রড-সিমেন্ট বিক্রি হচ্ছে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দামে

জাতীয় breaking subled

নিউজ ডেষ্ক- এবার সর্বকালের সর্বোচ্চ দামে পৌঁছেছে নির্মাণ শিল্পের অন্যতম উপকরণ রড। তার সঙ্গী হয়েছে সিমেন্ট। কারণ রড তৈরির কাঁচামাল স্ক্র্যাপ ও সিমেন্ট উৎপাদনের কাঁচামাল ক্লিংকারের পুরোটাই দেশে আসে আমদানি হয়ে। এর মূল্য পরিশোধ করতে হয় ডলারে। আর পরিবহন করতে হয় জাহাজ ও ট্রাকে। বর্তমানে প্রতি টন এমএস রড বিক্রি হচ্ছে ৯০ হাজার থেকে ৯২ হাজার ৩শ টাকায়। এর আগে কখনো রডের দাম এত বেশি হয়নি। একমাস আগেও এসব রড ছিল ৮৫-৮৬ হাজার টাকা।

আবার ৫০ কেজির প্রতি বস্তা সিমেন্ট বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৫৩০ টাকায়। এর আগে গত মার্চে সিমেন্টের দাম ৫২০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। তবে একমাস আগে এসব সিমেন্ট ছিল ৪০০-৪২০ টাকা। মাসের ব্যবধানে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা সিমেন্টের দাম বেড়েছে ১০০-১২০ টাকা। বর্তমানে ডলার এবং জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে রড-সিমেন্টের দাম বাড়ছে। এ কারণে বিক্রি একেবারে কমে গেছে।

এ বিষয়ে রয়েল সিমেন্টের মহাব্যবস্থাপক আবুল মনসুর জানান, এখন ডলারের দাম ২২-২৫ শতাংশ বেড়েছে। আগে ৮৪-৮৫ টাকা হিসেবে ডলার পেমেন্ট দিতাম। এখন সেই ডলার ১১০-১১২ টাকা পর্যন্ত গিয়েছিল। তাছাড়া সিমেন্টের কাঁচামালের যে দাম বেড়েছে তার দাম কমেনি। আগে যে ক্লিংকার ৪০-৪২ ডলারে পাওয়া যেত, এখন সেই ক্লিংকারের দাম ৬৫ ডলারের উপরে।

এখন জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে কারখানা থেকে সিমেন্ট সরবরাহে পরিবহন ব্যয়ও বেড়ে গেছে। প্রতি ব্যাগ সিমেন্টের শুধুমাত্র পরিবহন খরচ বেড়েছে ১০-১৫ টাকা। সব মিলিয়ে বাজারে প্রভাব পড়েছে। এ কারণে একদিকে দাম বেড়েছে, অন্যদিকে চাহিদা কমে গেছে। কারণ রড-সিমেন্টের দাম বাড়ায় মানুষ নির্মাণ কাজ বন্ধ রেখেছে।

প্রিমিয়ার সিমেন্টের মহাব্যবস্থাপক গোলাম কিবরিয়া জানান, সিমেন্ট শিল্পের কাঁচামালের প্রায় পুরোটাই আমদানিনির্ভর। বর্তমানে দেশে ৩৫টি সিমেন্ট কারখানায় উৎপাদন চালু রয়েছে। এর মধ্যে ৩৪টিতে ক্লিংকার আমদানি করে সিমেন্ট উৎপাদন করে থাকে। একব্যাগ সিমেন্ট তৈরিতে ৫০০ টাকা খরচ হলে ৪০০ টাকায় খরচ হয় কাঁচামালে। এখন ডলারের যে হারে দাম বেড়েছে তাতে শুধু সিমেন্ট নয়, আমদানিনির্ভর সব শিল্পই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, আমরা সর্বশেষ একটি এলসির মূল্য পরিশোধ করেছি প্রতি ডলার ১১২ টাকা ৫০ পয়সা হারে। ওই এলসিতে দুই কোটি ৯০ লাখ টাকা লোকসান দিতে হয়েছে। এখন টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে প্রায় ২৯ শতাংশ। তার প্রভাব পড়েছে উৎপাদনে। এখন শুধু ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে প্রতি বস্তায় ৭০-৮৫ টাকা দাম বেড়েছে। আবার আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম বাড়তি থাকায় সারাবিশ্বে বাংকারিংয়ের দাম বেড়েছে। এতে জাহাজ ভাড়াও বেড়ে যায়। ক্লিংকারের আমদানি খরচ বেড়ে গেছে। ফ্রেইট চার্জ বেড়ে যাওয়ার কারণে এখন ক্লিংকার ৬২-৬৩ ডলারে কিনতে হচ্ছে।

এদিকে দেশে ডিজেলের দাম বাড়ার সরাসরি প্রভাবও পড়েছে এ খাতে। ডিজেলের বাড়তি দামের কারণে ট্রাক ও লাইটার জাহাজের ভাড়া বেড়েছে বলে জানান প্রিমিয়ার সিমেন্টের এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, সিমেন্টের দাম বাড়ার আরেক কারণ হচ্ছে দেশে ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়া। ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়াতে মাদার ভেসেল থেকে লাইটারিং করতে লাইটারেজের ভাড়াও বেড়ে গেছে। হিসাব করে দেখেছি, প্রতি টনে ১০০ টাকার উপরে লাইটারিং খরচ বেড়ে গেছে।

দেশের রড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাহীরাও বলছেন, ডলারের দাম বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক বাজারে স্ক্র্যাপের দাম বাড়ার কারণে দেশে রডের দামে রেকর্ড হয়েছে। এখন কেউ বাধ্য হয়ে উৎপাদন বন্ধ রাখছেন আবার কেউ লস দিয়েও ব্যবসা চালিয়ে নিচ্ছেন।

এদিকে দাম বাড়ার কারণে বিক্রি কমেছে জানিয়ে এক ব্যবসায়ী বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে যে হারে রডের দাম বাড়ছে, গ্রাহকরা তার ভার নিতে পারছেন না। যে কারণে অনেকে তাদের নির্মাণ কাজ বন্ধ রেখেছেন। আবার অস্থিতিশীল বাজারের কারণে লৌহ শিল্পের ছোট ছোট কারখানাগুলোও চাপ সামলাতে পারছে না। বড় কয়েকজন বাদে অন্যরা এলসি করতে পারছে না। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমার আশায় তারা এলসি করেনি। এখন তারা ক্ষতির শিকার হচ্ছে।

এখন প্রতি টন রড তৈরিতে এক লাখ টাকার মতো খরচ হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, এখন কারখানায় উৎপাদন বন্ধ করে দিলে ব্যাংকগুলোর লোন রেগুলার করা যাবে না। এতে ব্যাংকের সঙ্গে কারখানা মালিকদের সম্পর্কের অবনতি ঘটবে। সে কারণে এখন লস দিয়ে হলেও মাল বিক্রি করে যাচ্ছি।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *