নিউজ ডেষ্ক- চারদিকে সুউচ্চ পাহাড়, সবুজ বনায়ণ আর স্বচ্ছ নীলাভ জলরাশির সুবিশাল কাপ্তাই হ্রদ পুরো রাঙামাটি জেলার বুকে ধারণ করে আছে। পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে সৃষ্ট চোখ ধাঁধানো পাহাড়ি ঝরণা।
দেশের ষড় ঋতুতেই যেন একেক রূপের সৌন্দর্য দেখা মেলে এখানে। যার পরতে পরতে প্রকৃতি তার আপন সৌন্দর্যের মহিমায় উঁকি দিয়ে পর্যটকদের কাছে টানে। প্রকৃতির এমনই অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি হচ্ছে জেলার বরকল উপজেলার শিলার ডাক এলাকায় অবস্থিত ‘সুবলং ঝরণা’। স্থানীয়দের কাছে এটি ‘শিলার ডাক ঝরণা’ নামে পরিচিতি।
শিলার ডাক হচ্ছে বরকল উপজেলার সবচেয়ে বড় ঝরণা। ভরা বর্ষা মৌসুমে মূল ঝর্ণার জলধারা প্রায় ৩০০ ফুট উঁচু থেকে নিচে আছড়ে পড়ে এবং অপূর্ব সুরের মূর্ছনায় পর্যটকদের সযতনে কাছে টানে।
জেলায় পাহাড়ে ছোট-বড় অসংখ্য ঝরণা থাকলেওে কাপ্তাই হ্রদ ঘেঁষে ঝরণাটি গড়ে উঠায় পর্যটকরা এখানে বেশি আকৃষ্ট হন। কাপ্তাই হ্রদ পরিভ্রমণের সময় ঝরণাটির সৌন্দর্য দেখতে একবারের জন্য হলেও ছুটে আসেন এখানে। ঝরণার বিষয়টি এমন হয়ে উঠেছে যে হ্রদ ভ্রমণে এসে যদি কেউ এখানে গাঁ ভিজিয়ে না যান তাহলে যেন তার ভ্রমণটা পুরোই বৃথা।
পর্যটকদের ঝর্ণার সৌন্দর্য উপভোগ করতে বরকল উপজেলা প্রশাসন ওই স্থানে গড়ে তুলেছে নানা রকম সৌন্দর্যমণ্ডিত স্থাপনা এবং ফুলের বাগান। এসব অবকাঠামো উন্নয়ন ঝরণার সৌন্দর্যকে আরও বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
রাঙামাটি সদর থেকে সুবলং ঝরণার দুরত্ব মাত্র ২৫ কিলোমিটার। বোটযোগে কাপ্তাই হ্রদ মাড়িয়ে তবেই সেই কাঙ্খিত ঝর্ণায় পৌছাতে হয়। যাত্রাযোগে হ্রদের অপার সৌন্দর্য শান্তির পরশ বিলিয়ে দেয় পর্যটকদের।
ঢাকা থেকে আসা পর্যটক লিমা আক্তার বলেন, অনেক ভালো লাগছে সুবলং ঝরণা দেখে। তবে ঝরণাটির আশেপাশে যদি নারীদের কাপড় বদলানোর ব্যবস্থা রাখা যেত তাহলে নারীরা স্বাচ্ছন্দে অনেক আনন্দ করতে পারতেন।
সুপ্রিম কোর্টে কর্মরত মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, পর্যটন স্পটগুলোতে ব্যবস্থাপনার উন্নতি, খাবার মান বৃদ্ধি এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা গেলে এ জেলায় পর্যটকের সংখ্যা আরও বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে।
রাঙামাটি রিজার্ভ পুলিশের আবাসিক পরিদর্শক (আরআই) মো. শাহ আলম বাংলানিউজকে বলেন, সুবলং ঝর্ণায় আগত পর্যটকদের নিরাপত্তা দিচ্ছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। শুধু সুবলং ঝরণা নয়, জেলার গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটকদের নিরাপত্তায় কাজ করছে পুলিশের চৌকস দল।
তিনি আরও বলেন, অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি রাঙামাটি কিন্তু বিদেশের অনেক স্থানের প্রকৃতির চেয়েও অনেক সুন্দর। তাই বিদেশ ভ্রমণ না করে রাঙামাটিতে ভ্রমণে আসার জন্য পর্যটকদের আহ্বান জানান তিনি।
ভুঁড়িভোজন: বোটযোগে কাপ্তাই হ্রদ এবং সুবলং ঝরণা পরিভ্রমণ শেষে নিশ্চিই পেট ক্ষুধায় কাতুমাতু করবে। তাই ক্ষুধা এবং জিহ্বার স্বাদ মেটাতে চাইলে হ্রদের পাড় ঘেঁষে পাহাড়ি টিলায় গড়ে উঠেছে মুখরোচক ভিন্নরকম বাহারি রকমের পাহাড়ি খাবার। যেমন- পেদাটিং টিং, টুকটুকি ইকোভিলেজসহ অসংখ্য রেন্টুরেন্ট। সেখানে পাবেন- বেম্বো চিকেন, সিদ্ধ শাক, মরিচ ভর্তা, হ্রদের তরতাজা চাপিলা ফ্রাই, কেঁচকি মাছ, বাঁশকোড়ল, কাঁকড়া, বনমোরগ, পাহাড়ি চালের ভাতসহ অসংখ্য সুস্বাদু স্থানীয় খাবার। স্বাদ এবং সাধ্যের মধ্যে অর্ডার করে ভুঁড়িভোজন এবং রসনা বিলাসের স্বাদ মিটিয়ে নিতে পারবেন।
যেভাবে যাবেন: রাজধানী থেকে রাঙামাটিতে আসতে চাইলে ঢাকার সায়দ্যাবাদ, কমলাপুর, ফকিরাপুল, গাবতলী, যাত্রাবাড়ি থেকে রাঙামাটিগামী এসি-ননএসি বাসে সরাসরি রাঙামাটি জেলায় চলে আসা যাবে। এরপর রাঙামাটি শহরে নেমে কিছুক্ষণ বিশ্রাম করে শহরের পর্যটন, রির্জাভবাজার, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এবং রাঙামাটি ফিসারি ঘাট এলাকা থেকে নৌকা বোট কিংবা স্পিটবোটে করে সুবলং ঝরণায় যাওয়া যাবে।