নিউজ ডেষ্ক- সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ। আর সভ্যতার অন্যতম পরিচায়ক হচ্ছে শালীনতা। সভ্য জীব হিসেবে মানুষের অন্যতম অনুষঙ্গ হচ্ছে পোশাক-পরিচ্ছদ। শুধু লজ্জা নিবারণই নয়, মানুষের আভিজাত্য, রুচি, ব্যক্তিত্ব, সংস্কৃতির পরিচয় ও সামাজিক অবস্থান বহন করে পোশাক। বিশ্বায়নের যুগে অবাধ তথ্য প্রবাহের কারণে, তারুণ্যে ভরপুর অনেকেই উচিত আর অনুচিত তফাৎ করতে পারে না।
এদিকে বর্তমানে ফ্যাশন নাম দিয়ে শুরু হয়েছে অধিক মুনাফা হাতানোর ব্যবসা। বণিক শ্রেণির সর্বগ্রাসী লোভের সবচেয়ে নির্মম শিকার নারীসমাজ। নারীদেরকে কত সূক্ষ্মভাবে যে প্রতারিত করা হচ্ছে, হতভাগা নারী তা আঁচই করতে পারছে না। অথচ, অশালীনতা সবদিক থেকে অকল্যাণকর। যে পোশাক শালীনতার উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ, তা যেন শরিয়তের দৃষ্টিতে পোশাকই নয়!
এ বিষয়ে আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘হে আদম সন্তান, আমি তোমাদের জন্য অবতীর্ণ করেছি পোশাক, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং সৌন্দর্য দান করে (সুরা আরাফ: ২৬)।’ অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘মুমিন নারীদের বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে ও তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। তারা যেন যা সাধারণত প্রকাশ থাকে তা ছাড়া তাদের আবরণ প্রদর্শন না করে (সুরা নুর: ৩১)।’
এদিকে আল্লাহ তা’আলা আরও ইরশাদ করেন, ‘হে নবী, স্ত্রী, কন্যা ও মুমিন নারীদের বলো, তারা যেন তাদের চাদরের কিছু অংশ নিজেদের ওপর টেনে দেয়। এতে তাদের চেনা সহজতর হবে, ফলে তাদের উত্ত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু (সুরা আহজাব: ৫৯)।’
যে পোশাক আদিম মানুষকে সভ্যতায় উন্নীত করেছে, আধুনিক ফ্যাশনের নামে তার ডিজাইন যদি আদিমতাকেই উসকে দেয়, তা কোনোভাবে রুচিশীল, মার্জিত পোশাক বলে বিবেচিত হতে পারে না। মনে রাখতে হবে পোশাক শুধু জীবনে নয়, মরণেও থাকবে। নবি করিম (সা.) বলেন, যখন তোমাদের কেউ তার মুসলিম ভাইকে কাফন দেবে, সে যেন ভালো কাপড় দিয়ে কাফনের ব্যবস্থা করে (মুসলিম: ২০৭৪)।
মডেল এবং টিভি সিরিয়ালে দেখা অর্ধশরীর আবৃত করার মতো নারীদের বাহারি পোশাক বাজারজাত করে পোশাক কোম্পানিগুলো। উঠতি ছেলেমেয়েদের এসব পোশাকের প্রতি থাকে বাড়তি আগ্রহ। অথচ, রাসুলুল্লাহ (সা.) এসব পোশাক না পরার ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, ‘যে ব্যক্তি খ্যাতি লাভের জন্য পোশাক পরে, আল্লাহ তা’আলা কেয়ামতের দিন তাকে লাঞ্ছনার পোশাক পরাবেন। অতঃপর তাকে অগ্নিদগ্ধ করা হবে (আবু দাউদ: ৪০২৯)।’
ইসলামের দৃষ্টিতে শরীর ও শরীরের অবয়ব প্রকাশ পায়— এমন পাতলা কাপড় পরিধান করাও নিষেধ। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘এমন নারী যারা পোশাক পরিধান করেও উলঙ্গ, যে নিজেও পথভ্রষ্ট এবং অন্যকে পথভ্রষ্ট করে, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। অথচ জান্নাতের ঘ্রাণ পাঁচশো বছরের দূরত্ব থেকে পাওয়া যায় (মুয়াত্তা মালিক: ১৬৬১)।’
এদিকে ইসলাম নারীদের সুন্দর, রুচিশীল ও আরামদায়ক পোশাক পরিধান করতে বলে। অর্ধ উলঙ্গ কখনও সুন্দর ও শালীনতা হতে পারে না। বরং পোশাকের সৌন্দর্য বাড়াতে কারুকাজ ও নকশা দিতে উৎসাহিত করে ইসলাম। আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘তিনি রাসুলুল্লাহ (স.)-এর মেয়ে উম্মে কুলসুমের গায়ে হালকা নকশা করা রেশমি চাদর দেখেছেন (সহিহ বোখারি: ৫৮৪২)।’