নিউজ ডেষ্ক- চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল এলাকার সরকারি জায়গার ওপর হাসপাতালটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চারটি সংগঠন আলাদাভাবে সুপারশপ, ক্যান্টিনসহ ১০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে ভাড়া দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে এই সংগঠনগুলোই প্রতি মাসে ১০ লাখ ৩৮ হাজার টাকা ভাড়া আদায় করে।
এর মধ্যে তিনটি সংগঠন কিছুকাল ধরে প্রতি মাসে তাদের অংশের ভাড়া আদায় থেকে মাত্র এক লাখ ৩৫ হাজার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিচ্ছে। আর তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের সংগঠনটি দেড় যুগ ধরে প্রতি মাসে তাদের অংশে তিন লাখ টাকা ভাড়া আদায় করলেও এক টাকাও সরকারি কোষাগারে জমা দিচ্ছে না।
অভিযোগ উঠেছে, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চাপে পড়ে আদায় করা ভাড়া থেকে সরকারি কোষাগারে মাত্র এক লাখ ৩৫ হাজার টাকা জমা দিলেও বাকি ৯ লাখ তিন হাজার টাকা লোপাট করছেন সংগঠনগুলোর নেতারা। আর আগে সংগঠনগুলো নিজেদের ব্যাংক হিসাবে (অগ্রণী ব্যাংক, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ শাখা) ভাড়ার এই টাকা জমা করলে গত ১৫ মাস (২০২০ সালের নভেম্বর থেকে চলতি ফেব্রুয়ারি) ধরে তা আর করছে না। ফলে ভাড়া বাবদ আদায় করা এই টাকা লোপাট করা হচ্ছে বলে অনেকের অভিযোগ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংগঠনের কয়েকজন সদস্য জানান, ব্যাংক হিসাবে টাকা জমা না রাখার অর্থই হচ্ছে অনিয়ম-দুর্নীতি করা। সংগঠনের নেতারা এভাবে নিজেদের হাতে টাকা রাখতে পারেন না।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, চমেক হাসপাতাল এলাকার সুপারশপ, ক্যান্টিনসহ ১০টি প্রতিষ্ঠানের অব্যবস্থাপনা, নানা অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগে গত বছর ২৯ নভেম্বর অগ্রণী ব্যাংক, চমেক শাখায় চারটি অ্যাকাউন্টের মোট ২৯ লাখ ৪৭ হাজার ৬৯৬ টাকা জব্দ করা হয়। দুদক চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত কার্যালয়-২-এর তদন্তে সরকারি কোষাগারে টাকা জমা না দেওয়াসহ ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য পাওয়া যায়। পরে চারটি ব্যাংক হিসাব জব্দের পাশাপাশি আগের ১০ বছরের আয়-ব্যয়ের তথ্য চাওয়া হয়। সেই থেকে গত ১৫ মাস চারটি ব্যাংক হিসাব জব্দ রয়েছে। ফলে সেই থেকে সংগঠনগুলোর নেতারা ভাড়া আদায়ের টাকা আর ব্যাংকে জমা না দিয়ে নিজেদের কাছেই রাখছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্যাংক হিসাব জব্দ থাকায় গত ১৫ মাস ভাড়া আদায়ের টাকা আর ব্যাংকে জমা হয়নি। আর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এই সময়ে তিন সংগঠন সরকারি কোষাগারে নির্ধারিত টাকা জমা দিলেও বাকি টাকার হিসাব নেই। দুদকের নির্দেশনা ছিল ভাড়া আদায়ের টাকা প্রতি মাসে ব্যাংকে জমা রাখতে হবে। কিন্তু সে নির্দেশনা মানেনি সংগঠনগুলো।
সংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ওই চারটি ব্যাংক হিসাব জব্দ করায় সেখানে আটকে আছে ৩৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে নার্সেস ক্যান্টিনের সাড়ে ১৩ লাখ, মেডিকপসের ১৮ লাখ, তৃতীয় শ্রেণির ২৪ হাজার, এবং চতুর্থ শ্রেণির তিন লাখ টাকা।
ক্যান্টিনসহ অন্য প্রতিষ্ঠানের ভাড়া নিয়ে অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে মেডিকপসের (মেডিক্যাল কো-অপারেটিভ সোসাইটি) সাধারণ সম্পাদক ও চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী সমিতির সভাপতি আব্দুল মতিন মানিক বলেন, ‘অগ্রণী ব্যাংকে আমাদের দুটি অ্যাকাউন্টের একটিতে তিন লাখ টাকা এবং আরেকটিতে ১৮ লাখ টাকা জব্দ আছে। দুদক থেকে এখনো নির্দেশনা পাইনি এসব টাকা উত্তোলনের। অ্যাকাউন্ট জব্দ করায় পরে আর ভাড়া আদায়ের টাকা ব্যাংকে জমা করা হয়নি। ’
তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মাঈনুদ্দিন বলেন, ‘এসব বিষয় নিয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। ’
বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন চমেক হাসপাতাল শাখার সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন আখন্দ বলেন, ‘আমাদের ক্যান্টিনসহ দোকান ভাড়ার সাড়ে ১৩ লাখ টাকা ব্যাংকে জব্দ আছে। আমরা এরই মধ্যে সংগঠনের সদস্য-সদস্যাদের বোনাস দিয়েছি। ’