নিউজ ডেষ্ক- সাধারণ ভাবে একটি গাছ থেকে আরেকটি গাছের জন্ম হওয়ার পদ্ধতিকে গাছের বংশ বিস্তার বলে। অন্য কথায়, যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গাছ যৌন কোষ বা তার অংগজ কোষ থেকে নুতন স্বতন্ত্র গাছ সৃষ্টি করে তাকে বংশ বিস্তার বলে। জেনে নিন কখন ও কিভাবে করবেন আমের কলম শিরোনামে লিখেছেন কল্পনা রহমান ,উপজেলা কৃষি অফিসার, পটিয়া, চট্টগ্রাম।
বংশ বিস্তার দুই প্রকার যথা:
১। যৌন বংশ বিস্তার ও ২। অযৌন বংশ বিস্তার।
ফল গাছ রোপনের মূল উদ্দেশ্য হলো ভাল, উন্নতমান ও মাতৃগুন সম্পন্ন ফল পাওয়া। এ কারণে, ফল গাছ রোপনের ক্ষেত্রে যৌন পদ্ধতির তুলনায় অযৌন পদ্ধতির চারা/ কলম গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এ পদ্ধতিতে উৎপাদিত চারা/কলম রোপন করলে মাতৃ গুণাগুণ সম্পন্ন ফল পাওয়া যায়, গাছে তাড়াতাড়ি ফল ধরে এবং গাছ ছোট হয় বিধায় অল্প পরিসরে অনেক গাছ রোপন করা যায়। অযৌন বংশ বিস্তার পদ্ধতি গুলোর মধ্যে ক্লেফ্ট গ্রাফটিং বা ফাটল জোড় কলম একটি অন্যতম পদ্ধতি।এ পদ্ধতিতে একাধিক ফল গাছে কলম করা যায়। অন্যান্য জোড় কলম গুলোর তুলনায় ফাটল জোড় কলম একটি অন্যতম পদ্ধতি কারণ এ পদ্ধতিতে কর্তিত স্থানের দুই পাশ দিয়ে জোড়া লাগে বিধায় জোড়াটি সবল হয় এবং সহজে জোড়া স্থানটি ভাংগার সম্বাবনা থাকে না। তুলনামুলক ভাবে এ পদ্ধতি অন্যান্য জোড় কলম পদ্ধতি গুলোর তুলনায় সহজ, সফলতার হার বেশী এবং খরচও কম পড়ে।
উপকরণ
এ কলম করতে গ্রাফটিং চাকু, ব্লেড, সিকেচার, পলিথিন ক্যাপ, পলিথিন ফিতা, সুতলী, পরিবেশ সহনশীল একটি ষ্টক গাছের চারা, কাংখিত গাছের ডগা বা সায়ন এবং দক্ষ মালি ইত্যাদি।
কলম করার উপযুক্ত সময়
মে থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত কলম করার উপযুক্ত সময়। কারন এ সময় বাতাসে আদ্রতা ও গাছের কোষের কার্যকারিতা বেশী থাকে। ফলে তাড়াতাড়ি জোড়া লাগে এবং সফলতার হারও বেশী পাওয়া যায়।
স্টক তৈরী
অনাকাংখিত কিন্তু পরিবেশ উপযোগী গাছের বা স্থানীয় জাতের বীজ হতে চারা তৈরী করতে হবে যাতে কাংখিত জোড়া লাগানো সম্ভব হয়।
স্টক চারা তৈরীর ধাপ সমুহঃ
১) পরিনত গাছ হতে সুস্থ ও সবল বীজ সংগ্রহকরা।
২) স্টক চারাটি সরাসরি মাটি বা পলিব্যাগে তৈরী করা।
৩) যদি চারাটি মাটিতে তৈরী করা হয় তবে মাটি ভাল ভাবে কুপিয়ে ঝুরঝুরা করে আগাছা পরিস্কার করে প্রয়োজনীয় জৈব সার মিশিয়ে বেড আকারে করতে হবে। বেডটির প্রস্থ্য যেন ১ মিটার এর বেশী না হয় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এর পর বেডে ২৫ সেমিঃ পর পর লাইন করে প্রতি লাইনে ২০ সেমিঃ পর পর চারা/ বীজ রোপন করতে হবে এবং কলম করার পূর্ব পর্যন্ত স্টক চারা গুলোর সকল প্রকার পরিচর্যা নিশ্চিত করতে হবে।
৪) চারা পলিব্যাগে তৈরী করলে ২০ সেমিঃ x ১২ সেমিঃ পলিব্যাগ নিতে হবে। দোঁয়াশ মাটির সাথে অর্ধেক পচা গোবর ও কম্পোস্ট মিশিয়ে পলিব্যাগ ভরতে হবে।
৫) প্রতি ব্যাগে একটি করে বীজ বা চারা রোপন করতে হবে। চারা গজানোর পর পলিব্যাগ গুলো যেন কাত হয়ে না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে অন্যথায় চারার গোড়া বাঁকা হয়ে যাবে।
৬) এবার ব্যাগটি বেডে ২৫ x ২০ সেমিঃ দুরত্বে রোপন করতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে পলিব্যাগটি যেন মাটির সমান্তরালে থাকে। এতে খরা মৌসুমে পানি সেচ কম লাগে এবং চারাটি সুস্থ ও সবল হয়।
৭) সুস্থ, সবল এবং নিরোগ চারা পাওয়ার জন্য আগাছা, রোগ ও পোকা-মারড় দমন করতে হবে। প্রয়োজনে গাছে সার ও সেচ দিতে হবে।
স্টক চারার বয়স ও সায়ন নির্বাচন
১) আমঃ
ক) স্টক চারাটির বয়স ৯-১২ মাস হবে।
খ) উৎকৃষ্ট ও কাংখিত মাতৃগাছ থেকে সুস্থ ও সবল সায়ন নিতে হবে।
গ) সায়নটি লম্বায় ১৫-১৮ সেমিঃ হবে।
ঘ) সায়নটির ডগায় একটি সুপ্ত কুড়ি থাকতে হবে।
ঙ) সায়নটির রং গাঢ় সবুজ থেকে কালচে সবুজ হবে এবং
চ) সায়নটি সংগ্রহের পর পরই সমস্ত পাতা অপসারন করে ভিজা ন্যাকড়া ও পলিথিন দিয়ে পেচিয়ে রাখলে সায়নটির সতেজতা অক্ষুন্ন থাকে।
ছ) আমের সায়ন মাতৃগাছে সংযুক্ত থাকা অবস্থায় পাতা কেটে ফেলাকে ডিফলিয়েশন বলে। ১০ দিন পূর্বের ডিফলিয়েশন করা সায়ন দিয়ে কলম করলে তাড়াতাড়ি জোড়া লাগে এবং সফলতার হারও বেশী হয়।
আম গাছের কলম পদ্ধতি/কলম করার নিয়ম
• স্টক চারাটির গোড়া থেকে ১৫-২০ cm উপরে কলম করা হয়।
• স্টক চারাটির উপরে কাটার পর ২-৩ সেমি লম্বা ভাবে উপর থেকে নিচের দিকে চিরে ফেলতে হবে।
• এবং ঠিক এমনই ভাবেই সায়ন টি ২-৩ সেমি তেরছা ভাবে কাটতে হবে যেন সাবল , তিলকের মতো হয়।
• সায়নটি তেরছা ভাবে কাটার সময় সাবধানে কাটতে হবে যেন দু’দিকের ছাল সায়নটিতে লেগে থাকে।
• এবার সায়ন টি স্টক চারাটি চিরা অংশর মধ্যে ভালো ভাবে প্রবেশ করাতে হবে , যেন সায়ন এর ছাল ও স্টক এর ছাল একে উপরের উপর ঠিক ভাবে বসে যায়।
• স্টক চারাটি চিরা অংশর থেকে সায়ন টি বেরিয়ে না থাকে তা খেয়াল রাখতে হবে।
• এবার জয়েন্ট টি উপরে একটি হাত দিয়ে ধরে নিচের দিক থেকে পলিথিন টেপ দিয়ে শক্ত করে বেজিয়ে বাঁধতে হবে।যাতে জয়েন্টর মধ্যে জল ও বাতাস প্রবেশ না করে।
• উপরের দিক থেকে পলিথিন ব্যাগ দিয়ে ভালো ভাবে সায়ন সমেত স্টক চারাটির গায়ে বেঁধে দিতে হবে।
• আম গাছে করা এই জোড় কলম পদ্ধতির , জয়েন্ট টি দু’দিক দিয়ে ভালো ভাবে জোড়া লেগে যায় এবং জয়েন্ট টি মজবুত হয়। সহজে জয়েন্ট টি ভেঁঙ্গে যায় না।