নিউজ ডেষ্ক- ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে নিজের গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করা ব্যবসায়ী গাজী আনিস (৫০) তার ফেসবুক আইডিতে সর্বশেষ স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন গত ৩১ মে। সেখানে হেনোলাক্স গ্রুপে তার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা এবং এক পর্যায়ে এসে লভ্যাংশ থেকে ‘বঞ্চিত’ হওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কোম্পানির লোকজন তাকে হেনস্থা ও ব্ল্যাকমেইল করেছেন বলেও স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেছেন তিনি। দৈনিক আমাদের সময়ের পাঠকের জন্য আনিসের সেই স্ট্যাটাস নিচে তুলে ধরা হলো-
‘প্রিয় শুভাকাঙ্ক্ষী ভাই বোন বন্ধু। আমি মো. আনিসুর রহমান(গাজী আনিস)একজন কবিতা প্রেমিক মানুষ। নিজে হয়তো ভালো কবিতা লিখতে পারি না কিন্তু আমি ভীষণভাবে কবিতা ভালোবাসি।
আমি একজন ব্যবসায়ী এবং জীবনে প্রচুর রোজগার করেছি। আমার রোজগারের সবচেয়ে বড় অংশ স্থানীয় স্কুল মাদ্রাসা মসজিদ এবং অসহায় দুস্থ মানুষের জন্য উৎসর্গ করেছি সেইসঙ্গে নিজেও সুখী স্বাচ্ছন্দ্যময় এবং সৎ জীবন যাপন করেছি। আমি তিনটি কন্যা সন্তানের জনক। আমার বড় মেয়ে মেধা রহমান আঁচল এবার এইচএসসি পরীক্ষার্থী আগস্ট ২০২২ মেঝ মেয়ে প্রতিভা রহমান অহনা এসএসসি পরীক্ষার্থী জুন ২০২২ এবং ছোট মেয়ে জয়িতা রহমান অবনী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত।
২০১৬ সালে হেনোলাক্স গ্রুপের কর্ণধার মো. নুরুল আমিন এবং তার স্ত্রী ফাতেমা আমিনের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। ধীরে ধীরে তাদের সঙ্গে আমার সখ্যতা এবং আন্তরিকতা গড়ে উঠে। আমি কুষ্টিয়া জেলায় জন্মগ্রহণ করেছি এবং কুষ্টিয়া শহরেই বসবাস করি।
তবে প্রতিমাসেই নিজের প্রয়োজনে ঢাকা এলে তাদের সঙ্গে আমার সার্বক্ষণিক যোগাযোগ হতো এবং উপহার বিনিময় ও ভালো রেস্তোরাঁয় আমরা একসঙ্গে খাওয়া দাওয়া করতাম এবং বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যেতাম। যেহেতু আমি স্বচ্ছন্দ্য দিনযাপনে অভ্যস্ত এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী নিজস্ব গাড়িতেই সবসময় যাতায়াত করি। আমি মো. নুরুল আমিন এবং ফাতেমা আমিনের সঙ্গে নিজের খরচায় দেশের বাইরেও একাধিকবার বেড়াতে গিয়েছি।
২০১৮ সালে কলকাতা হোটেল বালাজীতে একই সঙ্গে অবস্থান কালে উনারা আমাকে হেনোলাক্স গ্রুপে বিনিয়োগের এবং যথেষ্ট লাভবান হওয়ার সুযোগ আছে বলে জানান। আমি প্রথমে অসন্মতি জ্ঞাপন করলেও পরবর্তী সময়ে রাজি হই এবং প্রাথমিকভাবে এককোটি টাকা বিনিয়োগ করি। পরবর্তী সময়ে তাদের পীড়াপীড়িতে আরও ২৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ করি(অধিকাংশ টাকা ঋণ হিসেবে আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধবের কাছ থেকে নেওয়া)। বিনিয়োগ করার সময় পরস্পরের প্রতি সম্মান এবং বিশ্বাসের কারণে এবং তাদের অনুরোধে চুড়ান্ত রেজিস্ট্রি চুক্তি করা হয়নি তবে প্রাথমিক চুক্তি করা হয়েছে। বিনিয়োগ পরবর্তী চুড়ান্ত রেজিস্ট্রি চুক্তিপত্র সম্পাদন করার জন্য বারবার অনুরোধ করি। কিন্তু উনারা গড়িমসি করতে থাকেন। এক পর্যায়ে উনারা প্রতিমাসে যে লভ্যাংশ প্রদান করতেন সেটাও বন্ধ করে দেন এবং কয়েকবার উনাদের লোকজন দ্বারা আমাকে হেনস্তা ব্ল্যাকমেইল করেন এবং করার চেষ্টা করেন। বর্তমানে লভ্যাংশ’সহ আমার ন্যায্য পাওনা তিন কোটি টাকার অধিক।
এ-বিষয়ে কুষ্টিয়া আমলি আদালতে আমি উনাদের আসামি করে দুটি মামলা দায়ের করেছি যা বিচারাধীন রয়েছে এবং গত ২৯/০৫/২০২২ তারিখ জাতীয় প্রেসক্লাব ঢাকায় সাংবাদিক সম্মেলন করি এবং যাবতীয় ডকুমেন্টস সম্মানিত সাংবাদিকদের নিকট উপস্থাপন করি। এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্যাদি তুহিন আহমেদ এবং রাজু হামিদ এর মাধ্যমে জানা যাবে।
ভীষণ মানসিক নিপট খরায় আমি উল্লেখিত তথ্যাদি উপস্থাপন করলাম। আমার সামনে বিকল্প পথ না থাকায় ফেসবুকেও সবাইকে জানালাম।
আমি এই প্রতারক দম্পতির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট অনুরোধ করছি। সেইসঙ্গে যারা আমার শুভাকাঙ্ক্ষী তারাও সোচ্চার হবেন বলে আশা করছি।’
উল্লেখ্য, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ মঙ্গলবার ভোর ৬টা ১০ মিনিটে মারা যান আনিস। আগের দিন বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নিজের গায়ে আগুন দেন তিনি