নিউজ ডেষ্ক- গুমের ঘটনায় জাতিসংঘের অধীনে বিএনপি স্বাধীন নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠন চায় বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা সরকার বিএনপি নেতাকর্মীদের গুম করে ভয় দেখিয়ে রাষ্ট্র চালাচ্ছে।
আজ মঙ্গলবার নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মানববন্ধনে আরো বক্তব্যে রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম প্রমুখ।
মানববন্ধনে সাধারণ নেতাকর্মীদের সাথে অংশ নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
মির্জা ফখরুল বলেন, শেখ হাসিনা সরকার বিএনপি নেতাকর্মীদের গুম করে ভয় দেখিয়ে রাষ্ট্র চালাচ্ছে। আমরা দাবি করছি, অবিলম্বে জাতিসংঘের অধীনে স্বাধীন নিরপেক্ষ তদন্ত হতে হবে। অন্যথায় যারা অতীতে গুম করেছে, খুন করেছে তাদের যেভাবে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে, আপনাদেরকে সেইভাবে বিচারের আওতায় আনা হবে।
তিনি বলেন, কিছুক্ষণ আগে গজারিয়াতে আমাদের ছেলেরা গুম দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠান করছিল সেখানেও পুলিশ তাদের ওপর আক্রমণ করেছে। সারা বাংলাদেশে ত্রাসের রাজ্যত্ব সৃষ্টি করেছে। ভয় দেখিয়ে গুম করে খুন করে রাষ্ট্র চালাচ্ছে। এরা এত মিথ্যাচার করে যে, এদের কে এখন মিথ্যাচারের ওপর একটা নোবেল পুরষ্কার দিতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, এখানে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের যিনি প্রধান তিনি কিছুদিন আগে সকলের সঙ্গে কথা বলেছেন। কথা বলার পর তিনি মন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছেন, মন্ত্রীদের তিনি বলেছেন এখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। প্রতিটি ইস্যু নিয়ে কথা বলেছেন এবং সেগুলোকে এড্রেস করতে বলেছেন। র্যাব যে এখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে সেই বিষয়েও কথা বলেছেন। পরে সবশেষে তিনি একটা সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সেই সংবাদ সম্মেলনে তিনি পরিষ্কার করে বলেছেন- বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে, এখানে গুম খুনের অভিযোগ আছে এবং গুম হচ্ছে। বলেছেন এই বিষয়গুলোর জন্য জাতিসংঘের অধীনে একটি স্বাধীন নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত। প্রয়োজনে জাতিসংঘ সমস্ত রকম সহযোগিতা সমর্থন দেবে। একটি কথা বলেছেন কেউ লক্ষ্য করেছেন কিনা আমি জানি না- তিনি বলেছেন বাংলাদেশের সেনাবাহিনী তারা জাতিসংঘের শান্তি মিশনে কাজ করেন। এই শান্তি মিশনে কাজ করে কোনো কর্মকর্তা মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত আছে কিনা তা দেখাও কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই সরকার অহেতুক উদ্বেগ প্রকাশ করার জন্য অভিযুক্ত একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে জাতিকে অপমান করে তিনদিনের একটি ভিসা প্রদান করে জাতিসংঘের প্রোগ্রামে নিয়ে গেছে। তারা প্রচার করছে- জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে কোনো অভিযোগ করেননি। যা ডাহা মিথ্যা কথা। আপনারা মানুষকে প্রতারণা করছেন। অবশ্যই জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান পরিষ্কার করে বলে গেছেন- মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে, খুন গুমের অভিযোগ আছে। তার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত। ’
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন গুম শব্দটি শুনিনি। যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছি তখন ৬০ দশকে শুনেছি ল্যাটিন আমেরিকায় এবং যে সমস্ত দেশে মধ্যযুগীয় কায়দায় শাসন চলছিল সেই সব দেশে গুম হয়ে মানুষ গুম হয়ে যেত। আমাদের স্বাধীনতা, গণতন্ত্রের জন্য ৭১ সালে আমরা যুদ্ধ করেছি। দুর্ভাগ্য আমাদের কি পরিহাস আজকে সেই দেশে আমাদের শিশু সন্তানদের আহাজারি শুনতে হচ্ছে- তারা তাদের বাবাদের ফিরে পেতে চায়। ভাইকে ফিরে চায়, মা তার সন্তানকে ফিরে চায়। আল্লাহ আরশ পর্যন্ত কেঁপে উঠছে।
দলের নেতাকর্মীদের আন্দোলনে জেগে উঠার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গুম হওয়া পরিবারের সন্তানদের মুখে হাসি ফোটাবার জন্য, তাদের স্বজনদের ফিরিয়ে আনতে আমাদের আরো ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। মানুষকে সঙ্গে নিয়ে দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আমাদের যে আন্দোলন হচ্ছে সরকার এখনেই ভয় পেয়ে গেছে। ভয় পেয়ে আবার তার লাঠিয়াল বাহিনী নামিয়ে দিয়েছে। কোনো লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে কাজ হবে না। মানুষ জেগে উঠছে। আজকে এই এই সরকার, আওয়ামী লীগের সরকার গত ১৫ বছর ধরে অধিকারগুলোকে কেড়ে নিয়েছে।
আসুন সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এমন আন্দোলন গড়ে তুলি যে আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে এই ভয়াবহ দুঃশাসন ফ্যাসিবাদ সরকারের পতন ঘটিয়ে সত্যিকার অর্থে একটা মানবতার সরকার, গণতন্ত্রের সরকার, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করি। ’
গুম হওয়া পরিবারের সদস্যদের উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তোমরা একা নও, তোমাদের সঙ্গে সারা বাংলাদেশের মানুষ আছে। তোমাদের জন্য সারা বাংলাদেশের মানুষ লড়াই করবে। ’