নিউজ ডেষ্ক- দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিষয়টাকে আড়াল করতে সরকার ‘জিডিপির শুভঙ্করের ফাঁকি দেখাচ্ছে’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় এই মন্তব্য করেন তিনি। মির্জা ফখরুল বলেন, দ্রব্যমূল্যের বিষয়ে মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে গেছে। সরকার সেটাকে সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করছে এবং তার মন্ত্রীরা হেসে হেসে বলে যে, আরে দাম যেমন বেড়েছে, আয়ও তো বেড়েছে।
প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, কার আয় বেড়েছে? এরা জিডিপির (জাতীয় প্রবৃদ্ধি হার) শুভঙ্করের ফাঁকি দেখায়।জিডিপি কাকে বলে? সব কিছু মিলিয়ে যেটা আসে সেটাকে বলে জিডিপি অর্থাৎ উৎপাদন থেকে যেটা আসে গ্রোথ। তারপর বলে যে, পার ক্যাপিটাল ইনকাম এতো হয়েছে।
মাথাপিছু আয় (পার ক্যাপিটাল ইনকাম) কিভাবে হিসাব করা হয় তা ব্যাখ্যা দিয়ে অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মির্জা ফখরুল বলেন, আমি আয় করি মাসে ৫০ হাজার টাকা আর আমার যে ভাই আয় করে মাসে ৫ হাজার টাকা- এই দুটা কী এক? এই দুইটা মিলে যদি দুই ভাগ করেন তাহলে পার ক্যাপিটাল ইনকাম কিন্তু ওর আসবে ২৫ হাজার, আমার আসবে ২৫ হাজার। বাস্তবে তার আয় তো ২৫ হাজার নয়।”
‘এ দেশের ৯০ ভাগ মানুষের আয় কম,আয় কম হচ্ছে। দেশের দারিদ্র শতকরা আরো ২ ভাগ বেড়েছে। এই যে বিষয়গুলো আজকে অবলীলায় মানুষকে প্রতারনা করে বোকা বানানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে।’
নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে তিনি বলেন, আপনারা জানেন যে, তারা গণতন্ত্র সম্পর্কে কি করছে? নির্বাচন সম্পর্কে কী করেছে? নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে যাতে আরেকটা সেই ধরনের নির্বাচন করা যায়।এবার মানুষ সেটা শুনবে না, এবার মানুষ রুখে দাঁড়াচ্ছে, রুখে দাঁড়াবে ইনশাল্লাহ। আমরা বিশ্বাস করি বাংলাদেশের মানুষ কখনো পরাজিত হয়নি।”
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের বর্ণাঢ্য জীবনের স্মৃতিচারণ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সমস্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে, সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে আমাদেরকে গণতান্ত্রিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে, অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এই ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট দানবীয় স্বৈরতান্ত্রিক সরকারকে পরাজিত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে- যে কথাটা আমাদের মওদুদ আহমদ সব সময়ই বলতেন।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ‘স্বাধীনতা ফোরাম’ এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
গত বছর ১৬ মার্চ মওদুদ সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হসপিটালে মারা যান। মৃত্যকালে তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। প্রয়াত ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের সহধর্মিণী অধ্যাপক হাসনা মওদুদ বলেন, রাজনৈতিকভাবে তারেক জিয়ার কথা উঠে। আমি তারেক জিয়াকে অত্যন্ত স্নেহ করি। আমি বলতে চাই, ইন্দিরা গান্ধীর ছেলে যদি ইন্ডিয়ার প্রাইমমিনিস্টার হতে পারে এবং সেই ছেলের ছেলেও যদি প্রাইমমিনিস্টার হওয়ার পথ পেতে পারে তাহলে তারেক জিয়া কেনো হতে পারবে না। তার যে বুদ্ধি মেধা। সে তো এখন সব কিছু চালিয়ে যাচ্ছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে তিনি বলেন, আজকে আমাদের সব বড় দুঃখ হলো আমরা বেগম জিয়াকে মুক্ত করতে পারি নাই। মওদুদ আহমদ বলে গেছেন যে, তিনি মুক্ত বেগম জিয়াকে দেখতে চান। আমি মওদুদের অসম্পূর্ণ স্বপ্ন গণতন্ত্রের মাতা বেগম জিয়াকে মুক্ত দেখতে চাই।
হাসনা মওদুদ আরও বলেন, আমি নোয়াখালী-৫ আসনের এলাকার গরিব মা-ভাই-বোনের পাশে দাঁড়াতে চাই-সেটাও কিন্তু আমার মওদুদের প্রতি শ্রদ্ধা-ভালোবাসার জন্য।
মওদুদের দুইটি অপ্রকাশিত গ্রন্থ ‘চলমান ইতিহাসের দ্বিতীয় পর্ব’ এবং ‘ডিমাইজ অফ ডেমোক্রেসি’ প্রকাশের উদ্যোগ নেবেন বলে জানান তার সহধর্মিণী।
সংগঠনটির সভাপতি আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক, আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, শামীমুর রহমান শামীম, নিপুণ রায় চৌধুরীসহ স্বাধীনতা ফোরামের নেতারা বক্তব্য রাখেন।
আলোচনা সভার পর প্রয়াত নেতার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।