নিউজ ডেষ্ক- রাজনীতিক, উচ্চ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা, ধনাঢ্য পরিবারের সদস্য, সাংবাদিকসহ সমাজের সচেতন অংশের মানুষ হয়েও তারা হজ প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। এ প্রতারণার বিষয়ে বিভিন্ন অভিযোগ আসছে হজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)-এর কাছে।
এ ক্ষেত্রে হজ গমনেচ্ছুদের সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই বলে মনে করেন সরকারি-বেসরকারি দায়িত্বশীলরা। হজসংক্রান্ত প্রতারণার আশঙ্কায় ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে বিজ্ঞপ্তিও জারি করা হয়েছে।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যুগান্তরকে বলেন, হজ কার্যক্রম এখন স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় হওয়ায় কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি করার সুযোগ নেই। কিন্তু হজযাত্রীদের মধ্যে যারা নির্ধারিত প্রক্রিয়া না জেনে দালালের ওপর নির্ভর করেন তাদের জন্য আমরা কিছু করতে পারি না। সবাই যাতে সঠিক নিয়মে হজ প্রতিপালন করেন তা নিশ্চিত করতে মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট, গণমাধ্যমসহ সব জায়গায় সুন্দরভাবে তথ্য প্রচার করছি। এর পরও মানুষ সচেতন না হলে সরকারের কিছু করার থাকে না।
দুই বছর বন্ধ থাকার পর আবারও চালু হয়েছে হজ কার্যক্রম। এ সময়কে কাজে লাগিয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছে প্রতারকরা। কেউ কেউ ৬৫ বছরের বেশি বয়সিদের হজে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। বিশেষ ব্যবস্থায় নিবন্ধন করিয়ে, সরকার ঘোষিত খরচের কম টাকায় হজ পালনের সুযোগসহ বিভিন্ন ধরনের অফার পাচ্ছেন গমনেচ্ছুদের অনেকে। কেউ কেউ এসব প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে ভোগান্তিতেও পড়ছেন।
হাবের সভাপতি শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, হজযাত্রীদের সচেতন করতে আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে গত কয়েক বছর আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। কিন্তু বাস্তব ফল খুবই হতাশাজনক। হজযাত্রীদের আমি অনুরোধ করছি-অন্যের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে আপনারা হজ এজেন্সিতে আসুন। সরাসরি কাজ করুন। যদি কোনো এজেন্সি প্রতারণার আশ্রয় নেয় আমাদের (হাবকে) জানান। আমরা কঠোর পদক্ষেপ নেব।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একটি বাহিনীর শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার বাবা-মা হজ করতে যাবেন। এ বিষয়ে প্রতিবেশী একজন ব্যবসায়ীর কাছে টাকাও জমা দিয়েছেন। ওই ব্যবসায়ী নিজের হজ এজেন্সি আছে বলে টাকা নিয়েছেন। ওই কর্মকর্তার পরিবারের একপর্যায়ে সন্দেহ হলে মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে জানতে পারেন, সেই ব্যক্তির হজ এজেন্সি নেই।
রাজশাহীর এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, হজে যাওয়ার প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করতে আমার নিয়মিত ঢাকায় আসা সম্ভব নয়। তাই স্থানীয়ভাবে একটি গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ করছি। বিশ্বাস করেই করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, সব জেলা থেকে হজের কার্যক্রম সম্পন্নের উদ্যোগ নেওয়া উচিত। যাতে শুধু হজ করতে যাওয়ার সময় ঢাকায় গেলে হয়।
এদিকে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা হজকেন্দ্রিক প্রতারণা বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন। দায়িত্বশীল একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানিয়েছেন, আসন্ন হজ মৌসুমে এসব প্রতারকরা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবে। এ বিষয়টি সামনে রেখে আমরা কাজ করছি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৈধ সব হজ এজেন্সিকেও গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। অন্যদিকে অবৈধভাবে কেউ যাতে এজেন্সির পরিচয় দিতে না পারে সেই ক্ষেত্রেও পদক্ষেপ আছে। আসন্ন হজ ঘিরে প্রতারক চক্রের সদস্যরা ই-টিকিটিংয়ের ক্ষেত্রে প্রতারণার জাল বিছিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে গত মঙ্গলবার রাজধানীর ভাটারা থানায় একটি মামলাও হয়েছে। বিষয়টির তদন্ত শুরু করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
উল্লেখ্য, এ বছর বাংলাদেশ থেকে ৫৭ হাজার ৫৮৫ জন হজ পালনের সুযোগ পাবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় চার হাজার ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫৩ হাজার ৫৮৫ জন হজে যেতে পারবেন।