। এটি দেখেই তাদের সন্দেহ হয়। কারণ চাঁদপুরে রেগুলার সিভিল সার্জন দায়িত্বে রয়েছেন। এরপর চাঁদপুরে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেয়েছেন এই স্বাক্ষর তাদের নয়। এ ঘটনার সঙ্গে সিভিল সার্জন অফিসের একজন স্টাটিশিয়ান জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পাওয়া গেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই কর্মচারী দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের কাজের সঙ্গে জড়িত। দেশের আরও অনেক জেলা ও উপজেলায় এ ধরনের কর্মচারী রয়েছেন। যারা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রতিনিয়ত প্রতারণা করে আসছেন।

এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) ডা. ফরিদ হোসেন মিঞা বলেন, অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের নামে যারা প্রতারণা করছে, আমরা তাদের তথ্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে দিয়েছি। তবে এখনো তাদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া এ বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের স্টেকহোল্ডারদের জানানো হয়েছে, কেউ যেন প্রতারকদের ফাঁদে পা না দেয়।

চাঁদপুরের বিষয়ে তিনি বলেন, স্বাক্ষর জাল করা যে আবেদন এসেছে, সেগুলোর লাইসেন্স স্থগিত রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে সারাদেশের সিভিল সর্জনদের সতর্ক করা হয়েছে। যাতে এ বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়।

12
Shares
facebook sharing buttontwitter sharing button

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *