হাসপাতালে নেই চিকিৎসক, পিয়ন দেন মুখস্থ ওষুধ

বাংলাদেশ

সকাল ১১টা ১০। হাসপাতালের সামনে আগত রোগীদের ভিড়। চিকিসকের কক্ষ বন্ধ। অন্য একটি ভবনের একটি দরজা খোলা থাকলেও কেউ নেই। যে জানালা দিয়ে ওষুধ দেওয়া হয় তাও বন্ধ। পাশে দাঁড়িয়ে একজন বলছেন, ‘আজগোয় (আজ) আর অসুধ (ওষুধ) দেওয়া অইতো না, ডাক্তর নাই। ‘ এ কথার পরও অনেকেই অপেক্ষায় আছেন, যদি ডাক্তার আসেন।

এ রকম অবস্থায় কাছে গিয়ে জানা যায়, এখানে মেডিক্যাল অফিসার দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত। উপসহকারী মেডিক্যাল অফিসার থাকলেও তিনি প্রশিক্ষণে, আরেক পদ ফার্মাস্টিটও প্রেষণে উপজেলা সদরে। একমাত্র পিয়ন সাইফুলই সব। তিনি থাকলেও ২০ জনকে মুখস্থ ওষুধ দিয়ে ওই সময় তিনি আগত রোগীদের হাসপাতাল ত্যাগ করতে বলছেন।

এই রকম দৃশ্য আজ মঙ্গলবার ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারবাড়ী ইউনিয়ন হাসপাতালের।

আমেনা বেগম (৬৫), কুলসুম আক্তার (৩৫), কমলা বেগম (৪০), রেজিয়া (৪০) ও আব্দুর রহমান (৫০) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বিভিন্ন রোগের সমস্যা নিয়ে হাসপাতাল চত্বর ও বারান্দায় দাঁড়িয়ে চিকিৎসকের জন্য অপেক্ষা করেছেন। কিন্তু প্রায় দুই ঘণ্টা চলে গেলেও চিকিৎসক তো দূরের কথা হাসপাতালটি খুলতেও কেউ আসেননি।

উপজেলার তেলোয়ারি গ্রাম থেকে এসেছেন মোছাম্মৎ রোকেয়া বেগম। তাঁর শিশুসন্তানকে নিয়ে এসেছেন খোসপাঁচড়ার চিকিসা করাবেন বলে। কিন্তু হাসপাতাল খোলার জন্য অপেক্ষা করছেন। আঠারবাড়ী গ্রামের নুরুল ইসলামের স্ত্রী হালিমা (৩৭) তাঁর ভাতিজার আঙুল কাটার চিকিৎসা করানোর জন্য এসেছেন। কিন্তু এক ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কাউকে পাননি।

১২টা পর্যন্ত প্রায় ৬০ জন রোগীর উপস্থিতি পাওয়া যায়। প্রত্যেকেই কোনো না কোনো সমস্যা নিয়ে চিকিৎসক দেখাবেন বলে এসেছেন। কিন্তু পৌনে তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করার পরও হাসপাতালটি খোলা হয়নি। ১২টার পর এমএলএসএস সাইফুল ইসলামের খোঁজ মিললেও তিনি আগত রোগীদের কিছু প্যারাসিটেমল ও এন্টাসিড দিয়েছেন বলে জানান।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাইফুল জানান, উপসহকারী মেডিক্যাল অফিসার জেবুন্নেছা খানম তাঁকে কিছু ওষুধ দিয়ে গেছেন। তা তিনি ২০-২৫ জনকে দিয়েছেন। এরপর আর ছিল না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপসহকারী মেডিক্যাল অফিসার জেবুন্নেছা বলেন, ‘হাসপাতালে আমি আর সাইফুলই। এখন আমি যেহেতু নাই তাই সাইফুলই ওষুধ নিয়ে বসেন। তখন রোগীরাই ওষুধের নাম বলে নিয়ে যান। সাইফুলের কিছু করতে হয় না। ‘

ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুরুল হুদা জানান, উপসহকারী মেডিক্যাল অফিসার প্রশিক্ষণে তা তাঁর জানা নেই। তবে হাসপাতাল শূন্য থাকলেও পিয়ন ওষুধ দিতে পারেন না। এ বিষয়টি তিনি দেখবেন।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *