সপ্তাহে পান ৪ কোটি টাকা বিক্রি , বিঘায় ৫ লাখ!

কৃষি ও প্রকৃতি

নিউজ ডেষ্ক- রাজশাহী জেলার মোহনপুর পানের হাটে সপ্তাহে ৪ কোটি টাকার পান বিক্রি হয় বলে জানিয়েছেন হাট ইজারাদার হারুণ-অর-রশিদ। চাষিরা প্রতি বিঘায় পান বিক্রি করছেন মানভেদে ২ থেকে ৫ লাখ টাকার।

‘যদি সুন্দর একটা মুখ পাইতাম, সদরঘাটের পানের খিলি তারে বানাই খাওয়াইতাম।’ গানটি পুরনো বাংলা ছায়াছবির। কন্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনের গাওয়া গানে পানের যে ঐতিহ্য অঙ্কিত হয়েছে তার দাবিদার রাজশাহীর পানচাষিরা। ঢাকার সদরঘাটের পান এখানকার উৎপাদিত বলে দাবি কিন্তু রয়েই যায়। সারাদেশে আমের জন্য রাজশাহী পরিচিত হলেও কৃষি বিভাগ বলছে জেলার প্রধান অর্থকারী ফসল পান।

জেলায় চলতি মৌসুমে ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে আমের বাগান রয়েছে। প্রতি হেক্টরে ১২ মেট্রিক টন ফলন হয়। অর্থাৎ ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে ২ লাখ ১৬ হাজার মেট্রিক টন আম। জেলায় ৮৬ হাজার ৬৭৫ জন চাষি আম চাষের সঙ্গে জড়িত। সব মিলিয়ে আম থেকে ৮০০-৯০০ কোটি টাকার আম বিক্রি হলেও পানের তুলনায় প্রায় ৯’শ থেকে হাজার কোটি টাকা কম। ফলে রাজশাহীর প্রধান অর্থকারী ফসল পান হলেও তেমন ডামাডোল নেই।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে চার হাজার ৩৬১ দশমিক ৪ হেক্টর জমিতে পান উৎপাদন হয়েছে ৭৬ হাজার ৭৭১ মেট্রিক টন। হেক্টর প্রতি ফলন প্রায় ১৬ দশমিক ৯৮ মেট্রিক টন। গতবছর উৎপাদিত পানের এক হাজার ১৭১ মেট্রিক টন পান বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়েছে। কিন্তু এবছর রপ্তানি হিসেব পাওয়া যায়নি। তারপরও বছরে উৎপাদিত পানের দাম ১ হাজার ৮৬৭ কোটি ৫০ লাখ টাকার বেশি বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

সূত্র মতে, রাজশাহীর ৭২ হাজার ৭৬৪ জন কৃষক পান চাষের সঙ্গে জড়িত। জেলার মোহনপুর, দুর্গাপুর ও বাগমারা উপজেলায় সবচেয়ে বেশি পান চাষ হয়। এরমধ্যে বাগমারা উপজেলাতে উৎপাদন হয় সবচেয়ে বেশি। চলতি মৌসুমে বাগমারায় এক হাজার ৫৬০ হেক্টর জমিতে, দূর্গাপুরে এক হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে এবং মোহনপুরে এক হাজার ১৮২ হেক্টর জমিতে পান চাষ করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ফলন বাগমারায় বিঘায় ১৮ মেট্রিকটন।

রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার শিবপুর ধুরইল গ্রামের পানচাষি হাসান আলী এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন,‘ পান চাষ করে লাভ বেশি তাই পান চাষ করি। অন্য ফসলে পাতা বিক্রি করে টাকা পাওয়া যায় না। হাটের দিনে দিনে টাকা আসে পকেটে। ডিসেম্বর, জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি মাসে পানের পাতা তোলা যায় না তখন একটু সমস্যা হয় কিন্তু সারাবছর পকেটে টাকা থাকে। বরজে পান থাকলে বুকে সাহস থাকে। কিন্তু কৃষি বিভাগ আমাদের কাছে আসে না। কোন পরামর্শ পাইনা।’

উপজেলার পানচাষি উমর আলী এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন,‘ এলাকায় আগে অনেক পানের বরজ ছিল। কয়েক বছর ধরে পুকুর কাটার হিড়িক পড়ে গেছে। ফলে পান চাষে হুমকি হয়ে পড়েছে। শুধু এদিকে নয় রাজশাহী জেলার বিভিন্ন জায়গায় পুকুর কাটা হচ্ছে। আর পুকুর কাটলে পানি জমা পড়ে বরজ মারা যায়। নিষ্কাসন ব্যবস্থা ঠিক না থাকলে প্রচুর ক্ষতি হয়।’

জেলার সবচেয়ে বড় পানের হাট মোহনপুর। হাটের ইজারাদার হারুণ-অর-রশিদ এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, বর্তমানে পানের দাম ভালোই আছে। পুরাতন পান পোয়া বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা। আর নতুন পানের দাম কম ১৬’শ থেকে ২ হাজার টাকা। সপ্তাহে এই হাট বসে দুদিন। এই দুদিনে প্রায় ৪ কোটি টাকার পান কেনা-বেচা হয়। বছরে দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি পান বিক্রি হয়। রাজশাহীর পান ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারিসহ দেশের বাইরেও রপ্তানি হয়।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, রাজশাহীর আম সারাদেশে সুনাম ছড়িয়েছে। রাজশাহী আমের অঞ্চল হিসেবে বিদেশেও পরিচিত। আমের যেহেতু একটা পরিচিত হয়ে গেছে সেহেতু এটা থাকবে। আম সবধরণের মানুষের খাবার হিসেবে প্রিয়। পান কিন্তু তেমন নয়। চলতি মৌসুমে ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। ফলনও বেশ ভালো হবে আশা করা হচ্ছে। কৃষি বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *