যমুনা নদীর পাশের রাজবাড়ি এখন গোয়াল ঘর!

ফিচার breaking subled

নিউজ ডেষ্ক- নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার সদর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার পশ্চিমে ছোট যমুনা নদীর পাশে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী কাশিমপুর রাজবাড়ি। উপজেলার একমাত্র ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে পরিচিত এ রাজবাড়িটি। দায়িত্বশীল মহলের অবহেলায় এখন রাজবাড়িটি বেহাল দশায়। এমনকি এটি এখন গোয়াল ঘরে পরিণত হয়েছে।

বর্তমানে রাজবাড়ির শেষ অংশটুকুও ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। আর কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে কিছু অংশ। সেই স্মৃতিটুকু এখনো দেখতে আসেন অনেকেই।

সচেতন মহল বলছেন, ঐতিহ্যবাহী এ স্থাপনাটির সংস্কার করা হলে রাজবাড়িটি ঘিরে গড়ে উঠতে পারে ভ্রমণপিপাসুদের জন্য দর্শনীয় স্থান।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কাশিমপুর রাজবাড়ির পাগলা রাজা ছিলেন নাটোরের রাজার বংশধর। শ্রী অন্নদা প্রসন্ন লাহিড়ী বাহাদুর ছিলেন এই রাজত্বের শেষ রাজা। তার চার ছেলে ও এক মেয়ে ছিলেন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর রাজবংশের সবাই এই রাজত্ব ছেড়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে চলে যান। শুধু ছোট রাজা শ্রী শক্তি প্রসন্ন লাহিড়ী বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগ পর্যন্ত এই কাশিমপুর রাজবাড়িতে বসবাস করতেন।

সময়ের বিবর্তনে তিনিও এক সময় রাজবাড়ির স্টেটের অঢেল সম্পদ রেখে ভারতে চলে যায়। ২ একর ১৯ শতক জমির ওপর অবস্থিত কাশিমপুর রাজবাড়ি। প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী এই রাজবাড়িটির নিদর্শনসমূহ দীর্ঘদিন ধরে রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে সব কারুকার্য ধ্বংস প্রায়।

রাজবাড়ির মূল ভবনের সামনের চারটি গম্বুজ, উত্তর পাশে হাওয়া খানা ও পশ্চিম পাশে একটি দুর্গামন্দির ছিল। প্রতিনিয়ত মন্দিরে পূজা ও সন্ধ্যায় জ্বালানো হতো প্রদীপ, শোনা যেত শঙ্খ ও উলুর ধ্বনি। তা বর্তমানে আর দেখা যায় না। মন্দিরের পাশে ছিল একটি রাজবাড়ির বৈঠকখানা, পুকুর ও নদীর ধারে একটি কাঁচের ঘরে তৈরি বালিকা বিদ্যালয়।

আরও জানা যায়, কশিমপুর রাজার শত শত বিঘা জমি ও পুকুর স্থানীয় প্রভাবশালীরা বিভিন্ন কায়দা কৌশলে দখলে রেখেছেন। রাজার সম্পত্তিগুলো স্থানীয় মানুষদের অত্যাচারে সবই এখন প্রায় বেদখল। রাজবাড়ির বেশির ভাগ জায়গা স্থানীয়রা অবৈধভাবে দখলে নিয়ে বিভিন্ন পন্থায় উপজেলা ভূমি অফিস ও জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে লিজ নিয়ে চাতাল তৈরি করে ব্যবসা করছেন।

দায়িত্বশীল মহল নজরে না নেওয়ায় কাশিমপুর রাজবাড়িটি দিন দিন স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে চলে যাচ্ছে। কোটি কোটি টাকার সম্পদ ও রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। ইতোমধ্যেই গড়ে তোলা হয়েছে চাতাল, মিল, কলকারখানা, বসতবাড়ি। এছাড়া উঁচু জমি কেটে সমতল করে ধান চাষ করা হচ্ছে।

কাশিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান মখলেছুর রহমান বাবু বলেন, স্বাধীনতার পর ও আগে কাশিমপুর রাজার বংশধররা কয়েক দফায় সবাই এই রাজত্ব ছেড়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে চলে যান। তারা চলে যাওয়ায় স্থানীয় কিছু ব্যক্তিরা ইচ্ছামতো রাজার এই বিশাল সম্পত্তি দখলে নেয়। এক সময় বিভিন্ন কায়দায় লিজ নেওয়ার কথা আমি শুনেছি। এমনকি বড় বড় দালানকোটা ঘেরা প্রাচীর ও রাজার প্রাসাদের ইট খুলে প্রকাশ্যে দিবালোকে রাতে আধারে স্থানীয়রা লুটপাট করে বিক্রয় করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।

তিনি বলেন, দায়িত্বশীল মহল এসবে নজরে না নেওয়ায় রাজার বাড়ি মৃত প্রায়। যতটুকু নির্মাণশৈলী কালের সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে তা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের মাধ্যমে দৃষ্টিনন্দন করলে সেখানে এখনো গড়ে উঠতে পারে ভ্রমণপিপাসুদের জন্য দর্শনীয় স্থান।

এ ব্যাপারে রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত হুসেইন বলেন, ঐতিহাসিক নিদর্শন রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। কাশিমপুর রাজবাড়ির বেহাল দশার বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে কর্তৃপক্ষ নির্দেশনা দিলে রাজবাড়িটি রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কার করা হবে। আর সরকারি নিয়ম অনুযায়ী জায়গা লিজ দেওয়া আছে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *