রাজশাহীর আম উঠছে বাজারে, দামে খুশি চাষিরা

বাণিজ্য

নিউজ ডেষ্ক- রাজশাহীর পুঠিয়া বানেশ্বর আমের বাজারে গুটি ও গোপালভোগ আম আসতে শুরু করেছে। বৈরি আবহাওয়ার কারণে মৌসুমের প্রথমেই অধিকাংশ মুকুল ঝরে পড়ায় হতাশ হয়েছিলেন এ অঞ্চলের আম চাষিরা। তবে, বাজারে এসে ভালো দাম পাওয়ার খুশি তারা।

আজ শনিবার (১৪ মে) রাজশাহীর চারঘাট, বানেশ্বর, পুঠিয়া সহ বেশকিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বাগান থেকে আগাম গুটি জাতের আম পাড়ছেন চাষিরা। কাঁচা আম ক্যারেট ভর্তি করে তুলছেন গাড়িতে। প্রতিমণ কাঁচাপাকা আম বিক্রি করছেন ১ হাজার টাকায়।

বানেশ্বর বাজারে বিক্রি হতে দেখা গেছে গোপালভোগ আম। চাষিরা ২ হাজার টাকা মণ দাম চাইলেও বিক্রি হচ্ছে ১৭শ থেকে ১৮শ টাকা মণ। তারা বলছেন, গতবারের তুলনায় এবার মণপ্রতি ৬শ থেকে ৮শ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। গাছের পরিচর্যা করার পরও ফল আটকানো যায় নি, ফলে ফলন গতবারের চেয়ে কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

পুঠিয়া উপজেলার নামাজ গ্রাম এলাকার একটি বাগানে আম নামাচ্ছিলেন হাজী মোহাম্মদ আতাউর রহমান। চারঘাট থানার সলুয়া এলাকার এ আম চাষির রয়েছে প্রায় ২০০০ টি বিভিন্ন প্রজাতির আম গাছ। গতবারে আম পেয়েছিলেন প্রায় ১২ হাজার মণ।

আলাপকালে এ আম চাষি জানান, করোনায় গত সময় তেমন বিক্রি করতে না পারলেও চলতি মৌসুমে দ্বিগুণ আম বিক্রির প্রত্যাশা ছিলো। তবে তার আশায় গুড়ে বালি পড়েছে। এবার মাত্র ৬ হাজার মন আম পাবেন বলে আশা করছেন। গতবারের তুলনায় ফলন গড়ে ৫০ শতাংশ হবে মন্তব্য করেন তিনি।

জানতে চাইলে তিনি এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে বলেন, ‘খারাপ আবহাওয়ার কারণে চলতি মৌসুমে একেবারেই নেই। তারপরও গতবার গুটি আম বিক্রি করেছিলাম আড়াইশ থেকে তিনশ টাকায়। তবে এবার করোনা না থাকায় এই আম বিক্রি করেছি এক হাজার টাকায়। দাম আছে, তাই ফলন নিয়ে চিন্তা করছি না।’

আমসফল এ আম চাষি জানান, ‘এসব আম ঢাকার কারওয়ান, বরিশাল-ভোলা, চট্টগ্রাম, কুড়িগ্রাম, দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় যায় রাজশাহীর আম। আমি বরাবরই প্রাণ কোম্পানিতে আম বিক্রি করি। গত ১৩ মে জেলা প্রশাসকের দেওয়া নির্দেশনা পেয়ে আম নামানো শুরু করেছি।’

একই এলাকার আম চাষি মোজাম্মেল হক এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে জানান, ‘এবারে একেবারেই গাছে আম নেই। গাছ একেবারে ন্যারে হয়ে আছে। এবার শুধু বাড়িতে খাওয়ার মতো আম হয়েছে।’

‘গতবারে করোনায় এক ক্যারেট আম বিক্রি করেছিলাম আড়াই থেকে চারশত টাকায়। এবার আম গাছে কম থাকায় সেটাও বিক্রি করতে পারবো না। আমার ২০০ টি গাছের মধ্যে মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি গাছে বাড়িতে খাওয়ার মতো আম এসেছে। সবমিলিয়ে এবার খুব খারাপ অবস্থা। তবে আমের দাম এখন পর্যন্ত অনেকটা ভালো আছে।’

এদিকে আম চাষি হাজী মোহাম্মদ আতাউর রহমান অভিযোগ করেন যে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তাদের কোনো উপকারই করে নি। তারা যদি আম চাষিদের প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সামান্য সহযোগিতা করতো তবে কিছুটা হলে আম রক্ষা সম্ভব হতো। আবার তারা যে আমের লক্ষ্যমাত্রার কথা বলছেন তা কোনো দিক দিয়েই সঠিক নয়।’

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ সূত্রে জানা গেছে, এবার রাজশাহীতে চলতি মৌসুমে ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে আমের চাষ হচ্ছে। প্রতি হেক্টরে ১২ টন আমের ফলন হয়। এ ক্ষেত্রে ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে ২ লাখ ১৬ হাজার টন আম উৎপাদন হয়। তবে এবার মৌসুমের শুরুতেই বৈরী আবহাওয়ার কারণে গাছ থেকে অনেক গুটি আম ঝড়ে পড়ায় ফলন কম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক মোজদার হোসেন বলেন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে, প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে আমের ফলন ভালো না। মৌসুমের শুরুর দিকেই গাছে থেকে আমের মুকুল ও গুটি ঝরতে শুরু করে। তাই আমের ফলনও কম।

আম চাষের লক্ষ্যমাত্রার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চাষিরা একটি এলাকায় থেকে বলছে আম নেই বা লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না। কিন্তু আমরা ৯টি উপজেলার তথ্য একসাথে সমন্বয় করে এ তথ্য বের করেছি। তবে তিনি স্বীকার করেন, এবার চারঘাট, বাঘা, পুঠিয়া সহ কয়েকটি উপজেলায় আম কম হয়েছে। কিন্তু সহযোগিতা না করার বিষয়টি সত্যি না। কেউ সহোযোগিতা না চাইলে আমরা বুঝবো কেমনে তার সাহায্য লাগবে? বলে মন্তব্য করেন তিনি।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *