রেজা কিবরিয়ার বক্তব্যের পরই যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলো নতুন খবর

জাতীয়

নিউজ ডেষ্ক- বাংলাদেশের আরও কিছু সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে যুক্তরাষ্ট্রে জোর লবিং চলছে বলে সতর্ক করেছেন দেশটির প্রভাবশালী এক কংগ্রেসম্যান।

গত ২৯ জানুয়ারি রাজধানীর নয়াপল্টন প্রিতম জামান টাওয়ারে গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া র‌্যাবের বর্তমান ও সাবেক সাত কর্মকর্তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রসঙ্গ টেনে বলেছিলেন, ‘এ নিষেধাজ্ঞাই শেষ নয়, দেশের ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আসছে।’ সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আরও নিষেধাজ্ঞা আসবে সে ব্যাপারে আপনারা নিশ্চিত থাকুন। এখন শুধু সরকার বিপদে নয়, দেশও বিপদে পড়ছে।’

রেজার এমন বক্তব্যের তিন দিনের মাথায় নিষেধাজ্ঞা দিতে যুক্তরাষ্ট্রে জোর লবিং চালানো হচ্ছে বলে সতর্ক করলেন দেশটির প্রভাবশালী এক কংগ্রেসম্যান এবং পররাষ্ট্রবিষয়ক হাউস কমিটির চেয়ারম্যান গ্রেগরি ডব্লিউ মিকস। মঙ্গলবার দুপুরে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাস এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, স্থানীয় সময় সোমবার (৩১ জানুয়ারি) নিউইয়র্কের কুইন্সের একটি রেস্তোরাঁয় একটি তহবিল সংগ্রহের মধ্যাহ্নভোজ অনুষ্ঠানে তিনি এ সতর্ক বার্তা দেন। অবশ্য সতর্কবার্তার পাশাপাশি মিকস এই বলে আশ্বস্তও করেছেন যে, নতুন করে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না তার দেশ। তিনি বলেন, ‘তাদের কথা অনুযায়ী আমরা এটা করব না… এটা সম্ভব নয় এবং আমরা সব কিছু যাচাই-বাছাই করে সঠিক পদক্ষেপ নেব।’

যুক্তরাষ্ট্র থেকে যুগান্তরের সংবাদদাতা কৌশলী ইমা জানিয়েছেন, গ্রেগরি ডব্লিউ মিকস বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে চায় না যুক্তরাষ্ট্র। আমরা নিশ্চিত করে বলতে চাই যে, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছি না। আমরা এখনো বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের সঙ্গে কাজ করছি।

কংগ্রেসম্যান মিকস একজন প্রখ্যাত আইনজীবী। তিনি ১৯৯৮ সাল থেকে নিউইয়র্ক থেকে মার্কিন প্রতিনিধি ডেমোক্রেটিক পার্টি এবং ২০২১ সাল থেকে পররাষ্ট্র বিষয়ক হাউস কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

মিকস বলেন, আমরা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছি না। নিষেধাজ্ঞাগুলো একটি সংস্থার কিছু ব্যক্তির ওপর আরোপ করা হয়েছিল, পুরো সংস্থার ওপর নয়। সারা বিশ্বের ১১টি দেশের বিরুদ্ধে বাইডেন প্রশাসন গণতন্ত্র ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে অভিযোগ পেয়েছে তার ওপর ভিত্তি করেই এটি করা হয়েছে বলে জানান মিকস। তিনি এও বলেন, বাংলাদেশ থেকে আসা আমেরিকার রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নে তিনি আনন্দিত। বাংলাদেশের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছেন বলে উল্লেখ করেন মিকস।

বাংলাদেশের আরও কর্মকর্তা এবং রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এবং বাইরে থেকে জোরালোভাবে লবিং করা হচ্ছে- এ প্রশ্নের উত্তরও দিয়েছেন মার্কিন কংগ্রেসম্যান। তিনি বলেন, আমরা তাদের কথা অনুযায়ী এটি করব না, এটা সম্ভব নয় এবং আমরা সবকিছু যাচাই-বাছাই করে সঠিক পদক্ষেপ নেব।

মিকস জানান, মানবাধিকার পরিস্থিতি ও অন্যান্য বিষয় দেখতে তিনি এ বছর বাংলাদেশ সফর করবেন। তার আগে তিনি স্টেট ডিপার্টমেন্ট এবং এশিয়া-প্যাসিফিক বিষয়ক কংগ্রেস সাব-কমিটির সঙ্গে কথা বলবেন। প্রয়োজনে তিনি বাংলাদেশ ইস্যুতে কংগ্রেসে শুনানির ব্যবস্থাও করবেন।

উল্লেখ্য, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে গত ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে র‌্যাবের সাত বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা জানায় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির স্টেট ডিপার্টমেন্ট এবং ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট পৃথকভাবে এই নিষেধাজ্ঞা দেয়।

এমন নিষেধাজ্ঞাকে ভিত্তিহীন ও সরকারবিরোধীদের চক্রান্ত উল্লেখ করে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা না করে এমন নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশিরা পছন্দ করেনি বলে ওয়াশিংটনকে জানিয়ে দেয় ঢাকা।

এদিকে এই নিষেধাজ্ঞার পরই বিএনপি ও জামায়াতের লবিস্ট নিয়োগের বিষয় সামনে আসে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দেশ ও সরকারের বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্র’ করতে বিএনপি-জামায়াত যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ করেছে।সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপি-জামায়াত আটটি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছে বলে জাতীয় সংসদকে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন।

তবে বিএনপির পক্ষ থেকে বিষয়টি অস্বীকার করা হয়েছে। দলটি উল্টো সরকারের বিরুদ্ধে লবিস্ট নিয়োগের অভিযোগ তুলেছে। এই লবিস্ট নিয়োগ নিয়ে এখন তোলপাড় চলছে দেশে-বিদেশে। যদিও সরকার বলেছে, লবিস্ট নয়- পিআর ফার্ম নিয়োগ করা হয়েছে দেশের কল্যাণের জন্য।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *