সেন্টমার্টিনের লাল পেঁয়াজ বিলুপ্তির পথে!

কৃষি ও প্রকৃতি

নিউজ ডেষ্ক-মাংস সহ প্রায় সকল রান্নায় ব্যবহার হয় পেঁয়াজ। এই পেঁয়াজ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে উৎপাদিত হয়। দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি থাকলে ভারত থেকেও আমদানি করা হয়। প্রতি বছর কোরবানির মাংসের সাথে রান্না করার জন্য কক্সবাজরের টেকনাফ-উখিয়ার মানুষ সেন্টমার্টিনের লাল পেঁয়াজ মজুত করে রাখতেন। এখন সেই লাল পেঁয়াজ আর দেখা যাচ্ছেনা। অল্প কিছু পাওয়া গেলেও দাম আকাশচুম্বি।

হারিয়ে যাওয়া সেই লাল পেঁয়াজের ব্যাপারে সেন্টমার্টিন দ্বীপের স্থানীয় লোকজন বলেন, যত্রতত্র আবাসিক হোটেল ও খাবার হোটেল সহ অন্যান্য অবকাঠামো গড়ে উঠায় চাষের জমি কমে গেছে। ফলে চাষ কম হচ্ছে।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ খান বলেন, আগে এই দ্বীপে ৮৬১ একর জমিতে চাষাবাদ করা হতো। ৮৬১ একরের মধ্যে ৫০০ একর ধান, ৯০ একর তরমুজ, মরিচ, টমেটো এবং ১০ একরের মধ্যে লাল পেঁয়াজের চাষ হতো। গত ২ দশকে চাষাবাদের সেই ৮৬১ একর জমি কমেছে প্রায় ৭০ শতাংশ। এখন লাল পেঁয়াজের চাষ হচ্ছে মাত্র ২০ শতক জমিতে। চাষাবাদের প্রায় ৫৬০ একর জমি বিক্রি হয়ে গেছে। সেখানে গড়ে উঠেছে নতুন নতুন হোটেল-রিসোর্ট।

ফিরোজ আহমদ আরো বলেন, প্রায় ১ দশক আগে সেন্টমার্টিনে লাল পেঁয়াজ বিক্রি হতো ৩০ টাকা কেজি। উপহার হিসেবেও এই লাল পেঁয়াজ ব্যবহার হতো। সেন্টমার্টিনে আসা ভ্রমনকারীরাও লাল পেঁয়াজ কিনে নিয়ে যেতেন। এখন আর লাল পেঁয়াজ দেখা যায় না। যদিও কোথাও পাওয়া যায় দাম ২০০-৩০০ টাকা কেজি চান বিক্রেতারা।

দ্বীপের অধিবাসিরা জানান, কয়েক বছর আগেও প্রায় দেড় একর জমিতে লাল পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। এখন সেখানে তৈরি হয়েছে অনেকগুলো কটেজ।

এক কটেজ মালিক বলেন, চাষিরা পেঁয়াজ চাষে লাভ করতে পারছেন না। পর্যটক বৃদ্ধি পাওয়ায় জমির মালিকরা হোটেল-রিসোর্ট বানিয়ে ব্যবসা করছেন।

পেঁয়াজ চাষি হাফেজ আহমদ, জামাল হোসেন, নূর আহমদ বলেন, অন্যের জমি ভাড়া নিয়ে পেঁয়াজ চাষ করতেন। এখন সেই জমিগুলোতে দোকান, হোটেল, রিসোর্ট হওয়ায় লাল পেঁয়াজের চাষ বন্ধ। এখন তারাও বেকার। সেন্টমার্টিন ছাড়া এই লাল পেঁয়াজ আর কোথাও চাষ হয় না বলে তারা জানান।
নূর আহমদ বলেন, অন্যান্য পেঁয়াজের তুলনায় লাল পেঁয়াজের ঝাঁজ ও স্বাদ বেশি। পর্যটন বিকাশের ফলে এই পেঁয়াজ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এখন লাল পেঁয়াজের জায়গা দখল করেছে উত্তরবঙ্গের ও ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ।

সেন্টমার্টিনের বর্তমান চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, চাষাবাদের জমিতে হোটেল-রিসোর্ট তৈরি হওয়ায় পেঁয়াজ চাষিরা এখন ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক(টমটম) চালাচ্ছেন। জীবন ধারনের জন্য বিকল্প ভাবতেই হচ্ছে চাষিদের।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *