শ্রীপুরে ৩৫০ মেট্রিক টন মধু সংগ্রহের আশা লিচুর ফুল থেকে

দেশজুড়ে

নিউজ ডেষ্ক- গাজীপুরের শ্রীপুরে লিচু বাগানগুলোতে এখন সারি সারি মৌ-বাক্স শোভা পাচ্ছে। লিচু ফুলে উড়ে বেড়াচ্ছে হাজার হাজার মৌমাছি। মৌ-চাষিরা ৩৫০ মেট্রিক টন লিচুর মধু উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়ে এ বছর মৌ-বাক্স সাজিয়ে বসেছেন।

প্রতি মৌসুমে লিচুর ফুল থেকে তিনবার মধু সংগ্রহ করেন চাষিরা। ইতোমধ্যে দুবার সংগ্রহ করেছেন। মধু সংগ্রহ লাভজনক হওয়ায় চাষিদের সংখ্যা বাড়ছে। প্রাকৃতিক এই মধু সংগ্রহ করে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হচ্ছেন বাগান মালিক ও চাষিরা। লিচুর মধু স্বাদে অনন্য বলে জানিয়েছেন তারা।

শ্রীপুর উপজেলায় ৭২৮ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ করা হয়। বেশ কয়েকটি জাতের লিচু চাষ হয়। চলতি বছর লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিন হাজার ৮৯৫ মেট্রিক টন। শ্রীপুরের তেলিহাটি ইউনিয়নের মুলাইদ গ্রামের মৌ-চাষি মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘সার্বিকভাবে দেশে মধু উৎপাদন আগের থেকে অনেক ভালো।

ব্যক্তি পর্যায়ে দেশের বাইরেও এখন মধু রফতানি হচ্ছে। শ্রীপুরে যে পরিমাণ লিচু বাগান রয়েছে, তাতে বসন্তকালে বাগানে বাক্স স্থাপন করা হলে শত শত টন মধু সংগ্রহ করা সম্ভব। এ বছর অতিরিক্ত খরায় ফুল থেকে মধু বাষ্প হয়ে উড়ে গেছে। গত বছরের তুলনায় এবার উৎপাদন ২০-২৫ ভাগ কম। প্রতি বছর ১৫ টন মধু আহরণ করি।’

তিনি বলেন, ‘বসন্তের আবহাওয়া বৃষ্টি ও ঠান্ডামুক্ত থাকলে ১০০ বাক্সের বিপরীতে আট থেকে সাড়ে আটশ মণ মধু সংগ্রহ করা যায়। চলতি বছর বসন্তের প্রথম দিকে কিছুটা ঠান্ডা আবহাওয়া ছিল। মৌমাছি সাধারণত দুপুরে মধু সংগ্রহে বের হয়। ফলে এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় মধুর উৎপাদন কম। টেপিরবাড়ির মৃধা পাড়া এলাকায় আমার তিনটি বাগানে প্রায় ৫০০ মৌ-বাক্স আছে। উপজেলায় চার হাজারের বেশি মৌ-বাক্স বসানো হয়েছে। মধু সংগ্রহে বসন্তের এ সময়ে কমপক্ষে শ্রীপুর উপজেলায় ২০০ প্রশিক্ষিত শ্রমিক দুই মাসের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছেন।’

মৌ-চাষি আমীর আলী বলেন, ‘১৯৯১ সাল থেকে মৌ-চাষে যুক্ত। প্রথমে সেরেনা জাতের মৌমাছি দিয়ে মধু উৎপাদন করতাম। পরে ম্যালিফেরা জাতের মৌমাছি দিয়ে মধু উৎপাদন শুরু করি। ম্যালিফেরা জাতের মৌমাছি দিয়ে মানসম্মত মধু তৈরি করা যায়।’ মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘লাভজনক চাষ হওয়ায় প্রশিক্ষণ নিয়ে মৌ-চাষ শুরু করি। এই পেশায় আমার মতো অনেকেই যুক্ত আছেন। সেই সঙ্গে অধিকাংশই লাভবান হয়েছেন।’

মৌয়ালরা জানান, প্রশিক্ষিত ব্যক্তি ছাড়া মধু সংগ্রহ করা যায় না। চাক থেকে মেশিনে মধু নিষ্কাশন, বাক্স থেকে ফ্রেম বের করে মধু ছেঁকে আবারও বসাতে হয়। প্রশিক্ষণ ছাড়া মধু সংগ্রহ ও পরিচর্যা করতে গেলে মৌমাছির ক্ষতি হয়। চাকে মধু থেকে যায়, ডিম লার্ভা নষ্ট হয়ে মৌমাছি মারা যায়।

শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া গ্রামের লিচু বাগান মালিক নুরুল আলম মাস্টার বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে লিচু গাছে ফুল ফোটার পর কীটনাশক ব্যবহার করি না। কৃষি অফিসের পরামর্শে ফুলের আঁটি বের হওয়ার সময় ও ফুল ঝরার পর লিচুর গুটি হলে কীটনাশক দেওয়া হয়। এতে মৌ-চাষিদের মধু সংগ্রহ করতে সুবিধা হয়।’ কেওয়া গ্রামের লিচু বাগান মালিক আলমাছ উদ্দিন বলেন, ‘বাগানে মধু চাষিরা মৌমাছির বাক্স স্থাপন করায় পরাগায়ন বেশি হয়। ফলে লিচুর উৎপাদন ২৫ ভাগ বেশি হয়।’

টেপিরবাড়ি গ্রামের আমীর হোসেন বলেন, ‘লিচুর মধু নিয়মিত ব্যবহার করি। এই মধু দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। এর স্বাদ অন্যান্য মধুর চেয়ে বেশি। এই মৌসুমে প্রতি কেজি মধু সাড়ে ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়।’‌ শ্রীপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ইমতিয়াজ জাহান খান বলেন, ‘শ্রীপুরে এ বছর চার হাজার ২১০টি মৌ-বাক্স স্থাপন করা হয়েছে। শ্রীপুর পৌরসভা ও তেলিহাটী ইউনিয়নে চাষ বেশি হয়। লিচু আবাদের সঙ্গে মৌ-চাষের ফলে লিচুর ফলন বৃদ্ধি পায়। ফুল ফোটার সময় চাষিদের কীটনাশক প্রয়োগ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ঘন ঘন পরাগায়ন মৌ-চাষ উপযুক্ত মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। এ বছর উপজেলায় ৩৫০ মেট্রিক টন মধু লিচুর ফুল থেকে আহরণের সম্ভাবনা রয়েছে।’

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *