উটের আস্তাবল : ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.), ইমাম মালেক (রহ.) এবং ওলামায়ে কেরামের একটি বিশাল অংশের মতে, উটের আস্তাবলে নামাজ পড়া নিষেধ। কেননা মহানবী (সা.) সেখানে নামাজ পড়তে স্পষ্টভাবে নিষেধ করেছেন। জাবির ইবনে সামুরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, এক লোক রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, আমি কি বকরির গোশত খেয়ে অজু করব? তিনি বলেন, তোমার ইচ্ছা, অজু করতে পারো আর না-ও করতে পারো। সে বলল, আমি কি উটের গোশত খেয়ে অজু করব? তিনি বলেন, হ্যাঁ, উটের গোশত খেয়ে তুমি অজু করবে।
সে বলল, আমি কি বকরির ঘরে নামাজ আদায় করতে পারি? তিনি বলেন, হ্যাঁ। সে বলল, আমি কি উটের ঘরে নামাজ আদায় করতে পারি? তিনি বলেন, না। (মুসলিম, হাদিস : ৬৮৮)
বার ইবনে আজিব (রা.) বলেন, রাসুল (সা.)-কে উটের আস্তাবলে নামাজ আদায় করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘তোমরা উটের আস্তাবলে নামাজ আদায় করবে না। কারণ তা শয়তানের আড্ডাখানা’। রাসুল (সা.)-কে বকরির খোঁয়াড়ে নামাজ আদায় করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘সেখানে নামাজ আদায় করতে পারো। কারণ তা বরকতময় প্রাণী (বা স্থান)। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৩)
গোসলখানা : স্বাভাবিক অবস্থায় সেখানে নামাজ পড়া উচিত নয়। সেটা নামাজের জন্য উপযুক্ত জায়গা নয়। কিন্তু একান্ত প্রয়োজনে গোসলখানায় নামাজ পড়া মাকরুহ হলেও জায়েজ। তবে শর্ত হলো, তা পরিপূর্ণ পবিত্র থাকতে হবে। কেননা মহানবী (সা.)-এর জন্য গোটা জমিনকে নামাজের স্থান বানানো হয়েছে, যদি সেখানে নাপাক না থাকে ও নামাজের প্রতিবন্ধক কিছু না থাকে। জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, আমার জন্য সমগ্র জমিনকে মসজিদ ও পবিত্রতা অর্জনের উপকরণ করে দেওয়া হয়েছে। আমার উম্মতের যে ব্যক্তি যেখানেই নামাজ পায়, সেখানেই নামাজ আদায় করবে। ’ (নাসায়ি, হাদিস : ৭৩৬)
কবরস্থান : কবরকে সামনে রেখে নামাজ পড়া অনেকটা কবরকে সিজদা করার সাদৃশ, যা শিরক। তাই কবরস্থানে নামাজ পড়ার অনুমতি নেই। তবে যদি নামাজের জায়গা দেয়াল ইত্যাদি দিয়ে আলাদা করা হয়, যে তাকে আর কেউ কবর করছে ভাবার সুযোগ না থাকে, তাহলে সেটা আর কবরস্থানে নামাজ পড়ার পর্যায়ে থাকে না। কবরকে সিজদা করা এতটা গুনাহের কাজ যে মহানবী (সা.) কবরে সিজদাকারীদের অভিশাপ দিয়েছেন।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, আল্লাহ তাআলা ইহুদিদের ধ্বংস করুন। কেননা তারা তাদের নবীদের করবকে মসজিদ বানিয়ে নিয়েছে। ’ (বুখারি, হাদিস : ৪৩৭)
জুনদুব (রা.) থেকে বলেন, আমি রাসুল (সা.) -এর মৃত্যুর পাঁচ দিন আগে তাঁকে বলতে শুনেছি যে তোমাদের মধ্যে থেকে আমার কোনো খলিল বা একান্ত বন্ধু থাকার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে মুক্ত। কারণ মহান আল্লাহ ইব্রাহিমকে যেমন খলিল বা একান্ত বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছেন, সে রকমভাবে আমাকেও খলিল বা একান্ত বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছেন। আমি আমার উম্মতের মধ্যে থেকে কাউকে খলিল বা একান্ত বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে চাইলে আবু বকরকেই তা করতাম। সাবধান থেকো তোমাদের পূর্বের যুগের লোকেরা তাদের নবী ও নেককার লোকদের কবরসমূহকে মসজিদ (সিজদার স্থান) হিসেবে গ্রহণ করত। সাবধান, তোমরা কবরসমূহকে সিজদার স্থান বানাবে না। আমি এরূপ করতে তোমাদের নিষেধ করে যাচ্ছি। ’ (মুসলিম, হাদিস : ১০৭৫)
কসাইখানা : কসাইখানা যেহেতু রক্ত, গোশত ইত্যাদি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে, তাই সেখানে নামাজ পড়া নিষেধ। কারণ রক্ত ইত্যাদি নাপাক। কিন্তু যদি সেখানকার কোনো জায়গাকে এমন ভাবে পরিচ্ছন্ন করা হয়, যে সেখানে নাপাকির কোনো চিহ্নই থাকে না, তাহলে সেখানে নামাজ পড়া যাবে। যেহেতু হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, আমার জন্য সমগ্র জমিনকে মসজিদ ও পবিত্রতা অর্জনের উপকরণ করে দেওয়া হয়েছে। আমার উম্মতের যে ব্যক্তি যেখানেই নামাজ পায়, সেখানেই নামাজ আদায় করবে। ’ (নাসায়ি, হাদিস : ৭৩৬)
রাস্তায় : একান্ত প্রয়োজন ছাড়া রাস্তায় নামাজ পড়া উচিত নয়। কেননা বিভিন্ন পশু-পাখির যাতায়াতের কারণে তাদের পেশাব-পায়খানায় রাস্তা নাপাক হয়ে থাকতে পারে। আবার রাস্তায় নামাজ পড়ার কারণে জনসাধারণের যাতায়াতে বিঘ্ন ঘটতে পারে, যেটা তার হক এবং পথচারীদের যাতায়াতের কারণে নামাজির মনোযোগ বিঘ্নিত হতে পারে। তবে জুমা, ঈদ ইত্যাদি নামাজের সময় মুসজিদের মুসল্লির সংকুলান না হলে রাস্তায় চাটাই, জায়নামাজ ইত্যাদি বিছিয়ে নামাজ পড়তে নিষেধ নেই।
জবরদখল করা জায়গায় : ইবনে উমার (রহ.) বলেন, নবী (সা.) মিনায় (খুতবার কালে) জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি জানো আজ কোন দিন? সবাই বলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই বেশি জানেন। তখন নবী (সা.) বলেন, আজ সম্মানিত দিন। তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা জানো, এটি কোন শহর? সবাই জবাব দিলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই আধিক জানেন। তখন তিনি বলেন, এটি সম্মানিত শহর। তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি জানো, এটা কোন মাস? তাঁরা বলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই আধিক জানেন। তখন তিনি বলেন, এটা সম্মানিত মাস। তারপর তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা তোমাদের (পরস্পরের) জান, মাল ও ইজ্জতকে হারাম করেছেন, যেমন হারাম তোমাদের এ দিন, তোমাদের এ মাস, তোমাদের এ শহর। (বুখারি, হাদিস : ৬০৪৩)
তা ছাড়া জবরদখল করা জায়গায় নামাজ পড়ার দ্বারা অন্যের সম্পদ তার অনুমতি ছাড়া জোর করে দখল করার নামান্তর, যা জায়েজ নেই।
যেখানে গাইরুল্লাহর পূজা করা হয় : হানাফি, মালেকি ও শাফেয়ি মাজহাবের ইমামদের মতে, গির্জা ও মন্দির প্রভৃতিতে নামাজ পড়া মাকরুহ। কেননা সেখানে আল্লাহ ছাড়া অন্যের পূজা করা হয়। আর কোনো স্থানে নামাজ পড়া সেই জায়গাকে সম্মান করার নামান্তর। তাই নামাজের জন্য এমন জায়গা ঠিক করা উচিত নয়, যেখানে আল্লাহর নাফরমানি হয়।
এ ছাড়া যেসব স্থানে ব্যাপকভাবে গুনাহের কাজ হয়, আল্লাহর নাফরমানি হয়, শয়তানি কাজ-কর্ম ও আড্ডাবাজি হয়, সেসব জায়গায় নামাজ পড়া উচিত নয়।