নিউজ ডেষ্ক- টাঙ্গাইল উপজেলার বহুরিয়া ইউনিয়নের কালমেঘা গ্রামের সলিম উদ্দিনের ছেলে বেলায়েত হোসেন জীবিকার তাগিদে গিয়েছিলেন সিঙ্গাপুর। দেশে ফিরে শুরু করেছেন পাঙ্গাস মাছ চাষ। এখন পাঙ্গাস চাষে কোটিপতি হয়েছেন। ২০২১ সালে তিনি প্রায় পাঁচ কোটি টাকার মাছ বিক্রি করেছেন। খরচ বাদে সে বছর প্রায় কোটি টাকা আয় করেন তিনি।
বেলায়েত হোসেন ২০২১ সালে টাঙ্গাইল জেলার সেরা মৎস্যচাষি ও সফল উদ্যোক্তা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার প্রতিযোগিতার জন্য তাঁর নাম মৎস্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। তাঁর নিজ গ্রাম ও আশপাশের কয়েকটি গ্রামের ৪০ একর জমিতে ১২টি পুকুরে তিনি পাঙাশসহ দেশি জাতের মাছ চাষ করেন।
বেলায়েত হোসেন জানান, ১৯৯৩ সালে তিনি এসএসসি পাস করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি জীবিকার সন্ধানে সিঙ্গাপুরে যান। ১৩ বছর প্রবাসজীবন কাটিয়ে কয়েক লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে ২০০৯ সালে দেশে ফেরেন তিনি। গ্রামের কয়েকটি পুকুর ইজারা নিয়ে শুরু করেন মাছ চাষ। স্থানীয় মৎস্য কার্যালয় থেকে মাছ চাষের পরামর্শ নেন তিনি। পরে পাঙাশের পোনা সংগ্রহ করে প্রথমে ছোট পাঁচটি পুকুরে মাছ চাষ শুরু করেন বেলায়েত। প্রথম বছরেই প্রত্যাশার চেয়ে বেশি লাভ হয়। তাই সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ান পুকুরের সংখ্যা। এরপর তাঁকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘বিদেশে অনেক কষ্ট করে পয়সা কামাতে হয়। দেশে বসে পরিশ্রম করলে অনেক সফল হওয়া যায়। পাঙাশ হচ্ছে গরিবের মাছ। বাজারে দাম কম। চাষ করাও সহজ। তবে মাছের খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন তেমন লাভ হচ্ছে না। তবে মাছ চাষের শুরুটা ছিল কঠিন। মনের ভেতর প্রচণ্ড সাহস আর আত্মবিশ্বাস কাজে লাগিয়ে দ্রুত সফলতা পেয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, দেশের শিক্ষিত বেকার যুবকদের সরকারিভাবে সহায়তা করে মাছ চাষে আগ্রহী করে তোলা উচিত। এতে দেশের বেকার সমস্যা কমার পাশাপাশি উন্নত হবে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার।’
পাঙাশ চাষ করে আরও অনেক যুবক সফলতা পেয়েছেন জানিয়ে বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘বেকার অনেক ছেলে আমার কাছে আসছে। তাদের সঠিক পরামর্শ দিয়ে মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ করেছি। অনেক যুবক এরই মধ্যে মাছ চাষে সফলতা পেয়েছে।’ তিনি জানান, আগে পাঙাশের পোনা জেলার বিভিন্ন হ্যাচারিতে পাওয়া যেত। তবে বর্তমানে বগুড়া ও সান্তাহার থেকে আনতে হয়। দুই বছর ধরে করোনার কারণে পাঙ্গাস দেশের বাইরে পাঠানো যাচ্ছে না। খাদ্যের দামও বেড়েছে। এ কারণে অনেক মৎস্যচাষি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
সখীপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সমীরণ কুমার সাহা বলেন, বেলায়েত একজন সফল মৎস্যচাষি ও সফল উদ্যোক্তা। তাঁকে দেখে অনেকেই মৎস্যচাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। ২০২১ সালে বেলায়েত জেলার সেরা মৎস্যচাষি নির্বাচিত হয়েছেন। জেলা প্রশাসক ও জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ এমদাদুল হক গত সপ্তাহে বেলায়েতের কয়েকটি পুকুর সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন।
উল্লেখ্য, চাষকৃত মাছ উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। শুধু তা-ই নয়, কয়েক বছর ধরে অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ের মৎস্য আহরণে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। এসব মাছের মধ্যে কার্পজাতীয় মাছ বেশি উৎপাদন করা হয়। দেশের প্রেক্ষাপটে কমদামী ও সুস্বাদু মাছের তালিকায় রয়েছে সিলভার কার্প, তেলাপিয়া ও পাঙ্গাস।